মোসাদ এজেন্ট ইলাই কোহেন
ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ পুরো বিশ্বেই পরিচিত ভয়ংকর মিশনের জন্য। ফিলিস্তিন, সিরিয়া এবং লেবাননের মতো দেশগুলোতে ছদ্মবেশে গোপন মিশন পরিচালনা করে আসছে এই সংস্থা। ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে মোসাদ তাদের গুপ্তচরবৃত্তি এবং গুপ্তহত্যার জন্য বিশ্বজুড়ে আলোচিত। বহু দেশের সরকার এই সংস্থার কারণে টালমাটাল অবস্থার মুখোমুখি হয়েছে। এরকমই একজন কিংবদন্তি এজেন্ট ছিলেন ইসরায়েলের ইলাই কোহেন।
১৯৬৫ সালে সিরিয়ায় গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে জনসমক্ষে ফাঁসি দেওয়া হয় কোহেনকে। তবে তার দেহাবশেষ কোথায় তা নিয়ে এখনো রহস্য রয়ে গেছে। সিরিয়ার তৎকালীন সরকার কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি। ইসরায়েল তার দেহাবশেষ ফেরত চেয়ে বারবার আহ্বান জানালেও, সিরীয় প্রশাসন এই বিষয়ে নীরব। তবে সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে জানা গেছে, সিরিয়ার আসাদ সরকারের পতনের পর ইসরায়েল নতুন করে তার দেহাবশেষ উদ্ধারে উদ্যোগী হয়েছে।
ইলাই কোহেন ১৯২৪ সালে মিশরের আলেকজান্দ্রিয়ায় এক ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ইলাই কোহেন। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার পর তার পরিবার নতুন ভূখণ্ডে পাড়ি জমালেও তিনি মিশরে থেকে যান। ইলাই ছিলেন কট্টর ইহুদি মতাদর্শে বিশ্বাসী। ১৯৫৭ সালে মোসাদের সহায়তায় তিনি মিশরীয় ইহুদিদের ইসরায়েলে স্থানান্তরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
হিব্রু, আরবি এবং স্প্যানিশ ভাষায় পারদর্শী ইলাই ১৯৬০ সালে মোসাদের তালিকাভুক্ত হন। তিনি ছদ্মনামে পরিচিত হন কামেল আমিন থাবেত হিসেবে। সিরিয়ায় ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি গড়ে তোলার জন্য তাকে প্রথমে আর্জেন্টিনার বুয়েনোস আইরেসে পাঠানো হয়। সেখান থেকে আরব ও সিরীয় প্রবাসীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে ১৯৬২ সালে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে পাঠানো হয়।
দামেস্কে ধীরে ধীরে সমাজের উচ্চবিত্তদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেন তিনি। রাজনীতিবিদ, সেনা কর্মকর্তা এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের থেকে গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় তথ্য সংগ্রহ করে মোসাদের কাছে পাচার করতেন। এসব তথ্যের ভিত্তিতে ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে ইসরায়েল বড় ধরনের সাফল্য পায়।
১৯৬৫ সালে মোসাদের সঙ্গে রেডিও যোগাযোগের সময় ইলাই কোহেনকে শনাক্ত করে সিরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা। সোভিয়েত ইউনিয়নের সহায়তায় তার অবস্থান চিহ্নিত করে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আদালতের রায়ে জনসম্মুখে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। তবে তার দেহাবশেষ কোথায় রাখা হয়েছে, তা কখনো প্রকাশ করেনি সিরিয়া।
২০১৮ সালে তার ব্যবহৃত একটি হাতঘড়ি উদ্ধার করা হলেও দেহাবশেষের কোনো সন্ধান মেলেনি। তবে সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, মোসাদের বর্তমান পরিচালক ডেভিড বার্নিয়া সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে দেহাবশেষ ফেরত আনার বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
রাশিয়ার মধ্যস্থতায় ইসরায়েল এই মিশনে সফল হবে কি না, তা এখনো অনিশ্চিত। তবে ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টা নতুন করে আলোচনায় এসেছে।
রিফাত