ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১

চাকরি ছেড়ে ইসরায়েলি সেনাদের বিভৎসতার লোমহর্ষক বিবরণ

প্রকাশিত: ২০:৫৩, ৯ জানুয়ারি ২০২৫

চাকরি ছেড়ে ইসরায়েলি সেনাদের বিভৎসতার লোমহর্ষক বিবরণ

ছবি:- সংগৃহীত

প্রতিটি যুদ্ধই যেন এক একটি বীভৎস গল্প, কিছু গল্প বীরত্বের,কিছু গল্প নির্মমতার। তবে গাজার এই গল্পটা কেবল মৃত্যু আর নির্মম নৃশংসতার। বিবিসির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে গাঁজার মাটি থেকে ফেরা ইসরায়েলি সেনাদের বর্ণনায় ফিলিস্তিনের ভয়াবহ চিত্র। যে গল্প হার মানিয়েছে পৃথিবীর সকল বর্বরতাকেও।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন ২৬ বছরের ইসরাইল যুবক ইউভাল গ্রিন। নিজের দেশকে রক্ষার তাগিদে এবং হামাসের হাতে জিম্মি ইসরাইলিদের মুক্ত করার লক্ষ্যে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন যুদ্ধে। কিন্তু যুদ্ধের ময়দানে পা রাখার পরেই পাল্টে যায় তাঁর চিন্তাধারা ,জেগে ওঠে মানবতাবোধ।

ইউভাল জানান, একদিন গাজার রাস্তায় দেখতে পান ফিলিস্তিনিদের মরদেহ পড়ে আছে। আর বিড়ালগুলো কামড়ে খাচ্ছে সেই দেহ। তাঁর ভাষায় ডানে বা বামে যেখানেই তাকাবেন শুধুই ধ্বংসস্তূপ আর আগুনের লেলিহান শিখা এটাই গাঁজার বাস্তবতা।যুদ্ধের কয়েক দিন পরেই তিনি ইসরায়েলি নেতাদের মুখে শুনতে পান গণহত্যার আহ্বান,পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে ডেপুটি স্পিকার নিসিম ভাদুড়ি বলেন, গাঁজাকে পৃথিবী থেকে মুছে ফেলার কথা। এমনকী প্রখ্যাত ইহুদি ধর্মগুরু এলিয়াহু মালিও  একই সুরে বলেন, তুমি যদি তাদের হত্যা করো তারা তোমাকে হত্যা করবে।

ইউভাল বলেন, গাজার পুরো জনগোষ্ঠীকে হত্যার কথা বলা হচ্ছিল যেন এটি খুব স্বাভাবিক একটি ধারণা এর ফলস্বরূপ অনেক সেনা প্রতিশোধের তাগিদে সেখানে প্রবেশ করে ঘটিয়েছে নির্মম সব ঘটনা । যার ফলে অনেক সেনাই তাদের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করা আরেক সেনা জানান যে, গাজায় নিরীহ মানুষের ওপর নির্যাতন আর হত্যার ঘটনায় সেনারা গর্ব করতেন, তাঁরা এতটাই স্বাভাবিক ভাবেই এ বর্ণনা দিত,যেন এটি কোনও সাধারণ ঘটনা, বন্দিদের এমন ভাবে চোখ বেঁধে রাখা হত যাতে তারা নড়াচড়া করতে না পারে। তাদের দেওয়া খাবারের অবস্থা ছিল আরও অমানবিক।

এই দলের আরেকজন ২৯ বছরের মাইকেল অফার-জিব যিনি ড্রোন ক্যামেরায় যুদ্ধ পর্যবেক্ষণ করতেন। একদিন সরাসরি গাজার মাটিতে গিয়ে চরম ধাক্কা খান। তিনি বলেন, গাড়ির জানালা খুলতেই এমন গন্ধ পেয়েছেন যেন দাঁড়িয়ে আছেন মাংসের বাজারে। এমনকি মাটিতে নেমে নিজের চোখে দেখেন রাস্তায় পড়ে থাকা মাংসের টুকরো, সব চেয়ে হৃদয়বিদারক মুহূর্তটি আসে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে মাইকেল জানান, আত্মসমর্পণের চেষ্টা করা তিন ইসরায়েলি জিম্মিকে ও তাঁর সহকর্মী সেনারা গুলি করে হত্যা করে। এই ঘটনার পর মাইকেল ভাবতে বাধ্য হন নৈতিকতার কোন স্তরে এসে পৌঁছেছে তাঁরা।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ইসরায়েলি বাহিনীর মধ্যে নৃশংসতার পিছনে রয়েছে বাহিনীর ক্রমবর্ধমান ধর্মীয়করণ, সামরিক বাহিনীতে ডানপন্থী ইহুদি জাতীয়তাবাদীদের সংখ্যা দ্রুতই বাড়ছে। আর এভাবেই ইহুদি শ্রেষ্ঠত্বের বার্তা ছড়িয়ে দিয়ে সেনাদের গড়ে তোলা হচ্ছে নীতিহীন ও নৃশংস। যুদ্ধ কখনোই মানবতার জন্য আশীর্বাদ নয়, গাজার ঘটনা তারই আর একটি নির্মম প্রমাণ, যে সেনারা একদিন দেশ রক্ষার স্বপ্ন দেখেছিল তারাই আজ অনুতাপ আর বিভ্রান্তির ভারে জর্জরিত। কারণ গাঁজার এই যুদ্ধ শুধু একটি ভূখণ্ড নিয়ে নয়, বরং মানবতা, নৈতিকতা আর রাজনীতির এক গভীর সঙ্কট। প্রতিটি ধ্বংসস্তূপ যেন প্রশ্ন তুলছে এই সহিংসতা কি কখনও শেষ হবে?

রাসেল

×