ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্র ভারতের প্রধান পারমাণবিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অসামরিক পারমাণবিক সহযোগিতার দীর্ঘদিনের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সম্পন্ন করছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান।
২০০৮ সালে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একটি অসামরিক পারমাণবিক সহযোগিতা চুক্তি (১২৩ চুক্তি) স্বাক্ষর করেছিল। এটি সম্ভব হয়েছিল ভারতের আন্তর্জাতিক পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (NPT) স্বাক্ষর না করেও আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (IAEA) সঙ্গে সুরক্ষা চুক্তি করার পর। ২০১৬ সালে অন্ধ্রপ্রদেশের কোভাডায় ছয়টি এপি১০০০ প্রেসারাইজড ওয়াটার রিঅ্যাক্টর নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তবে চুক্তিসমূহ এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
সুলিভান দিল্লির ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে দেওয়া এক ভাষণে বলেন, “প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বুশ ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং দুই দশক আগে যে অসামরিক পারমাণবিক সহযোগিতার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, তা আমরা এখনও সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করতে পারিনি। তবে, পরিচ্ছন্ন জ্বালানি প্রযুক্তি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়নে কাজ করার পাশাপাশি মার্কিন এবং ভারতীয় জ্বালানি কোম্পানিগুলোর উদ্ভাবনী সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বাইডেন প্রশাসন এই অংশীদারিত্বকে আরও সুসংহত করার লক্ষ্যে নতুন পদক্ষেপ নিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
তিনি আরও জানান, ভারতের পারমাণবিক প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের আত্মবিশ্বাসের প্রতিফলন। “এটি আমাদের কৌশলগত অংশীদারিত্ব এবং শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক সহযোগিতার প্রতি আমাদের অঙ্গীকারের স্বীকৃতি,” বলেন সুলিভান।
পারমাণবিক নিষেধাজ্ঞার ইতিহাস
১৯৯৮ সালে ভারতের পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার পর যুক্তরাষ্ট্র ২০০টিরও বেশি ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। তবে, সময়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতি ঘটায় অনেক প্রতিষ্ঠানই নিষেধাজ্ঞার তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। বর্তমানে ভারতের পরমাণু শক্তি বিভাগের অন্তত চারটি সংস্থা এবং কিছু পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র এই তালিকায় রয়েছে বলে জানা গেছে।
ভারতের পারমাণবিক দায়বদ্ধতা আইন বিদেশি পারমাণবিক শক্তি প্রকল্প সরবরাহকারীদের জন্য একটি বড় বাধা হিসেবে কাজ করেছে। ২০১০ সালে ভারত এই আইন পাস করে, যেখানে পরমাণু প্রকল্পে দুর্ঘটনার জন্য দায় অপারেটরের ওপর নির্ধারিত হলেও সরবরাহকারীর বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণের কোনো সীমা নির্ধারণ করা হয়নি।
এনএসজি-তে ভারতের প্রবেশ
পারমাণবিক সরবরাহকারী দেশগুলোর গ্রুপ (NSG) একটি সংগঠন, যা পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, প্রযুক্তি এবং সরঞ্জাম রপ্তানির ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে। ভারতের মতো NPT-তে স্বাক্ষর না করা দেশগুলো NSG-তে অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে ২০১৬ সালে ভারত NSG-তে যোগদানের আবেদন করে এবং যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে ভারতের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ ভারতের পারমাণবিক শক্তি খাতে আরও উন্নয়ন ঘটাতে ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মারিয়া