গাজা যুদ্ধ
হযরত ঈসা (আ.)-এর জন্মদিন উপলক্ষে একটি বাণীতে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, ‘‘যদি হযরত ঈসা (আ.) আমাদের মাঝে আজ থাকতেন, তিনি বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদী ও জালিম শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এক মুহূর্তও দেরি করতেন না।’’ তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘‘এছাড়া, আধিপত্যকামী শক্তিগুলোর যুদ্ধ ব্যয়ের কারণে যারা শরণার্থী ও ক্ষুধার্ত হয়ে জীবনযাপন করছে, তা তিনি সহ্য করতেন না।’’
চিন্তাবিদরা মনে করছেন, খ্রিস্টান ধর্ম বর্তমানে হযরত ঈসা (আ.)-এর আদর্শ ও দর্শন থেকে অনেক দূরে সরে গেছে। এ বিষয়ে ইরানি সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, তেহরান থেকে প্রকাশিত দৈনিক রেসালাত ‘ফিলিস্তিনের সন্তান মাসিহ’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছে, যেখানে মাসিহিয়্যাত বা প্রকৃত খ্রিস্টধর্ম এবং বর্তমান বিশ্বের চলমান ঘটনাবলি, বিশেষত ফিলিস্তিন নিয়ে ভ্যাটিকানের ভূমিকা সমালোচিত হয়েছে।
নিবন্ধে বলা হয়, ‘‘কোন হিসাব-নিকাশের ভিত্তিতে ভ্যাটিকান সিটি খ্রিস্টধর্মের রাজধানী হয়ে উঠেছে, তা বোধগম্য নয়।’’ ভ্যাটিকান সিটি বর্তমানে খ্রিস্টধর্মের মূল কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত হলেও, বেথেলহেম, যেখানে হযরত ঈসা (আ.) জন্মগ্রহণ করেছিলেন, সেখানে ‘‘চার্চ অফ দ্য নেটিভিটি’’ অবরোধের শিকার হয়ে একাকী দাঁড়িয়ে আছে। এটি হযরত ঈসা (আ.) বা যীশু খ্রিস্টের জন্মস্থান হিসেবে খ্রিস্টানদের বিশ্বাস।
দৈনিক রেসালাত জানায়, ‘‘ভ্যাটিকান গাজা যুদ্ধের মতো আন্তর্জাতিক সংকটে নিজের ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে।’’ রিপোর্টে দাবি করা হয়, ভ্যাটিকান খ্রিস্টধর্মের অনুসারীদের সংগঠিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারত, বিশেষত ইসরাইলের অপরাধযজ্ঞের বিরুদ্ধে, কিন্তু তা করতে ব্যর্থ হয়েছে।
বিষয়টি তুলে ধরে নিবন্ধে বলা হয়েছে, ‘‘গাজা যুদ্ধে জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মত, ভ্যাটিকানও নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে পারেনি।’’ একই সঙ্গে, এটি জানানো হয়েছে যে, ক্যাথলিক খ্রিস্টান ধর্ম তার শান্তিকামী চরিত্র হারিয়ে ফেলেছে এবং আধুনিক যুগে শান্তি প্রতিষ্ঠার সবচেয়ে বড় দাবিদার হিসেবে নিজেদের পরিচয় বজায় রাখার ক্ষেত্রে ভ্যাটিকান ব্যর্থ হয়েছে।
রিপোর্টে আরও বলা হয়, ‘‘গির্জা তাদের সুযোগটি হারিয়েছে। গাজায় চলমান গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে খ্রিস্টানদের শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ আশ্রয়ের কথা স্মরণ করানো উচিত ছিল।’’ তবে গির্জা, বিশেষ করে ভ্যাটিকান, ‘‘নিজের দুর্বল অবস্থান প্রমাণ করেছে’’ এবং পোপ ও ক্যাথলিক খ্রিস্টধর্মের বিচ্ছিন্নতার কারণে ‘‘খ্রিস্টানরা হযরত ঈসা (আ.)-এর বিশ্বাস থেকে ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছে।’’
এছাড়া, গাজা যুদ্ধে সরকার, ধর্ম ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান নির্বিশেষে পশ্চিমা সভ্যতার প্রকৃত স্বরূপ উন্মোচিত হয়ে গেছে। ‘‘পশ্চিমা মডেলে রূপান্তরিত খ্রিস্টান ধর্মও এখন তার চরিত্র প্রকাশ করেছে,’’ বলে নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।
এতে আরও বলা হয়েছে, ‘‘ফিলিস্তিনে যা চলছে তা শুধুমাত্র দখলদারিত্ব নয়, বরং ধ্বংসের প্রক্রিয়া।’’ ফিলিস্তিনে অবৈধ ইহুদি বসতি নির্মাণ এবং গাজার কঠিন পরিস্থিতি তুলে ধরে বলা হয়, ‘‘এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী ধ্বংস প্রক্রিয়া, যা ইসরাইল ও পশ্চিমা শক্তিগুলোর অংশীদারিত্বে চলছে।’’
সূত্র: পার্সটুডে
আর কে