দীর্ঘ ১৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা গৃহযুদ্ধের থাবায় বর্তমানে প্রায় বিধ্বস্ত সিরিয়ার অর্থনীতি। ধ্বংস হয়ে গেছে দেশটির প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডারও শূন্যপ্রায়। সিরিয়ার জন্য আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়াতে পারে তুরস্ক। কারণ বিশ্বের অন্যতম উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে পরিচিত তুরস্কের রয়েছে বিনিয়োগ করার মতো যথেষ্ট আর্থিক সামর্থ্য। এর পাশাপাশি প্রযুক্তি ও অন্যান্য সহযোগিতা দেওয়ার ক্ষেত্রেও যথেষ্ট সামর্থ্য রয়েছে আঙ্কারার সরকারি-বেসরকারি কোম্পানিগুলোর। এরই মধ্যে সিরিয়ার অভ্যন্তরে ১১টি সেফজোন প্রতিষ্ঠা করেছে তুরস্ক। পাশাপাশি ইদলিবসহ আরও অন্যান্য অঞ্চলেও সেফজোন প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করছে আঙ্কারা। এসব সেফজোন শিল্প ও বিনিয়োগের জন্য আদর্শ স্থানে পরিণত হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। খবর রয়টার্সের।
এদিকে সিরিয়াকে আরেক সৌদি আরবে পরিণত করার পরিকল্পনা করছেন দেশটির বিদ্রোহী সংগঠন হায়াত তাহরির আল শামের (এইচটিএস) প্রধান আহমেদ আল শারা ওরফে আবু মোহাম্মদ জুলানি। একইসঙ্গে আসাদের পতনের পর ইরান বেকায়দায় থাকায় মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফিরে আসবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। বিদ্রোহীদের অভিযানে বিদ্যুৎগতিতে সিরিয়ার স্বৈরশাসক বাশার আল আসাদের পতন হলেও দেশটির অর্থনীতির পুনর্গঠন ততটা সহজ হবে বলে মনে হচ্ছে না। দীর্ঘ এ যুদ্ধে মারা গেছে ৫ লাখ সিরীয় নাগরিক। উদ্বাস্তু হয়েছেন আরও কোটিখানেক সিরীয়। দেশের ভেতরে যারা বেঁচে আছেন তাদের ৯০ শতাংশই বর্তমানে অবস্থান করছেন দারিদ্র্যসীমার নিচে। তবে অর্থনীতির এ বেহাল দশার মধ্যে সিরীয়দের নতুন করে আশার আলো দেখাচ্ছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র তুরস্ক। ধারণা করা হচ্ছে, যেভাবে গৃহযুদ্ধের বছরগুলোতে সাধারণ সিরীয়দের পাশে ছিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান, তেমনি ভবিষ্যতে দেশটির অর্থনৈতিক পুনর্গঠনেও পাশে এসে দাঁড়াবেন তিনি। এ ছাড়া তুরস্কের সঙ্গে সিরিয়ার বিশাল সীমান্ত এবং যুদ্ধের সময় তুরস্কে ৪০ লাখ সিরীয় নাগরিকের আশ্রয় নেওয়ার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কে। যুদ্ধের মাঝেও সিরিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক লেনদেন অব্যাহত ছিল তুরস্কের। বিশেষ করে সিরিয়ার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলোর অর্থনৈতিক কার্যক্রমের প্রায় পুরোটাই ছিল তুরস্কনির্ভর। গত বছর তুরস্ক সিরিয়া থেকে আমদানি করে ৩৬ কোটি ডলারের পণ্য, বিপরীতে রপ্তানি করে ২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। দুই দেশের বাণিজ্য বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে আনাদোলু জানায়, সিরিয়ার কৃষি, নির্মাণ ও জ্বালানি ক্ষেত্রে বিনিয়োগ ও ব্যবসা সম্প্রসারণের বিস্তৃত সুযোগ রয়েছে তুরস্কের কোম্পানিগুলোর সামনে। বিশ্বের তিনটি মহাদেশ ইউরোপ, এশিয়া এবং আফ্রিকার সবচেয়ে নিকটবর্তী রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করা হয় সিরিয়াকে। এ ছাড়া দেশটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট পয়েন্ট। বিশ্বে এর অবস্থান গুরত্বপূর্ণ বিধায় সভ্যতার ইতিহাসের শুরু থেকেই বিশ্বের শক্তিমান সাম্রাজ্যগুলো নিজেদের হাতে রাখতে চেয়েছে দেশটির নিয়ন্ত্রণ। সিরিয়ার আকর্ষণীয় এ ভৌগোলিক অবস্থানকেই এ মুহূর্তে দেশটির অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চাবিকাঠি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সিরিয়ায় তুরস্কের ১১ সেফজোন
শীর্ষ সংবাদ: