ছবিঃ সংগৃহীত।
দক্ষিণ ভারতের দুই রাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাড়ুর নেতারা সম্প্রতি আরও বেশি সন্তান জন্মদানের বিষয়ে উৎসাহিত করার ফলে সম্প্রতি আবারও ভারতের জনসংখ্যার হ্রাস বৃদ্ধির বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ওঠে এসেছে।
গত বছর জাতিসংঘের জরিপ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, চীনকে পেছনে ফেলে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশের তকমা পেয়েছে ভারত৷ এখন প্রশ্ন ওঠতে পারে তাহলে নতুন করে কেন সন্তান জন্মদানের প্রতি উৎসাহিত করেছেন নেতারা?
প্রসঙ্গত, ভারতের প্রজনন হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। ভারতে ১৯৫০ সালে নারীপ্রতি সন্তান জন্মহার ছিল ৫.৭, যা এখন দুইয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইউনাইটেড নেশনস পপুলেশন ফান্ডের (ইউএনএফপিএ) 'ইন্ডিয়া এজিং রিপোর্ট' অনুসারে, ৪০ শতাংশেরও বেশি প্রবীণ ভারতীয় (৬০ বছরের ঊর্ধ্বে) দরিদ্রতম 'ওয়েলথ কুইন্টাইল' অর্থাৎ সম্পদ বিতরণের ভিত্তিতে একেবারে নিচে থাকা ২০ শতাংশ জনসংখ্যার অন্তর্গত।
ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর পপুলেশন সায়েন্সেসের জনসংখ্যাতত্ত্বের অধ্যাপক শ্রীনিবাস গোলির মতে যার অর্থ হলো, "ভারত ধনী হওয়ার আগে বুড়ো হয়ে যাচ্ছে।"
এদিকে, ২৯টা রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে ১৭টিতেই প্রজনন হার কিন্তু এরও (নারীপ্রতি দুই সন্তান) নিচে নেমে গিয়েছে। নারীপ্রতি দুই সন্তানের এই হারটিকে বলা হচ্ছে প্রতিস্থাপন স্তর, যার মানে হলো এমন একটা অবস্থা যেখানে জন্মের হার জনসংখ্যার স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য যথেষ্ট হয়।
দক্ষিণ ভারতের পাঁচটা রাজ্য (অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক, কেরালা, তামিলনাড়ু ও তেলেঙ্গানা) ভারতের জনসংখ্যাতাত্ত্বিক রূপান্তরের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
বর্তমানে দক্ষিণের পাঁচটি রাজ্যে প্রজনন হার ১.৬-এর নিচে। কর্ণাটকে এই হার ১.৬ এবং তামিলনাড়ুতে ১.৪। অন্যভাবে বলতে গেলে, এই রাজ্যগুলোতে প্রজনন হার অনেক ইউরোপীয় দেশের মতোই বা তার চেয়ে কম।
দক্ষিণ ভারতের এই রাজ্যগুলো আরও একটা বড় উদ্বেগের সঙ্গে লড়াই করছে, আর সেটা হলো আসন্ন ২০২৬ সালের ভোটে নির্বাচনি আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ যা ভারতে ১৯৭৬ সালের পর প্রথমবার ঘটতে চলেছে।
জনসংখ্যার পরিবর্তনের কারণে নির্বাচনি সীমানা আবার নতুনভাবে নির্ধারণ করা হবে। অনুমান করা হচ্ছে, জনসংখ্যার ভিত্তিতে হিসাবের কারণে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ দক্ষিণের এই রাজ্যগুলোর সংসদীয় আসন কমে যেতে পারে।
জনসংখ্যাবিদ কে এস জেমস এবং শুভ্রা কৃতি ব্যাখ্যা করেছেন, উত্তরপ্রদেশ ও বিহারের মতো জনবহুল উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো সীমানা পুনর্নির্ধারণের ফলে আরও বেশি আসন পেতে পারে।
জনসংখ্যাবিদদের মতে, মূল চ্যালেঞ্জ হলো ভারতে দ্রুত প্রজনন হার হ্রাসের ফলে সমাজে বার্ধক্যের হার বেড়ে যাওয়া।
যেখানে ফ্রান্স ও সুইডেনের মতো দেশগুলোর প্রবীণ জনসংখ্যা ৭ শতাংশ থেকে ১৪ শতাংশে যেতে যথাক্রমে ১২০ ও ৮০ বছর সময় লেগেছে, সেখানে ভারত মাত্র ২৮ বছরের মধ্যে এই মাইলফলকে পৌঁছাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
তবে ভারতে আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি মধ্যম মানের হওয়ার পরও প্রজনন হার দ্রুত হ্রাস পেয়েছে। এর কারণ হলো আগ্রাসী পরিবার কল্যাণ কর্মসূচি।
এই কর্মসূচির আওতায় সন্তান সংখ্যা বেঁধে দেওয়া, ইনসেন্টিভ বা প্রণোদনা দেওয়া এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে বেশি সন্তনের বিষয়ে দম্পতিদের নিরুৎসাহ করার মতো পদক্ষেপ দেশে ছোট পরিবার তৈরির ক্ষেত্র তৈরি করেছিল।
জনসংখ্যাবিদরা জানিয়েছেন, ভারতে অবসর গ্রহণের বয়সের ঊর্ধ্বসীমা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি, সংশ্লিষ্ট নীতিগুলোকে অবশ্যই সক্রিয় করতে হবে। অন্যদিকে, উৎপাদনশীল প্রবীণ জনসংখ্যার কথা মাথায় রেখে আরও ভালো স্বাস্থ্য পরিষেবা ও মজবুত সামাজিক সুরক্ষাকেও অগ্রাধিকার দিতে হবে।
শ্রীনিবাস গোলির মতে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে, কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করতে এবং প্রবীণদের জন্য সম্পদ বরাদ্দে ২০৪৭ সাল পর্যন্ত একটা সুযোগ রয়েছে।
তার কথায়, "আমরা মাত্র ১৫-২০ শতাংশ লভ্যাংশ পাচ্ছি, আমরা আরও ভালো করতে পারি।"
ভারতকে অবশ্যই তার জনসংখ্যাগত লভ্যাংশকে আরও ভালভাবে কাজে লাগাতে হবে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি তখনই ঘটে যখন কোনও দেশে কর্মক্ষম বয়সের জনসংখ্যা বেশি থাকে।
ইসরাত