ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট এবার ত্রিশঙ্কু দশায়,আসাদের পতনে সংঘাতের আশঙ্কা তুরস্ক- ইসরায়েলের

প্রকাশিত: ২৩:৫৪, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪; আপডেট: ২৩:৫৬, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

যুক্তরাষ্ট এবার ত্রিশঙ্কু দশায়,আসাদের পতনে সংঘাতের আশঙ্কা তুরস্ক- ইসরায়েলের

ছবিঃ সংগৃহীত।

মধ্যপ্রাচ্যে তুরস্ক ও ইসরায়েলের প্রভাব বিস্তারের নতুন পথ খুলেছে সিরিয়ার স্বৈরশাসক বাসার আল-আসাদের পতনে। এই দুই দেশ মার্কিন মিত্র হলেও বর্তমানে তাঁদের মাঝে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে।

বিশেষত গাজা যুদ্ধের পর থেকে। অন্যদিকে, সিরিয়ায় ইরানের প্রভাব কমে যাওয়ার পর তুরস্ক ও ইসরায়েল সিরিয়ায় নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে। যা ভবিষ্যতে তাঁদের মধ্যে সংঘাতের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি তুরস্কের জন্য বড় সুযোগ নিয়ে এসেছে। এখন সিরিয়ায় সবচেয়ে প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে তুরস্ক। দেশটি অটোমান সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত অঞ্চলে পুনরায় প্রভাব বিস্তারের সংকল্প করছে। সিরিয়া, লিবিয়া ও সোমালিয়াসহ নানা অঞ্চলে তুরস্কের উপস্থিতি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান সিরিয়া পুনর্গঠনে নেতৃত্ব দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তিনি সিরিয়ায় তাঁর প্রভাব প্রতিষ্ঠা করতে চান। বিশেষত, ইসরায়েলের শত্রু সুন্নি মুসলিম গোষ্ঠীগুলোর মাধ্যমে। এ ক্ষেত্রে তুরস্ক হামাসকে আরও জোরালো সমর্থন দিতে পারে।

অন্যদিকে, সিরিয়ায় তুরস্কের উত্তরোত্তর প্রভাব বৃদ্ধিতে উদ্বিগ্ন ইসরায়েলের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা। তাঁরা ধারণা করছেন, সিরিয়ায় তুরস্কের আনুকূল্যে থাকা হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) ও অন্যান্য ইসলামিক গোষ্ঠী ভবিষ্যতে ইসরায়েলের জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে।

সিরিয়ায় তুর্কি নেতৃত্বাধীন ইসলামিক গোষ্ঠীগুলোর উত্থানে সীমান্ত অনিরাপদ মনে করছে ইসরায়েল। বিশেষত, সিরিয়ার গোলান উপত্যকার কাছে গোষ্ঠীটির অবস্থান ইসরায়েলের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। যদিও তুরস্ক ও ইসরায়েল এখনো সরাসরি সংঘর্ষে জড়ায়নি, তবে এ ধরনের পরিস্থিতি ভবিষ্যতে সংঘাতের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

তুরস্ক ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্কের এই উত্তেজনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। যুক্তরাষ্ট্র তুরস্ক, ইসরায়েল ও সিরিয়ার কুর্দি গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন দিয়ে থাকে। এখানে তুরস্ক আবার কুর্দি গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধচারণ করে। ফলে সিরিয়ার রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ত্রিশুঙ্কু দশায় পড়েছে।

এ ছাড়া তুরস্কের সমর্থনে থাকা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো যদি ভবিষ্যতে সিরিয়ায় কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করে, তবে তা ইসরায়েলের জন্য আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।

তাই ইসরায়েল সিরিয়ার নতুন নেতাদের কথাবার্তা ও নীতি নিয়ে সতর্ক। সিরিয়া থেকে ইরান ও ইরানি মিত্রদের পতনের পর, ইসরায়েল একটি শক্তিশালী নিরাপত্তা সুবিধা পেয়েছে। তবে, তুরস্ক প্রভাবিত নতুন সিরিয়ান গোষ্ঠীগুলোর উপস্থিতি তাঁদের জন্য নিরাপত্তাঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। আবার তুরস্কের ভূমিকায় সিরিয়া পুনর্গঠিত হলে ইসরায়েল তাঁদের সীমান্তের কাছে ইসলামিক গোষ্ঠী ও সন্ত্রাসী মিত্রদের উপস্থিতি নিয়ে উদ্বেগে পড়বে।

তবে বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সংঘর্ষের সম্ভাবনা কম হলেও, কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই উত্তেজনা দীর্ঘমেয়াদে ইসরায়েল ও তুরস্কের সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলতে পারে।

সার্বিক পরিস্থিতি খেয়াল করলে বোঝা যায়, তুরস্ক-ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্কের উত্তেজনা ও সংঘাতের সম্ভাবনা ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে। সিরিয়ায় ইরানের প্রভাব কমে যাওয়ার পর তুরস্কের ভূমিকা মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতিতেও পরিবর্তন আনতে পারে।

রিয়াদ

×