ঐতিহ্যগতভাবে ভুটানের ভূখণ্ডের অংশ ব্যাপক বিতর্কিত ডোকলামে গত আট বছরে অন্তত ২২টি গ্রাম ও বসতি স্থাপন করেছে চীন। এর মধ্যে কৌশলগত ডোকলাম মালভূমির কাছাকাছি এলাকায় আটটি গ্রাম রয়েছে, যেখান থেকে অত্যন্ত উত্তেজনাপূর্ণ ভারত সীমান্তের ওপর নজরদারি চালানো সহজ। খবর হিন্দুস্তান টাইমসের।
স্যাটেলাইটে ধারণ করা ভারত-ভুটান-চীন সীমান্ত লাগোয়া ডোকলামের কাছে ভুটানের ভূখণ্ডের স্যাটেলাইটে ধারণ করা ছবিতে এসব গ্রাম নির্মাণের তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। বুধবার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডোকলামের কাছাকাছি ভুটানের পশ্চিমাঞ্চলীয় সেক্টরের আটটি গ্রামের সবই কৌশলগত এক উপত্যকায় অবস্থিত। যে উপত্যকার মালিকানা দাবি করে চীন। উপত্যকাটি কয়েকটি চীনা সামরিক তল্লাশি চৌকি অথবা ঘাঁটির কাছাকাছি। ভারতীয় পর্যবেক্ষক ও গবেষকরা বলেছেন, স্যাটেলাইট চিত্রে যে ২২টি গ্রাম শনাক্ত করা হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় গ্রাম হচ্ছে জিউ। ভুটানের ঐতিহ্যবাহী চারণভূমি শেথাংখায় নির্মাণ করা হয়েছে গ্রামটি। ডোকলামে নির্মিত চীনা এসব গ্রাম স্বাভাবিকভাবেই দিল্লির উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভুটানের এসব জমি চীনের দখলে চলে গেলে ভারতের নিরাপত্তাও প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন পর্যবেক্ষকরা। ২০১৭ সালে ডোকলামে চীনের অবকাঠামো ও সড়ক নির্মাণে বাধা দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারতীয় ও চীনা সৈন্যদের মাঝে ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল। দুই দেশের সৈন্যরা ওই এলাকায় টানা ৭৩ দিন মুখোমুখি অবস্থানে ছিলেন। শেষ পর্যন্ত দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে অচলাবস্থার অবসান হয়। তবে তারপর থেকে গত ৮ বছরে একই এলাকার আশপাশে গ্রাম গড়ে তুলতে শুরু করে চীন। ডোকলাম থেকে ভারতের শিলিগুড়ি করিডর বা চিকেন্স নেকের দূরত্ব ১০০ কিলোমিটারের কাছাকাছি। ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় কয়েকটি রাজ্যকে দেশটির মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে চীকেন্স নেক। ডোকলামে চীনের সামরিক বাহিনীর সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে মন্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলেও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনো সাড়া দেয়নি বলে জানিয়েছে হিন্দুস্তান টাইমস। গত কয়েক বছরে ভুটানের ভূখণ্ডে চীনা সৈন্যের উপস্থিতি ও বসতি স্থাপনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে ভুটান। দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং ২০২৩ সালে বেলজিয়ামের একটি দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ভুটানে চীনা স্থাপনা নেই বলে মন্তব্য করার পর ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল। ভুটানি ভূখণ্ডে চীনের গ্রাম ও বসতি স্থাপনের বিষয়ে করা প্রশ্নের জবাব ভুটানও দেয়নি বলে জানিয়েছে হিন্দুস্তান টাইমস। স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজের (এসওএএস) গবেষণা সহযোগী রবার্ট বার্নেট সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলেছেন, ডোকলামে ভুটানের ভূখণ্ডের ভেতরে ২০১৬ সালে প্রথম একটি গ্রাম তৈরি করে চীন। তখন থেকে এখন পর্যন্ত চীনা কর্তৃপক্ষ ওই এলাকায় ২২টি গ্রামে প্রায় ২ হাজার ২৮৪টি আবাসিক বাড়ি ও বসতি সম্পন্ন করেছে। একই সঙ্গে ওই এলাকার প্রায় ৭ হাজার মানুষকে ভুটানের পূর্বাঞ্চলের জনবসতিহীন এলাকায় স্থানান্তরিত করা হয়েছে। ‘ফোর্সফুল ডিপ্লোম্যাসি: চায়নাস ক্রস-বর্ডার ভিলেজেস ইন ভুটান’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পূর্বে ভুটানের ভূখণ্ডের অংশ ছিল এমন প্রায় ৮২৫ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে নিজেদের ভূখণ্ডের অন্তর্ভুক্ত করেছে চীন, যা ভুটানের ভূখণ্ডের দুই শতাংশের কিছু বেশি। চীন এই গ্রামে অজ্ঞাত সংখ্যক সরকারি কর্মকর্তা, নির্মাণ কর্মী, সীমান্ত পুলিশ এবং সামরিক কর্মীদের স্থানান্তরিত করেছে। এছাড়া নতুন করে নির্মিত এসব গ্রামের সঙ্গে চীনের সীমান্ত লাগোয়া শহরগুলোর সড়কপথে যোগাযোগও রয়েছে।
মোহাম্মদ আলী