যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইউক্রেনের উচিত রাশিয়ার আক্রমণ বন্ধে একটি চুক্তি করা এবং দখলকৃত ভূখণ্ডের গুরুত্ব কমিয়ে দেখা। ফ্লোরিডার মার-এ-লাগো ক্লাবে কথা বলার সময় তিনি এই মন্তব্য করেন। এদিকে রাশিয়া কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনীয় বাহিনীর ওপর আক্রমণ তীব্রতর করেছে এবং পূর্ব দোনেৎস্ক অঞ্চলেও চাপ বাড়াচ্ছে। বুধবার ইউক্রেনের শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা ওলেক্সান্ডার সিরস্কি এ তথ্য জানিয়েছেন। খবর রয়টার্সের।
ট্রাম্প বলেছেন, জেলেনস্কিকে চুক্তির জন্য প্রস্তুত থাকা উচিত। এটাই মূল কথা। অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে। একটা চুক্তি করতে হবে। তিনি বলেন, রাশিয়ার আক্রমণে বিধ্বস্ত ইউক্রেনীয় শহরগুলো পুনর্নির্মাণে শতাব্দী লেগে যাবে। ট্রাম্প রাশিয়ার দখলকৃত ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারের ইউক্রেনীয় আকাক্সক্ষাকে তেমন গুরুত্ব দেননি। ট্রাম্প সমালোচনা করেছেন মার্কিন অস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার অভ্যন্তরে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার কৌশল নিয়েও। বাইডেন প্রশাসনের অনুমোদনের পর এমন হামলা করা হয়েছে। ট্রাম্প ইঙ্গিত দেন, সংঘাত চলতে থাকলে এই অনুমোদন বহাল রাখার সম্ভাবনা কম। ট্রাম্প বলেন, ভূখণ্ড ফেরত পাওয়ার কথা বলা ভালো শোনায় কিন্তু শহরগুলো প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। ট্রাম্প বলেন, কিছু শহরের দিকে তাকালে বোঝা যায় একটি ভবনও অক্ষত নেই। তাহলে দেশ ফেরত নিয়ে কি করবে। এটি পুনর্নির্মাণ করতে ১১০ বছর লেগে যাবে। ট্রাম্পের এই মন্তব্য ইঙ্গিত দেয়, তার প্রশাসন ক্ষমতায় এলে ইউক্রেনের জন্য মার্কিন সহায়তা হয়তো কমে যাবে বা পুরোপুরি বন্ধ হতে পারে। তিনি দাবি করেছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট থাকলে রুশ নেতা ভøাদিমির পুতিন ইউক্রেনে আক্রমণ করতেন না। বাইডেন প্রশাসনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, রাশিয়ার ২০০ মাইল ভেতরে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া উচিত হয়নি। বাইডেন প্রশাসন বলেছে, চুক্তি করার সিদ্ধান্ত ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির ওপর নির্ভর করছে। জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি বলেন, ইউক্রেন ছাড়া ইউক্রেন নিয়ে কিছুই হবে না। আমরা তাদের ছাড়াই কোনও আলোচনা করব না। তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে তা নিয়ে আমরা চাপ প্রয়োগ করব না। তিনি আরও জানান, এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমোদনের বিষয়টি নির্বাচনের আগে থেকেই আলোচনা হচ্ছিল। রুশ যুদ্ধে উত্তর কোরিয়ার সেনা মোতায়েনের জবাবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। প্যারিসে চলতি মাসে জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাৎ নিয়ে সংক্ষিপ্ত মন্তব্য করেন ট্রাম্প। তবে নিজের অভিষেক অনুষ্ঠানে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলে নিশ্চিত করে তিনি বলেন, যদি তিনি আসতে চান, আমি তাকে স্বাগত জানাব। কিন্তু আমি তাকে আমন্ত্রণ জানাইনি। ট্রাম্প ইউক্রেন যুদ্ধকে ঘৃণ্য বলে উল্লেখ করে বলেছেন, দুই পক্ষের অবিশ্বাস্য সংখ্যায় সেনাদের মৃত্যু হচ্ছে। আমি যদি প্রেসিডেন্ট হতাম, এই যুদ্ধ কখনোই হতো না। যুদ্ধ তৃতীয় বছরে গড়ানোর সঙ্গে ১ হাজার ১৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্রন্টলাইনে ইউক্রেনীয় সেনারা ক্লান্ত ও সংখ্যায় পিছিয়ে পড়ছে। ইউক্রেনের শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা সিরস্কি বলেন, বুধবার তৃতীয় দিনের মতো শত্রু কুরস্ক অঞ্চলে তীব্র হামলা চালিয়েছে। রাশিয়া সক্রিয়ভাবে উত্তর কোরীয় সেনাদের ব্যবহার করছে, যারা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে। ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনী তাদের দৈনিক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় কুরস্ক অঞ্চলে সংঘর্ষের সংখ্যা বেড়ে ৬৮-তে পৌঁছেছে, যা গত সপ্তাহের শেষের দিকে দৈনিক প্রায় ৪০টি ছিল। আগস্টে ইউক্রেন কুরস্ক অঞ্চলে আকস্মিক অভিযান চালালেও সেই সময়ের মধ্যে সেখানে দখল করা এলাকার ৪০ শতাংশেরও বেশি হারিয়েছে। সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, কুরস্ক অঞ্চলে এই অভিযান ফ্রন্টলাইনকে আরও প্রসারিত করেছে, যা ইউক্রেনীয় বাহিনীর ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করছে।
মোহাম্মদ আলী