মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্র বদলে দিতে চায় ইসরাইল, তৈরি করতে চায় বৃহত্তর ইসরাইল রাষ্ট্র। সিরিয়ায় সরকার পতনের পর তেলআবিবের ব্যাপক হামলার ঘটনায় এ বিষয়টি নতুন করে উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। এ ছাড়া বাশার আল আসাদের পতনের পর ইসরাইল মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্র বদলে দিচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
মধ্যপ্রাচ্যে প্রতিবেশী দেশগুলোতে ইসরাইলের আগ্রাসন বেড়েই চলেছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ফিলিস্তিনের গাজা, ইরান এবং লেবাননের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি সেনারা। সবশেষ বাশাল আল আসাদ সরকারের পতনের পর সিরিয়ায় ব্যাপক হামলার ঘটনায় বৃহত্তর ইসরাইল রাষ্ট্র তৈরির বিষয়টি আবারও আলোচনায় এসেছে। বৃহত্তর ইসরাইল বলতে, বর্তমান ইসরাইল এবং ফিলিস্তিনের অঞ্চলসমূহকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়, যা মিসরের নীল নদ থেকে ইরাকের ফোরাত নদী পর্যন্ত বিস্তৃত। এ বিষয়ে বছরের শুরুতে মিডল ইস্ট মনিটরকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইসরাইলি রাজনীতিবিদ আভি লিপকিন বলেন, পর্যায়ক্রমে ইসরাইলের সীমান্ত লেবানন থেকে সৌদি আরবের বিশাল মরুভূমি পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। পরে তা ভূমধ্যসাগর থেকে ফোরাত নদী অর্থাৎ ইরাক পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। এ ছাড়া গত অক্টোবরে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ইসরাইল : মিনিস্টারস অব কেয়াস’ নামের তথ্যচিত্রেও বৃহত্তর ইসরাইলের কথা উঠে এসেছে। তথ্যচিত্রে অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ জানান, ভবিষ্যৎ ইসরাইল রাষ্ট্র জর্ডান, লেবানন, মিসর, সিরিয়া, ইরাক এমনকি সৌদি আরব পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। এর আগে গত ২৫ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ লেবাননে বসতি স্থাপনে ওই অঞ্চলের নতুন মানচিত্র প্রকাশ করে ইসরাইলের একটি কট্টরপন্থি ইহুদিবাদী সংগঠন। মানচিত্রে অঞ্চলটির বিভিন্ন এলাকাকে হিব্রু নামে নামকরণ করা হয়, যার সমালোচনা করেন বিশেষজ্ঞরা। সবশেষ বৃহত্তর ইসরাইল রাষ্ট্র নিয়ে কথা বলেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ইসরাইল মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্র বদলে দিচ্ছে বলে জানান তিনি। এ সময় আইডিএফ একাধিক ফ্রন্টে বিজয় অর্জন করেছে বলেও দাবি করেন নেতানিয়াহু। বৃহত্তর ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ধারণা নতুন নয়। প্রথম পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় ১৮৯৭ সালে। সে বছর সুইজারল্যান্ডের বাসেল শহরে আধুনিক ইহুদিবাদের প্রতিষ্ঠাতা থিওডর হার্জেলের নেতৃত্বে ইহুদিদের একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ইহুদিদের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা তুলে ধরেন হার্জেল। এদিকে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, সিরিয়া সীমান্তবর্তী কৌশলগত মাউন্ট হেরমনে ইসরাইল থাকবে যতক্ষণ না কোনো নতুন ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সরকারের পতনের পর, ইসরাইলি সেনারা সিরিয়া ও ইসরাইল অধিকৃত গোলান মালভূমির মধ্যবর্তী নিরস্ত্রীকরণ অঞ্চলে প্রবেশ করে মাউন্ট হেরমনের দখল নেয়। ইসরাইলি কর্মকর্তারা এ পদক্ষেপকে সীমিত ও অস্থায়ী বলে উল্লেখ করেছেন। তারা দাবি করেছেন, এটি ইসরাইলের সীমান্ত সুরক্ষার জন্য নেওয়া হয়েছে। তবে সেনা প্রত্যাহারের কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা দেওয়া হয়নি। গত সপ্তাহে প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ সেনাদের শীতকাল পর্যন্ত মাউন্ট হেরমনে থাকার প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেন। মঙ্গলবার নেতানিয়াহু সামরিক কমান্ডার এবং নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে মাউন্ট হেরমনে একটি কার্যক্রম পর্যালোচনা সভায় যোগ দেন। সেখানে নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরাইলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মতো নতুন কোনও ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত এই গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আইডিএফ (ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী) মোতায়েন রাখার বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। মাউন্ট হেরমনে ইসরাইলের প্রবেশ ১৯৭৩ সালের আরব ইসরাইল যুদ্ধের পর গঠিত বাফার জোনের আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘন করেছে বলে সমালোচনা করেছে কয়েকটি দেশ ও জাতিসংঘ। তারা সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে। এদিকে সিরিয়ায় সরকার পতনের ফলে তেহরানের নেতৃত্বাধীর প্রতিরোধ অক্ষ নিশ্চহ্ন হয়ে গেছে বলে যারা মনে করছেন, তারা ভুল করছেন বলে মন্তব্য করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। মঙ্গলবার তেহরানে নারীদের এক সমাবেশে খামেনি এমন মন্তব্য করেন। তেহরানের সমাবেশে বক্তৃতা দেওয়ার সময় ইসরাইলি হামলায় নিহত হিজবুল্লাহ এবং হামাস নেতাদের স্মরণ করেন। তিনি বলেন, সাইয়েদ হাসান নাসরাল্লাহর আত্মা জীবিত, সিনওয়ারের আত্মা জীবিত। শহীদরা কখনো মরে না।
মোহাম্মদ আলী