ডোনাল্ড ট্রাম্প কানাডার রাজনৈতিক অস্থিরতাকে আরো উস্কে দিচ্ছেন, যা প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর পদচ্যুতি ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা করছে বিশেষজ্ঞরা।
নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার প্রতিপক্ষ ট্রুডোকে "৫১তম রাজ্যের গভর্নর" বলে ব্যঙ্গ করছেন। এটি তার দ্বিতীয় দফার বড় কূটনৈতিক বিজয় অর্জনের পরিকল্পনারই একটি অংশ, যেখানে তিনি অফিসে যোগদানের আগেই বিশ্বজুড়ে আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছেন।
ট্রাম্পের এই মনোভাব কেবল কানাডার জন্য নয়, বরং ফ্রান্স, জার্মানি এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মতো বিভক্ত সরকারগুলোর জন্যও হুঁশিয়ারি হতে পারে। তার কৌশলগুলো তাদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াবে যারা ইতোমধ্যেই অভ্যন্তরীণ সংকটে জর্জরিত।
ট্রুডোর ওপর চাপ বৃদ্ধি
ট্রাম্পের ঘোষণা অনুযায়ী, কানাডিয়ান পণ্যের ওপর ২৫% শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রুডোর জন্য গভীর অর্থনৈতিক মন্দার ভয় তৈরি করেছে। নির্বাচনের বছর শুরু হওয়ার আগেই এই পরিস্থিতি ট্রুডোর জন্য সংকট আরও বাড়িয়েছে।
ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ এমন একটি দেশের প্রতি অত্যন্ত কঠোর মনোভাব প্রদর্শন করে, যেটি কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্রই নয় বরং সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিকভাবে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।
ট্রুডো রাজনৈতিক সংকটের মুখে
নয় বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা জাস্টিন ট্রুডো ইতোমধ্যে কানাডার জনগণ এবং তার দলের ভরসা হারিয়েছেন। চলতি সপ্তাহে উপ-প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ডের পদত্যাগ তার সরকারের জন্য মারাত্মক আঘাত। তার এই পদত্যাগের কয়েক ঘণ্টা পর সংসদে গুরুত্বপূর্ণ বাজেট উপস্থাপনের কথা ছিল।
একটি জ্বলন্ত পদত্যাগপত্রে ফ্রিল্যান্ড ট্রুডোর শাসনকে ব্যর্থ বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, "আমাদের দেশ এখন গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। মার্কিন প্রশাসন কঠোর অর্থনৈতিক নীতিমালা অনুসরণ করছে, যার মধ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি রয়েছে।"
তিনি আরও যোগ করেন, "এই ধরনের রাজনৈতিক কৌশলগুলো কানাডিয়ানদের মনে আমাদের নেতৃত্বের প্রতি সন্দেহ তৈরি করছে।"
এদিকে, ট্রুডোর নেতৃত্বে লিবারেল দল নির্বাচনী জনমত জরিপে বিরোধী কনজারভেটিভদের তুলনায় ২০ পয়েন্ট পিছিয়ে রয়েছে। ট্রুডো পদত্যাগ করবেন, নাকি আস্থা ভোটের মাধ্যমে তার সংখ্যালঘু সরকার ভেঙে যাবে—এ নিয়ে জল্পনা চলছে।
ট্রাম্পের বিজয় এবং কৌশল
ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ডের পদত্যাগ ট্রাম্পের জন্য একটি কৌশলগত জয়। প্রথম মেয়াদে মার্কিন-সমঝোতা আলোচনার সময় ফ্রিল্যান্ডের সঙ্গে তার সংঘাত ছিল। ট্রুডোকেও তিনি একদমই পছন্দ করেন না। ট্রাম্প তাকে দুর্বল, প্রগতিশীল এবং “ওয়োক” বলে মনে করেন।
একটি পোস্টে ট্রাম্প বলেন, “কানাডার গভর্নর জাস্টিন ট্রুডোর অধীনে ফ্রিল্যান্ডের আচরণ ছিল বিষাক্ত এবং দেশের জন্য অকার্যকর। তাকে কেউ মিস করবে না!”
কানাডা-মার্কিন বাণিজ্য এবং ট্রাম্পের উদ্দেশ্য
ট্রাম্প বাণিজ্যকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হিসেবে দেখেন, যেখানে একজন জয়ী আর অন্যজন পরাজিত। তার এই মনোভাব ইউএসএমসিএ চুক্তির পুনর্মূল্যায়নের পরিকল্পনাকে কেন্দ্র করে আরও স্পষ্ট। ট্রাম্প দাবি করেছেন, “আমরা কানাডা এবং মেক্সিকোকে ভর্তুকি দিচ্ছি। এটি আর চলতে পারে না।”
কিন্তু বাস্তবতা হলো, কানাডা-মার্কিন বাণিজ্যিক সম্পর্ক গভীরভাবে জড়িত। বাণিজ্য যুদ্ধ উভয় দেশের অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
পরবর্তী টার্গেট কারা?
কানাডা এবং মেক্সিকো পরবর্তী লক্ষ্যবস্তু হলেও ট্রাম্প ইউরোপীয় দেশগুলোর বিরুদ্ধে একই কৌশল প্রয়োগ করতে পারেন। ফ্রান্সের ম্যাক্রোঁ রাজনৈতিক সংকটে রয়েছেন, জার্মানির ওলাফ শোলজের সরকার ভেঙে গেছে, এবং ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের বড় সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও ব্রেক্সিটের পর তারা আর ইইউর সুরক্ষা পাচ্ছে না।
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু হওয়ার আগেই কানাডিয়ানরা তার কঠোর মনোভাবের স্বাদ পেতে শুরু করেছে। কিন্তু খুব শিগগিরই অন্য দেশগুলোও একই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হবে।
নাহিদা