ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

নিজ সদরদপ্তরের নিয়ন্ত্রণ নিলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ২০:৪৭, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪; আপডেট: ২০:৫৩, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪

নিজ সদরদপ্তরের নিয়ন্ত্রণ নিলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা

বিদ্রোহী গোষ্ঠী

দখল হারানোর প্রায় ৩০ বছর পর সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে নিজেদের সদরদপ্তরের দখল পুনরুদ্ধারের দাবি করেছে মিয়ানমারের একটি জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী। 

মঙ্গলবার থাইল্যান্ডের জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীটির নেতা এই দাবি করেছেন বলে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, জোরপূর্বক সদরদপ্তর থেকে বের করে দেওয়া মিয়ানমারের জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী কারেন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনইউ) ৩০ বছর পর তাদের প্রধান কার্যালয়ের দখল পুনরুদ্ধার করেছে।

কেএনইউ নেতা সাও থামাইন তুন বলেছেন, কয়েকদিনের লড়াইয়ের পর থাইল্যান্ড সীমান্তের ম্যানারপ্লাতে অবস্থিত কেএনইউ’র সদরদপ্তরের দখল নিয়েছেন কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়নের (কেএনইউ) যোদ্ধারা। জান্তা সৈন্যরা ‘‘এখনও এটির দখল ফিরে পেতে চায় এবং তারা ড্রোন ব্যবহার করে আমাদের সৈন্যদের ওপর বোমা ফেলার চেষ্টা করছে।’’
  
তিনি বলেন, ‘‘কিন্তু আমাদের সৈন্যরা ইতোমধ্যে ঘাঁটিটির দখল নিয়েছেন।’’

দেশটির জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী কেএনইউর কয়েক দশকের সশস্ত্র সংগ্রামের সদরদপ্তর ও মিয়ানমারের তৎকালীন জান্তার বিরোধিতাকারী অন্যান্য ভিন্নমতাবলম্বী রাজনীতিকদের আবাসস্থল হিসেবে ম্যানারপ্লা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কারেন সংখ্যালঘুদের অধিকারের জন্য বছরের পর বছর ধরে মিয়ানমারের ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে লড়ছে গোষ্ঠীটি।

খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ কেএনইউর মাঝে বিভক্তি দেখা দেওয়ায় ১৯৯৫ সালে মিয়ানমারের তৎকালীন জান্তা ও কেএনইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়া বৌদ্ধদের একটি দল ম্যানারপ্লার সদরদপ্তরের দখল নেয়। সেই জান্তাবাহিনীর রক্তাক্ত অভিযানের মুখে সেখানকার হাজার হাজার বাসিন্দা প্রতিবেশী থাইল্যান্ডে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
 
ম্যানারপ্লার পতনের পর জান্তা বাহিনী এলাকাটির নাম পরিবর্তন করে কাইন রাজ্য রাখে। একই সঙ্গে জান্তা বাহিনীর মিত্র বৌদ্ধদের সংগঠন ডেমোক্র্যাটিক কাইন ম্যানারপ্লাতে শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

২০২১ সালে মিয়ানমারের জান্তাবাহিনী অভ্যুত্থান ঘটিয়ে দেশটির গণতন্ত্রকামী নেত্রী অং সান সু চিকে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত করে। অভ্যুত্থানের পর থেকেই বর্তমান ক্ষমতাসীন জান্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ চালিয়ে আসছে কেএনইউ। জাতিগত এই বিদ্রোহী গোষ্ঠী জান্তা বাহিনীর পতনের লড়াই ত্বরান্বিত করার জন্য স্থানীয় অন্যান্য বিরোধী গোষ্ঠীগুলোকে আশ্রয় ও সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়েছে।

সাও থামাইন তুন বলেন, কারেনদের জন্য ঐতিহাসিক এক স্থান ম্যানারপ্লা। সেখানে কেএনইউর প্রায় ১০০ সৈন্যকে সমাহিত করা হয়েছে। তাদের সকলের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য এলাকাটি আমাদের পুনর্নির্মাণ করা দরকার।

মিয়ানমারে তিন বছর আগের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকেই ব্যাপক অস্থিতিশীলতার মাঝে রয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটি। অভ্যুত্থানের পর দেশটির বিভিন্ন প্রান্তে কয়েক ডজন সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে।

ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন দলের সদস্যরা পিপল ডিফেন্স ফোর্স নামে বাহিনী গঠন করে বর্তমানে সারাদেশে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, জান্তা-বিদ্রোহী লড়াইয়ে মিয়ানমারে এখন পর্যন্ত ৩০ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
 

শহীদ

×