সিরিয়ার দখলকৃত গোলান মালভূমিতে বসতি সম্প্রসারণের একটি পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে ইসরাইল সরকার। সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের হাতে বাশার আল আসাদের পতনের পর এই উদ্যোগ নিল তেলআবিব। সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ সরকারের পতনের অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরীর আল শামের (এইচটিএস) প্রধান আবু মোহাম্মদ আল জোলানি ইসরাইলের চলমান হামলার সমালোচনার পরই নেতানিয়াহু প্রশাসন বসতি সম্প্রসারণের এ ঘোষণা দিল। খবর আলজাজিরার।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়েছে, সরকার গোলান মালভূমির অধিকৃত ভূখণ্ডে জনসংখ্যা দ্বিগুণ করতে চায়। ১৯৬৭ সালে ছয় দিনের যুদ্ধের সময় ইসরাইল ওই এলাকাটি দখল করে নিয়েছিল। তবে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এই দখল অবৈধ। গত ৮ ডিসেম্বর বাশার আল আসাদের পতনের পর ইসরাইলি বাহিনী গোলান মালভূমিতে সিরিয়া ও ইসরাইলের মধ্যকার বাফার জোনে প্রবেশ করেছে। ইসরাইলের দাবি, দামেস্কের নিয়ন্ত্রণ পরিবর্তন হওয়ার মানে হলো আগে যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাতিল হয়ে গেছে। গোলান হলো সিরিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত প্রায় ১৮০০ বর্গকিলোমিটার (প্রায় ১০০০ বর্গমাইল) আয়তনের এক পাথুরে মালভূমি। এলাকাটি ইসরাইলের উত্তর-পূর্বাঞ্চল স্পর্শ করেছে। গোলান বর্তমানে ইসরাইলের বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আছে। গোলানে এখন ৩০টির বেশি ইসরাইলি বসতি আছে, যেখানে প্রায় ২০ হাজার মানুষ বাস করে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী তারা সেখানে অবৈধ, যদিও ইসরাইলি তা মানতে রাজি নয়। বসতি স্থাপনকারীদের পাশাপাশি সেখানে ২০ হাজারের মতো সিরীয় নাগরিকও আছে। ওই এলাকাটি ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার পরে দ্রুজ আরব হিসেবে পরিচিত এসব মানুষ সেখান থেকে পালিয়ে যায়নি। চলতি মাসে বাশার আল আসাদ সরকারের পতনের পর সিরিয়াজুড়ে ভারি হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। সোমবারও সিরিয়ার পশ্চিম উপকূলরেখা বরাবর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং সামরিক অবকাঠামোতে আঘাত হানে ইসরাইলি যুদ্ধবিমান। ইসরাইলি দখলদার বাহিনী পশ্চিম সিরিয়ার কুনেইত্রা প্রদেশে ১৫ কিলোমিটার (৯ মাইল) পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে। এদিকে হামা ও হোমসের সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে এবং আলেপ্পোয় ইসরাইলি হামলা ভূমিকম্পের মতো লক্ষ্যবস্তু করা অঞ্চলগুলোকে কাঁপিয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে রাশিয়ার স্পুটনিক নিউজ এজেন্সির প্রতিবেদনে। এদিকে সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে নাটকীয়ভাবে উৎখাতের এক সপ্তাহ পরই শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে ফিরে গেছে। সিরিয়ার নতুন শাসকগোষ্ঠী স্কুল খোলার নির্দেশ দেওয়ার পর তা কার্যকর হয়। অন্যদিকে সিরিয়ার মিলিটারি অপারেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরীর আল শামের (এইচটিএস) প্রধান আবু মুহাম্মদ আল জোলানি জানিয়েছেন, দেশের সব সশস্ত্র গোষ্ঠী ভেঙে দেওয়া হবে ও নতুন সিরিয়ান রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ ছাড়া কারও হাতে অস্ত্র থাকবে না। দেশটির অন্তর্বর্তী সরকারের পর্যালোচনার আলোকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আহমেদ আল শারা ওরফে নামেও পরিচিত এই বিদ্রোহী নেতা একটি সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন। সেখানে তিনি জানান, বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সব সদস্যকে সিরিয়ার সশস্ত্রবাহিনীতেও নেওয়া হবে না।
বাধ্যতামূলক সামরিক নিয়োগ হবে না, তবে নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো থেকে নিয়োগ বাধ্যতামূলক হবে। তিনি আরও বলেন, সিরিয়ায় সরকারি কর্মচারীদের বেতন ৪০০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব বিবেচনাধীন। এই মুহূর্তে আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার হলো ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়িগুলোর পুনর্নির্মাণ ও বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের ফিরিয়ে আনা। এদিকে আমদানির সুবিধার্থে সিরিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি সিদ্ধান্ত জারি করেছে। এই সিদ্ধান্তের আলোকে আমদানিকারকেরা অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের জন্য অনুমোদিত পণ্য আমদানির জন্য দেশের বাইরে অর্থ পাঠাতে পারবেন। তবে অর্থপাচার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক বা স্থানীয় বিধির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলে সেই আমদানিকারককে আইনের আওতায় আনা হবে। এর আগে শনিবার আল শারা বলেছিলেন, দীর্ঘদিন ধরে চলা যুদ্ধ ও সংঘর্ষে বিধ্বস্ত সিরিয়ার বর্তমান অবস্থা নতুন কোনো সংঘাত সহ্য করার সামর্থ্য রাখে না। এই মুহূর্তে আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার হলো দেশের পুনর্গঠন এবং স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, এমন কোনো বিরোধে জড়ানো নয় যা আরও ধ্বংস ডেকে আনতে পারে।
মোহাম্মদ আলী