২০০১ সালের ১৩ই ডিসেম্বর বেলা তখন ১১টা পেরিয়েছে আচমকা গোলাগুলির শব্দে কেঁপে উঠলো ভারতের রাজধানী দিল্লিতে অবস্থিত দেশটির কেন্দ্রীয় সংসদ ভবন লোকসভার। অধিবেশন শেষে তখন বেরিয়ে গেছেন সংসদ সদস্যদের অনেকে ভেতরে ছিলেন ১০০এর বেশি এমপি এমন সময় পার্লামেন্ট চত্তরে ঢুকে পড়ে সরকারি ভুয়া স্টিকার লাগানো একটি অ্যাম্বাসেডর গাড়ি । নিরাপত্তারক্ষীদের সন্দেহ হলে তারা নামতে বলেন তখন গাড়ি থেকে বেরিয়ে বন্দুক গ্রেনেড ও গোলা বারুদ নিয়ে সংসদ ভবনে আক্রমণ চালায় পাঁচজন সন্ত্রাসী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা জোরদার আক্রমণ চালিয়ে সংসদের ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলেও সফল হয়নি । তারা হামলাকারীদের ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন। নিরাপত্তারক্ষীরা জরুরি সাইরেন বেজে উঠলে সতর্ক হয়ে ওঠে দায়িত্বরত বাহিনী বন্ধ করে দেয়া হয় পার্লামেন্ট ভবনের সমস্ত প্রবেশপথ। প্রায় ৩০ মিনিট ধরে চলে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি গোলাগুলি প্রাণ হারান আটজন পুলিশ ও একজন মালিক। সংসদের মূল কক্ষে ঢোকার আগেই সিকিউরিটি ফোর্সের হাতে মারা পড়ে পাঁচ সন্ত্রাসীও । সেদিনের এই ঘটনা কাঁপিয়ে দিয়েছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্রের দেশ ভারতের আত্মমর্যাদার ভিত পার্লামেন্ট ভবন। যেটা দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক।
বাংলাদেশের ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিংবা সম্প্রতি ৫৩ বছরের পারিবারিক শাসনা আমলের অবসান ঘটিয়ে পালিয়ে যাওয়া সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ উভয় ক্ষেত্রেই ক্ষমতা হারানোর চিহ্ন হয়ে আছে। সংসদ ভবন সারা বিশ্বে গণঅভ্যুত্থানের মুখে বিভিন্ন সময় গদি হারানো স্বৈরাচারী নেতাদের ক্ষেত্রেও বিক্ষুব্ধ জনতাকে দেখা গেছে সংসদের দখল নিতে ভারতের সংসদে এরকম হামলা কেউ চালাতে পারে সেটা বিশ্বাস করতেও সেদিন কষ্ট হয়েছিল । তৎকালীন প্রশাসনের সংসদ ভবনের নজিরবিহীন সেই আক্রমণের ঘটনায় ভারত দায়ী করে পাকিস্তান ভিত্তিক সংগঠন জায়েশী মোহাম্মদকে। এর জেড়ে দুই দেশের মধ্যে শুরু হয় তুমূল উত্তেজনা । সীমান্তের কাছে তখন সেনা সমাবেশ করতে শুরু করে ভারত পাল্টা ব্যবস্থা নেয় । পাকিস্তানও কয়েক মাস ধরে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি চলার পর ২০০২ সালের শেষের দিকে মধ্যস্থতার উদ্যোগ নেয় । আন্তর্জাতিক মহল ভারতের পার্লামেন্টে জঙ্গি হামলা পাকিস্তানের মদদে চালানো সবচেয়ে দুঃসাহসী এবং সবচেয়ে উদ্বেগজনক ঘটনা এমন মন্তব্য করেছিলেন ভারত সরকারের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লাল কৃষ্ণ আদবানী ।
পার্লামেন্ট ভবনে হামলার কিছুদিনের মধ্যে সন্দেহভাজন কয়েকজনকে গ্রেফতার করেপুলিশ । এদের একজন ছিল জম্মু-কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্টের সদস্য মোহাম্মদ আফজাল গুরু অন্য আসামিদের নানা পর্যায়ের শাস্তি হয় খালাসও পায় কেউ কেউ ২০১৩ সালে তিহার জেলে ফাঁসিতে মৃত্যু হয় আফজালের তবে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো প্রায় একই রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে ২০২৩ সালে দিল্লিতে সংসদের অধিবেশন চলাকালীন টিনের হলুদ রঙের রং বোমা ফাটিয়ে পার্লামেন্টের মূল কক্ষে আতঙ্ক ছড়ায় দুই যুবক এমন ঘটনা ভারতবাসীর মনে উসকে দিয়েছিল বহু বছরের পুরনো ইতিহাস
রাজু