দেওয়াল ভেঙে বন্দিদের বের করে আনা হয়।
দামেস্কের সরকার পতনের উচ্ছ্বাস কীসের গুঞ্জন এ যেন বাধা পাচ্ছে। রাজধানীর অদূরে মানুষের কসাইখানা হিসেবে পরিচিত সেডনা কারাগারের দেয়ালগুলো যেন বহু বছর ধরে এখানে আটকে রাখা নির্যাতন, এমনকি নির্মমভাবে হত্যা করা মানুষের গোঙানির শব্দে প্রতিফলন দিচ্ছে। স্বৈরশাসক আসাদের সেনা বাহিনী এই কারাগারে রেখে কত নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করেছে সেই হিসাব নেই।
কারাগারের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পেরেছিল সংবাদমাধ্যম দ্যা গার্ডিয়ানের ক্যামেরা। দেখা গেছে, কারাগারের দরজার পেছনে রয়েছে বিশাল জায়গা। গভীরতা হতে পারে পাঁচ তলা ভবনের সমান। এখানেই রাখা হয়েছিল আসাদ সরকারের আমলের শেষ কারাবন্দিদের। গুজব উঠেছিল কুখ্যাত এই কারাগারে এখনও বন্দি রয়েছে ১৫০০ সিরীয় নাগরিক। এখন বিদ্রোহীরা এই কারাগার দখলে নিয়ে দরজা খুলে দেওয়ার পর পরিবারের সদস্যরা হন্যে হয়ে খুঁজছেন নিজের পরিবারের সদস্যকে। তথ্য রয়েছে রেড ওয়াইন খ্যাত লুকানো এই ভূগর্ভস্থ স্থানে না খেয়ে অক্সিজেনের অভাবে প্রাণ গেছে বহু মানুষের।
সিঁড়ি ঘিরে উঠেছে নীচতলা থেকে উপরতলা পর্যন্ত। আশপাশের সব হোল্ডের দরজা। বলা হচ্ছে, এই কারাগারে তিনটি উইং ছিল। প্রতিটা দিন ছিল এক একটি টর্চার সেল। বাইরের দুনিয়া থেকে যা পুরোটাই বিচ্ছিন্ন। প্রিয়জনকে খুঁজতেই কারাগারের আশপাশে ভিড় করেছেন আত্মীয়রা।
প্রতিটি দরজায় শেষ হচ্ছিল কারাগারের মাঝখানে। সেলগুলো থেকে পাওয়া গেছে ম্যাপ। কম্বল আর কাপড়ের সংলাপ ছিল কারাগারে থাকা বন্দিদের কক্ষগুলো। কেউ কেউ দেওয়ালে তৈরি করেছিলেন গর্ত সেলগুলো মাত্র কয়েক মিটার প্রশস্ত ছিল। সেখানে একসঙ্গে রাখা হত কয়েক জন কয়েদিকে। শুয়ে থাকার মতো জায়গাও ছিল না। দেওয়াল ভর্তি এখনও কারাবন্দিদের লিখনিতে, আমাকে নিয়ে যাও।
কুখ্যাত এই কারাগারে এক ধরনের কৃষ্ণগহ্বর বলা হয়। যেখানে সরকারের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললেই তাঁকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করা হত। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, ২০১১ থেকে ২০১৫ সালে ১৩ হাজার মানুষকে শুধু ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সিরিয়ার সিভিল ডিফেন্স বলছে, হোয়াইট হেলমেট থেকে বিশেষ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে কারাগারে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত শতাধিক কারাগার রয়েছে। সিরিয়ায় পাশাপাশি অনেক গোপন স্থান রয়েছে। যেখানে বন্দীদের রেখে নির্যাতন করা হত। এর মধ্যে কুখ্যাত কারাগার সেদনায়া। দামেস্কের বাইরে মরুভূমিতে এ কারাগার।
২০১১ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দেড় লাখের বেশি সিরিয় নাগরিককে বন্দি করে কারাগারে রাখা হয়। বাশার আল আসাদের বাবা হাজের সময়ও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল অনেককেই। এখনো কারাগারে বন্দি থাকতে পারে অগনিত সিরিয় নাগরিক।
এম হাসান