ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

জাতিসংঘে পক্ষে ভোট দিল ১৫৮ দেশ

গাজায় নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস

প্রকাশিত: ২০:০৯, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪; আপডেট: ২০:০৯, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪

গাজায় নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস

ফিলিস্তিনের গাজায় নিঃশর্ত ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস করেছে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ। ইউএনআরডব্লিউএর সমর্থনেও আলাদা প্রস্তাব পাস হয়েছে। ইসরাইল আইন করে এই সংগঠনকে তাদের দেশে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। বৃহস্পতিবার সাধারণ পরিষদে পাস হওয়া ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, গাজা ভূখণ্ডে অবিলম্বে নিঃশর্তে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করতে হবে। বৃহস্পতিবার এই ভোটাভুটিতে প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় ১৫৮ দেশ। বিপক্ষে ভোট পড়ে ৯টি। আর ১৩ দেশ ভোটদান থেকে বিরত ছিল। এদিকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় শিশুসহ আরও ৩৮ জন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরও অনেকে। খবর আলজাজিরার।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, অবিলম্বে নিঃশর্তে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করতে হবে। বন্দিদের নিঃশর্তে মুক্তি দিতে হবে। এদিন সাধারণ পরিষদে আরেকটি প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। সেখানে ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের নিয়ে জাতিসংঘের সংগঠন ইউএনআরডব্লিউএর প্রস্তাবের পক্ষে ১৫৯ দেশ ভোট দেয়। ইসরাইল, যুক্তরাষ্ট্রসহ সাতটি দেশ এর বিরুদ্ধে ভোট দেয়। ১১টি দেশ ভোটদানে বিরত থাকে। এই প্রস্তাবে ইউএনআরডব্লিউএ নিয়ে ইসরাইলের আইনের নিন্দা করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ইসরাইল যেন ইউএনআরডব্লিউএকে যথাযোগ্য মর্যাদা দেয় এবং তাদের কাজে যেন কোনো বাধা না দেয়। এই প্রস্তাব পাস করার আগে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর অনেকেই তাদের ভাষণে ফিলিস্তিনকে সমর্থন জানায়। জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের দূত রিয়াদ মানসুর বলেন, গাজা এখন মানব পরিবারের যন্ত্রণার ক্ষতচিহ্ন হয়ে আছে। স্লোভেনিয়ার দূত বলেছেন, গাজা আর নেই। তা ধ্বংস করা হয়েছে। আলজিরিয়ার ডেপুটি অ্যাম্বাসেডার বলেছেন, ফিলিস্তিনের দুরবস্থা নিয়ে চুপ করে থাকার জন্য বড় মূল্য দিতে হবে। অবশ্য এই প্রস্তাবকে প্রতীকী মনোভাব বলে মনে করা হচ্ছে, কারণ ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র তা খারিজ করে দিয়েছে। আর এই প্রস্তাব মানার কোনো আইনি বাধ্যবাধকতাও ইসরাইলের ওপর নেই। তবে রাজনৈতিক দিক থেকে দেখতে গেলে এর একটা চাপ আছে। কারণ এতগুলো দেশ যখন কোনো প্রস্তাবে সায় দেয়, তখন তাকে গ্লোবাল ওপিনিয়নের প্রকাশ বলে মনে করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্য ছিল, গাজায় বন্দিদের মুক্ত করার শর্তে যুদ্ধবিরতি হতে পারে। না হলে হামাস ওই বন্দিদের মুক্তি দেবে না। আমেরিকার ডেপুটি অ্যাম্বাসেডর রবার্ট উড বলেছেন, প্রস্তাবের ভাষা ভুল ও লজ্জাজনক। জেরুজালেমের বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে সন্দেহভাজন ফিলিস্তিনিদের হামলায় একটি ইসরাইলি বাসে আগুন ধরে গেছে। সামরিক ও হাসপাতালের কর্মকর্তাদের মতে, এতে একটি ১০ ??বছর বয়সী ছেলে শিশুসহ তিনজন আহত হয়েছে। এই আক্রমণটি অধিকৃত পশ্চিমতীরে প্রধান ইসরাইলি বসতিগুলোর কাছে একটি হাইওয়েতে হয়েছিল। বেথলেহেমের আশপাশের অঞ্চলে বন্দুকধারীদের সন্ধানে অভিযান চালিয়েছে সেনাবাহিনী। লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছেছে ইসরাইল। এদিকে সিরীয় বিদ্রোহীরা দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আসাদকে উৎখাত করলেও গাজায় ইসরাইল-হামাস যুদ্ধের শেষ হবে এমন কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বর্তমান ও আগত মার্কিন প্রশাসন উভয়ই বলেছে, তারা জানুয়ারিতে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিষেকের আগে গাজায় যুদ্ধ শেষ করার আশা করছে। গাজায় অনেক মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকা পড়ে আছেন কারণ উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ মনে করছে, গাজা উপত্যকাজুড়ে ধ্বংস হওয়া বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো ১০ হাজারেরও বেশি লোক নিখোঁজ রয়েছেন। মূলত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরাইল অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে তার নৃশংস হামলা অব্যাহত রেখেছে। উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরাইল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

মোহাম্মদ আলী

×