ছবি সংগৃহীত
আসাদ শাসনের পতন এবং সিরিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তনের পর, দেশটির ভবিষ্যতের দিকে কড়া নজর রাখছে বিশ্ব। সিরিয়ার ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধের পর ৮ ডিসেম্বর সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ তার ২৪ বছরের শাসনকাল শেষ করে রাজধানী দামেস্ক ত্যাগ করেন।
এই গৃহযুদ্ধে পাঁচ লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু, মিলিয়নাধিক মানুষ উদ্বাস্ত এবং আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর মিত্রবাহিনী ও প্রাক্সিরা জড়িয়ে পড়ে। এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যেমন রাশিয়া, ইরান, যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক এবং ইসরায়েল এখন সিরিয়ার ভবিষ্যত নিয়ে নিজেদের স্বার্থে নজর রাখছে। সম্প্রতি বিবিসি এ নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
তুরস্কের: সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে তুরস্ক বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলির সমর্থক ছিল। যারা বর্তমানে সিরিয়ান ন্যাশনাল আর্মি (SNA) এর অধীনে লড়াই করছে। তুরস্ক মূলত কুর্দি YPG মিলিশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য বিদ্রোহীদের সমর্থন দিয়েছে। যাদেরকে তুরস্ক নিজের দেশীয় কুর্দি বিদ্রোহী গোষ্ঠী PKK এর শাখা হিসেবে দেখে। তুরস্ক সিরিয়ার উত্তরাঞ্চল থেকে কুর্দি গোষ্ঠীকে বের করার চেষ্টা করেছে এবং প্রায় ৩ মিলিয়ন সিরিয়ান শরণার্থীকে ফিরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে।
রাশিয়া: রাশিয়া আগে থেকেই সিরিয়ার সাথে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক বজায় রেখেছিল এবং ২০১৫ সালে রাশিয়া সিরিয়ার সরকারকে সমর্থন দেওয়ার জন্য সামরিক অভিযান শুরু করে। রাশিয়া সিরিয়ার পূর্ব ভূমধ্যসাগরে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করে এবং আন্তর্জাতিক ক্ষমতার ভারসাম্য পরিবর্তন করতে চেয়েছিল। তবে, ২০২২ সাল থেকে ইউক্রেনে যুদ্ধের ফলে রাশিয়ার মনোযোগ বিভক্ত হয়ে যায় এবং সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সিরিয়ান সরকারের পতন ত্বরান্বিত হয়।
যুক্তরাষ্ট্র: যুক্তরাষ্ট্র ২০১১ সালে সিরিয়ার গণতন্ত্রপন্থী প্রতিবাদকে দমন করার পর, আসাদ সরকারের পতনের জন্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলির সমর্থক ছিল। যুক্তরাষ্ট্র আইএসআইএসের বিরুদ্ধে বিমান হামলা চালায় এবং সিরিয়ার উত্তর-পূর্বে কুর্দি নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্স (SDF) কে সমর্থন দেয়। আসাদ সরকারের পতনের পর, যুক্তরাষ্ট্র কেন্দ্রীয় সিরিয়ায় আইএসের ক্যাম্পে বিমান হামলা চালিয়ে আইএসের পুনরুত্থান রোধ করতে চায়।
ইরান: ইরান এবং সিরিয়া দীর্ঘদিনের মিত্র রাষ্ট্র। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে, ইরান কয়েকশো সৈন্য পাঠিয়েছে এবং আসাদকে সাহায্য করতে বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। ইরান-সমর্থিত শিয়া মিলিশিয়াগুলি, বিশেষ করে হিজবুল্লাহ, সিরিয়ান বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করেছে। তবে ইসরায়েলের সঙ্গে লেবাননে সংঘর্ষের ফলে ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলি দুর্বল হয়ে পড়ে, যা সিরিয়ার সরকার পতনের দিকে পরিচালিত করে।
ইসরায়েল: সিরিয়া গলান হাইটস ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধের সময় দখল করে এবং ১৯৮১ সালে একতরফাভাবে তা নিজেকে অধিকারী ঘোষণা করে। ২০১৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গলান হাইটসে ইসরায়েলের অধিকার স্বীকার করে। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ চলাকালে ইসরায়েল ইরান-সমর্থিত লক্ষ্যবস্তুতে শতাধিক বিমান হামলা চালায়, যাতে অস্ত্র এবং সামরিক সরঞ্জাম চরমপন্থীদের হাতে পড়ে না। সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে ইসরায়েলি বাহিনী অতিরিক্ত পদক্ষেপ নিতে শুরু করে। তবে তারা দামেস্কের দিকে অগ্রসর হওয়ার পরিকল্পনা অস্বীকার করেছে।
আশিকুর রহমান