ভারতীয় মিডিয়া
কখনো অন্তর্বর্তী সরকারকে নিয়ে আবার কখনো সংখ্যালঘু ইস্যুতে চলছে বাংলাদেশ বিরোধী অপপ্রচার। ফ্যাক্টচেকার প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, ভারতীয় মূলধারার গণমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যমে বাংলাদেশ সংক্রান্ত এইসব সংবাদের ৫০ শতাংশই ভূয়া। একটি চক্র জনমনে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির জন্যই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে চালাচ্ছে তথ্য সন্ত্রাস। আদিত্য মামুনের রিপোর্ট।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে ছড়ানো হচ্ছে একের পর এক গুজব বা ভুয়া খবর। এমন ভুয়া খবর প্রচারের তালিকায় দেশটির অন্তত ৪৯টি গণমাধ্যমের নাম উঠে এসেছে ফ্যাক্ট চেক বা তথ্য যাচাই সংস্থা রিউমার স্ক্যানারের এক প্রতিবেদনে।
রিউমার স্ক্যানার বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ভারতীয় গণমাধ্যমের এসব ভুয়া খবরবিষয়ক অনুসন্ধান প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, গত ১২ আগস্ট থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতের গণমাধ্যমে অন্তত ১৩টি ভুয়া খবর প্রচারিত হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতের গণমাধ্যম ‘রিপাবলিক বাংলা’ সর্বাধিক ৫টি গুজব প্রচার করেছে বলে জানিয়েছে রিউমার স্ক্যানার। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা হিন্দুস্তান টাইমস, জি নিউজ ও লাইভ মিন্ট অন্তত ৩টি করে গুজব প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া অন্তত দুটি করে গুজব প্রচার করেছে রিপাবলিক, ইন্ডিয়া টুডে, এবিপি আনন্দ এবং আজতক। বাকি ৪১টি গণমাধ্যম প্রচার করেছে অন্তত একটি করে গুজব।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব ভুল তথ্যের মধ্যে ছিল শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর তার নামে ভুয়া খোলা চিঠি, মুসলিম ব্যক্তির নিখোঁজ ছেলের সন্ধানে মানববন্ধন করার ভিডিওকে হিন্দু ব্যক্তির দাবিতে প্রচার, ড. মুহাম্মদ ইউনূস আইসিইউতে ভর্তি হওয়ার ভুয়া খবর, বাংলাদেশে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ভিত্তিহীন দাবি, ট্রাম্পের বিজয়ের পর ড. ইউনূস ফ্রান্সে পালিয়ে যাওয়ার ভুয়া দাবি, পাকিস্তানি জাহাজের মাধ্যমে অস্ত্র আনার মিথ্যা দাবি, নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে চিন্ময় কৃষ্ণের আইনজীবী হিসেবে প্রচার, বাংলাদেশে ভারতীয় চ্যানেল বন্ধ হওয়ার গুজব, বাংলাদেশে মুসলিমদের হামলায় হিন্দু মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুরের দাবিতে ভারতের প্রতিমা বিসর্জনের ভিডিও প্রচার, শ্যামলী পরিবহনের বাসে হামলার মিথ্যা তথ্য, চিন্ময় কৃষ্ণের আইনজীবীর ওপর হামলার ভুয়া দাবি এবং বাংলাদেশে জঙ্গি হামলা হতে পারে জানিয়ে যুক্তরাজ্যের ভ্রমণ সতর্কতা জারির বিভ্রান্তিকর খবর।
রিউমর স্ক্যানার বলেছে, এ তালিকা ভারতীয় গণমাধ্যমের অপতথ্য প্রচারের সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরে না। রিউমর স্ক্যানারের নজরে আসা গণমাধ্যমগুলোর যাচাইযোগ্য দাবিগুলোর তথ্যই শুধু এ তালিকায় তুলে ধরা হয়েছে।
যেসব ভুয়া তথ্য ছড়ানো হয়েছে
৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর শেখ হাসিনা দিল্লি থেকে জনগণের উদ্দেশে একটি খোলা চিঠি দিয়েছেন এবং ওই চিঠিতে তার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছেন দাবিতে ভারতীয় গণমাধ্যমে একটি তথ্য ছড়িয়ে পড়ে। তবে জানা যায় শেখ হাসিনা এমন কোনো চিঠি দেননি। রিউমার স্ক্যানারের অনুসন্ধানে উঠে আসে, এই চিঠিটি প্রথমে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে এবং পরবর্তী সময়ে ভারতের আগরতলাভিত্তিক দৈনিক ‘ত্রিপুরা ভবিষ্যৎ’ পত্রিকার প্রিন্ট সংস্করণে তারিখসহ প্রকাশিত হয়। এরপর ওই পত্রিকার স্ক্রিনশটটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে শেয়ার হতে থাকে এবং পরে ভারত ও বাংলাদেশের কয়েকটি গণমাধ্যমেও এটি প্রচারিত হয়।
শহীদ