ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

যেভাবে হিন্দুত্ববাদীরা ধ্বংস করেছিলো ভারতের ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ

প্রকাশিত: ২৩:৪০, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪

যেভাবে হিন্দুত্ববাদীরা ধ্বংস করেছিলো ভারতের ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ

১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলেন হিন্দুত্ববাদীরা। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায় ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ নিয়ে বহুকাল ধরেই বিতর্ক চলে আসছে। পনের শতকের ঐতিহাসিক স্থাপনা ৩২ বছর আগে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলেন হিন্দুত্ববাদীরা।

 

গত শতাব্দীর ছবিগুলোতে বাবরি মসজিদের যে অবয়ব দেখা যায়, সেই কাঠামো আর নেই। প্রাচীন স্থাপনার আদলে একই জায়গায় গড়ে উঠেছে আধুনিকতার ছোঁয়ায় নান্দনিক স্থাপনা। দেয়ালে দেয়ালে বসেছে কারুকাজ আর দেব-দেবীর প্রতিমূর্তি। আলোয় ঝলমলে স্থাপনার গম্বুজের মত চূড়াগুলোতে উড়ছে গেরুয়া পতাকা।

মুঘল সম্রাট বাবরের নামে প্রতিষ্ঠিত বাবরি মসজিদটি সম্রাটের সেনাপতি মীর বাকি নির্মাণ করেছিলেন বলে জনশ্রুতি আছে। মসজিদ নির্মাণের স্থানটিকে রামের জন্মভূমি বলে দাবি করে আসছেন অনেকে। একটি পুরনো মন্দির ভেঙে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল বলে তাদের দাবি।

 

এসব নিয়ে যুগের পর যুগ চলা বিতর্কের মধ্যে ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর হিন্দু ‘করসেবকরা’ পুরনো মসজিদটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। এই ঘটনাকে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রের ‘ভিতে আঘাত’ বলেই মনে করা হয়।

ওই ধ্বংসযজ্ঞ চালানোতে অংশ নিয়েছিলেন সান্তোষ দুবে নামে এক ব্যক্তি। সম্প্রতি তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘সেটি ছিল ধর্মীয় কাজ। আর এটি সম্পূর্ণ করার জন্যই পৃথিবীতে আমার আসা। এতে কোনো অপরাধ বা পাপ নেই।’

সান্তোষ নিজেও একজন ‘করসেবক’। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদে ধ্বংসে অংশ নেওয়া হাজারো ‘করসেবকদেরই’ একজন তিনি। আর সেই দিনটি ছিল স্বাধীন ভারতের অন্ধকারতম এক দিন, যা ঘিরে চলা বিতর্ক আর ধর্মীয় ফাটলে সৃষ্ট সহিংসতায় হাজারো মানুষের প্রাণ গেছে। ১৯৯২ সালে কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা মসজিদটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিলে উত্তেজনা দেখা দেয়। তখন দাঙ্গায় দুই হাজারের বেশি লোক নিহত হয়েছেন।

সান্তোষ দুবে বলেন, ‘তখন যদি আমরা সেটা (বাবরি মসজিদ ধ্বংস) না করতাম, এই মন্দির নির্মাণ হত না। সংবিধানের চেয়ে ধর্মীয় অনুভূতি বড়। আমি এখন চরম খুশি। আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম- যতক্ষণ না ভগবান রাম তার বাড়ি পাচ্ছেন, ততক্ষণ আমি আমার বাড়ি মেরামত করব না।’

বাবরি মসজিদ ভাাঙার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সান্তোষ দুবেসহ কয়েকডজন হিন্দুত্ববাদী জেল খেটেছেন, তবে তাদের কাউকেই দোষী সাব্যস্ত হতে হয়নি।ধ্বংসলীলা চালানোতে কোনো আইন ভঙ্গ হয়েছে বলে মনেও করেন না সান্তোষ।

তিনি বলেন, ‘যারা বলে মসজিদ ধ্বংসের সঙ্গে হিন্দুরা ছিল না, তারা গর্দভ। তারা ধর্মদ্রোহী, বামপন্থী, চরমপন্থী ও সন্ত্রাসবাদী। আমরা অন্য দেশে গিয়ে তাদের প্রার্থনা স্থল ধ্বংস করতে যাইনি। কিন্তু যদি তারা আমাদেরটা ধ্বংস করে, তাহলে সেটি ফিরিয়ে আনা আমাদের অধিকার।’

 

ভারত স্বাধীনতা পাওয়ার বছর দুয়েকের মাথায় ১৯৪৯ সালে বাবরি মসজিদের ভেতরে হঠাৎ রহস্যময়ভাবে ‘রামলালা’র (শিশু রামচন্দ্র) মূর্তি আবিষ্কৃত হয়। সেই সময় পর্যন্ত বাবরি মসজিদে নিয়মিত নামাজ আদায় করতেন মুসলিমরা। কিন্তু রামলালার ‘আবির্ভাবকে’ কেন্দ্রে করে বিতর্ক আর সহিংসতার আশঙ্কায় আদালতের নির্দেশে মসজিদের গেটগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়।

দীর্ঘ সময় পর ১৯৮৬ সালে মসজিদের দরজা আবার খুলে দেওয়া হয়। অনেকে মনে করেন, হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠদের সমর্থন পেতে তখন ক্ষমতাসীন কংগ্রেস সেটি খুলে দিয়েছিল।

 

ভারতের বর্তমান ক্ষমতাসীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ১৯৯০ সালে ছিল ছোট একটি রাজনৈতিক দল। তখন তারা হঠাৎ বাবরি মসজিদের স্থলে রাম মন্দির গড়ে তোলার গণপ্রচার শুরু করে।

 

তাবিব

×