ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১

আগ্রাসী হিন্দুত্ববাদী ভারত গড়তে চায় বিজেপি: ভারতীয় গণমাধ্যম

প্রকাশিত: ১০:৩২, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪

আগ্রাসী হিন্দুত্ববাদী ভারত গড়তে চায় বিজেপি: ভারতীয় গণমাধ্যম

ভারতের বর্তমান কূটনৈতিক অবস্থান নিয়ে দেশটির গণমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে। নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের উগ্র হিন্দুত্ববাদী নীতি এবং কূটনৈতিক ব্যর্থতার কারণে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের ঐতিহ্যবাহী সুসম্পর্ক নষ্ট হচ্ছে। সম্প্রতি ভারতের একটি টেলিভিশন চ্যানেলের আলোচনায় এসব বিষয় উঠে এসেছে।

আলোচনায় বলা হয়, ভারতের ঐতিহ্যবাহী পঞ্চশীলা নীতি, যা পারস্পরিক শ্রদ্ধা, আক্রমণ না করা, অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা, সমতা এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ওপর প্রতিষ্ঠিত, মোদি সরকারের শাসনামলে উপেক্ষিত হয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এক আগ্রাসী হিন্দুত্ববাদী ভারত গড়তে চায় বিজেপি ও আরএসএস। যার প্রভাব পড়েছে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কের ওপর।

পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক নিয়ে বলা হয়, কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আরও তিক্ত হয়েছে। সীমান্ত সংঘর্ষ এবং কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

চীনের সঙ্গে সীমান্ত বিরোধ নতুন করে উত্তপ্ত হয়েছে। লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় সংঘর্ষের ঘটনা এবং চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ভারতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চীনের সঙ্গে শীতল যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলেও জানানো হয়।

এদিকে, একসময় ঘনিষ্ঠ মিত্র ভূটানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কেও ফাটল ধরেছে। ভারতীয় নাগরিকদের ভূটানে অবাধ স্বাধীনতা সীমিত করে ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া ভূটানে চীনকে কৌশলগত মিত্র হিসেবে বিবেচনার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, যা ভারতের জন্য কূটনৈতিক পরাজয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

আলোচনায় উঠে আসে, নেপালের সঙ্গে সীমান্ত মানচিত্র নিয়ে বিরোধ এবং ভারতের অভ্যন্তরীণ হস্তক্ষেপে নেপালি জনগণের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে। মোদীর আগ্রাসী নীতির কারণে দুই দেশের ঐতিহাসিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

মালদ্বীপে চীনপন্থী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু ক্ষমতায় আসার পর ভারতের প্রভাব কমেছে। চীনের ক্রমবর্ধমান কূটনৈতিক প্রভাবের কারণে ভারত এখানেও কার্যত ব্যর্থ হয়েছে।

শ্রীলঙ্কায় মার্কসবাদী কমিউনিস্টদের ফিরে আসায় ভারতের কূটনৈতিক অবস্থান নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। বরং চীনের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ভারতের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আলোচনায় উঠে আসে সম্প্রতি শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক জটিল হবার বিষয়টিও। পলাতক শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার ঘটনায় দুই দেশের জনগণের মধ্যে বিশ্বাসের সংকট তৈরি হয়েছে।

এছাড়াও আফগানিস্তানে তালেবান সরকারের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করলেও ভারতের অবস্থান এখানে দুর্বল।

ভারতীয় গণমাধ্যমটির মতে, পঞ্চশীলার নীতি মেনে চললে প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা সম্ভব হত। কিন্তু আরএসএস প্রভাবিত ও বিজেপি নেতৃত্বাধীন মোদি সরকারের উগ্র হিন্দুত্ববাদী নীতি ও অদূরদর্শিতার কারণে দেশটি চারপাশে শত্রু তৈরি করছে।

মেহেদী কাউসার

×