ছবি: সংগৃহীত।
পৃথিবীর সমস্ত প্রাণের শক্তির একমাত্র উৎস হচ্ছে সূর্যের আলো। পুরো পৃথিবী যখন একদিকে, চীন তখন অন্যদিকে। বিশ্বের দীর্ঘতম সেতু নির্মাণ হোক কিংবা অল্প সময়ে নতুন শহর গড়ে তোলা—চীন সবসময়ই প্রমাণ করেছে, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তাদের ধারেকাছেও কেউ নেই। এ ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। চীন এবার সূর্যের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে, সমুদ্রের বুকে তৈরি করেছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ওপেন-সি সোলার ফার্ম। এই প্রকল্পে তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করছে পাকিস্তান। দুই দেশ একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করছে। জানা গেছে, চীন সমুদ্রের তীরে নয়, বরং সমুদ্রের মাঝে স্থাপন করেছে বিশ্বের বৃহত্তম ওপেন-সি সোলার ফার্ম।
প্রশ্ন উঠতে পারে, চীন কেন সমুদ্রের তীরে নয়, সমুদ্রের মাঝে সোলার ফার্ম তৈরি করছে? এর মূল কারণ হলো, চীনটিতে জমির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সুতরাং তারা ফসলি জমি নষ্ট না করে, সমুদ্র তীরের ওপর এই সোলার ফার্মগুলো স্থাপন করছে। চীন এই সোলার ফার্মগুলো এমনভাবে নির্মাণ করেছে, যাতে সমুদ্রের কঠোর আবহাওয়া সত্ত্বেও সেগুলো সহজেই টিকে থাকতে পারে। এজন্য তারা অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে।
এদিকে, পাকিস্তানে দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে নবায়নযোগ্য ও পরিবেশবান্ধব সৌর বিদ্যুতের চাহিদা। বর্তমানে সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তান অন্যতম। এর পেছনে মূল কারণ হচ্ছে চীনের সাশ্রয়ী এবং উন্নত সোলার প্যানেলগুলোর সরবরাহ।
জার্মান ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম ডয়েচে ভেলে জানিয়েছে, চলতি বছর পাকিস্তানে সোলার প্যানেল থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ ১৭ গিগাওয়াটে পৌঁছাবে, যা দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের এক তৃতীয়াংশের সমান। মাত্র এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে এ ধরণের ব্যাপক উল্লম্ফন ঘটেছে।
এ বিষয়ে ব্রিটিশ থিংকট্যাঙ্ক সংস্থা অ্যাম্বারের বিশ্লেষক ডেভ জোনস বলেন, পাকিস্তানে সোলার প্যানেল বসানোর গতি এবং সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহারের যে পরিমাণ বৃদ্ধি ঘটেছে, তা পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে দেখা যায়নি।
পাকিস্তানের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর ঘাটতি, ঘন ঘন লোডশেডিং, দুর্বল অবকাঠামো এবং বিদ্যুতের উচ্চমূল্যের কারণে দেশটির সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণী সৌর বিদ্যুতে ঝুঁকছেন। এ ক্ষেত্রে চীনা কোম্পানির তৈরি সাশ্রয়ী সোলার প্যানেলই প্রধান সহায়ক শক্তি হয়ে উঠেছে। বর্তমানে পাকিস্তানজুড়ে ঘরবাড়ি, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও কারখানার ছাদে সৌর প্যানেলের বিশাল সমারোহ দেখা যাচ্ছে।
পাকিস্তানে এই 'সৌর বিপ্লব' সম্ভব হয়েছে চীনের সহজলভ্য প্রযুক্তির কল্যাণে। গত ১৫ বছরে ইসলামাবাদ সোলার প্যানেলের দাম প্রায় ৯০ শতাংশ কমিয়েছে। বিশ্বের শীর্ষ সোলার প্যানেল উৎপাদক দেশ চীন এখন পাকিস্তানে সাশ্রয়ী মূল্যে প্যানেল রপ্তানি করছে। এর ফলে পাকিস্তানের বিদ্যুৎ খাত এখন এক নতুন দিগন্তের দিকে এগোচ্ছে, যেখানে সৌর বিদ্যুৎ আর শুধু এক বিকল্প শক্তির উৎস নয়, বরং একটি শক্তিশালী এবং টেকসই সমাধান হয়ে উঠেছে।
নুসরাত