ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

অলৌকিক চিকিৎসায় ১৫ মাস ধরে গর্ভবতী!

প্রকাশিত: ১৫:১৫, ১ ডিসেম্বর ২০২৪

অলৌকিক চিকিৎসায় ১৫ মাস ধরে গর্ভবতী!

গর্ভবতী নারী

মাতৃত্ব নিয়ে দুর্নীতি। সন্তানসুখ পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে লাখ লাখ টাকার ব্যবসা পেতে বসেছে জালিয়াতিরা। ভুয়া চিকিৎসক সেজে একের পর অবৈধ ক্লিনিক তৈরি করে রমরমা ব্যবসা শুরু হয়েছে নাইজিরিয়া জুড়ে।

বিবিসির একটি সাম্প্রতিক রিপোর্টে উঠে এসেছে, মাতৃত্ব নিয়ে জালিয়াতি চক্র চলছে আফ্রিকার ওই দেশে। জালিয়াতিরা ‘অলৌকিক চিকিৎসা’র প্রতিশ্রুতি দিয়ে নারীদের, বিশেষত যারা সন্তান ধারণে অক্ষম তাদের প্রলুব্ধ করছে।

এসব নারী সন্তানের আশায় মোটা টাকা দিয়ে এই ফাঁদে পা দিচ্ছেন বলে বিবিসির রিপোর্টে বলা হয়েছে। অবৈধ ক্লিনিকগুলোতে মিথ্যা গর্ভধারণের মাধ্যমে মহিলাদের আর্থিক ও শারীরিকভাবে নিগ্রহ করা হচ্ছে। ক্লিনিকগুলির মাধ্যমে শিশু পাচারের ব্যবসা চলছে বলেও অভিযোগ।

বিবিসি আফ্রিকার একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাইজিরিয়ায় এমন একটি চক্রের সন্ধান মিলেছে যারা সন্তানধারণে অক্ষম সেই সব নারীদের সঙ্গে প্রতারণা চালিয়ে আসছে।

নাইজিরিয়ার এমনিতেই জন্মহার উঁচুর দিকে। তাই যে সব নারী সন্তানের জন্ম দিতে পারছেন না, তাঁদের উপর সামাজিক চাপ যথেষ্ট। বন্ধ্যাত্বের কলঙ্ক এড়াতে তাঁদের অনেকেই মরিয়া হয়ে এই সব ক্লিনিকের শরণাপন্ন হচ্ছেন।

বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বিবিসির পক্ষ থেকে দু’জন দম্পতি সেজে সেই অসাধু চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ক্লিনিকের পক্ষ থেকে তাঁদের বলা হয় একটি গোপন চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে নারীদের গর্ভবতী করা সম্ভব। চিকিৎসা করাতে ইচ্ছুক নারীদের একটি ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। নির্দিষ্ট একটি পানীয় খাওয়ানো হয়। এর পর তাঁদের শরীরে কিছু তরলও প্রবেশ করানো হয় বলে জানা গিয়েছে। এসব পদার্থ শরীরে যাওয়ার ফলে স্ফীতোদর তৈরি হয় এবং এতেই বোঝানো হয় তারা গর্ভবতী। ভুয়া চিকিৎসকেরা এই নারীরও গর্ভাবস্থা পরীক্ষা করাতে হাসপাতালে যেতে বা অন্য পরীক্ষা করাতেও নিষেধ করেন বলে বিবিসি জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সব অবৈধ ক্লিনিকে আসা মহিলারা প্রায় ১৫ মাস ধরে গর্ভে সন্তান ধারণ করেছিলেন বলে দাবি করেছেন। কারণ তাঁদের বিশ্বাস করানো হয়েছিল, যে ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি তাদের উপর প্রয়োগ করা হয়েছে তা অলৌকিক। তাই এতটা সময় ধরে তাঁদের সন্তান বহন করতে হবে।

নকল প্রসবের সময় নির্ধারিত করার পর নারীদের বিরল এবং ব্যয়বহুল ওষুধ কিনতে বলা হয়। ক্লিনিকের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, এই সব ওষুধ ছাড়া প্রসব করানো সম্ভব হবে না। দম্পতি ওষুধের জন্য টাকা দিতে সম্মত হলে জাল চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচারের নামে নারীকে অজ্ঞান করেন।

প্রসব করানোর অছিলায় নারীদের শরীরে অস্ত্রোপচারের মতো একটি চিহ্ন তৈরি করে দেন ভুয়া চিকিৎসকেরা। এই ধরনের মাতৃত্ব যারা অনুভব করেছেন তারা বলেছেন, এই সময়ে এমন একটি ইঞ্জেকশন দেওয়া হয় যাতে তারা আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। সেই সময় তাদের বিশ্বাস করানো হয় যে তারা যেন সত্যিই সন্তান প্রসব করছেন। এই সব জাল ক্লিনিকগুলিতে সরকারি ধরপাকড় অভিযান চালানোর পর আরও একটি ভয়ঙ্কর সত্য সামনে এসেছে, যা হল শিশু কেনাবেচা।

নকল প্রসূতিদের সন্তান হিসাবে যাদের হাজির করা হয় সেই শিশুগুলিকে অন্য মায়ের কোল থেকে ছিনিয়ে আনা হয় বলে দাবি করা হয়েছে ওই রিপোর্টে। পুলিশি অভিযানের পরে ক্লিনিকগুলি থেকে কয়েক জন মহিলাকে উদ্ধার করা হয়। অভিযোগ, এঁদের আটকে রাখা হয়েছিল। এঁদের মধ্যে কয়েক জন নাবালিকা।

এই নারীদের থেকে নবজাতকদের কেড়ে নেওয়া হয়েছিল বলেও অভিযোগ। এই নবজাতকদেরই প্রসূতি মহিলাদের সন্তান হিসাবে উপস্থাপন করা হয়। প্রতারকেরা সাধারণত আর্থিক ভাবে দুর্বল, অল্পবয়সী মেয়েদের টাকার টোপ দিয়ে তাঁদের সন্তান বিক্রিতে বাধ্য করে বলে জানা গিয়েছে।

এম হাসান

×