ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

কাশ্মীরে বিনা কারণে মুসলিমদের উপর সেনা নির্যাতনের অভিযোগ

প্রকাশিত: ১১:১১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪

কাশ্মীরে বিনা কারণে মুসলিমদের উপর সেনা নির্যাতনের অভিযোগ

জম্মু ও কাশ্মীরের প্রত্যন্ত কিস্তোয়ার জেলার একটি গ্রাম, কওয়াতে চারজন শ্রমিককে সেনাবাহিনীর রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের ক্যাম্পে নিয়ে  নৃশংসভাবে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।

গ্রামের প্রবেশমুখে ভারতের জাতীয় পতাকা উড়লেও, এমন একটি এলাকায় এই ঘটনা ঘটল যা সেনাবাহিনীর সঙ্গে দীর্ঘকালীন ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে এসেছে। ঘটনাটি এমন সময়ে ঘটেছে যখন উপত্যকায় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা বাড়ছে।
গত ২০ নভেম্বর সকাল ১০টায় সেনা ক্যাম্প থেকে ফোনে ডাকা হয় গ্রামবাসী মেহরাজ-উদ-দিন (৪০), সাজাদ আহমেদ (৩৩), আবদুল কাবির (৩৫), এবং মুশতাক আহমেদ (৩৬)-কে। ক্যাম্পটি গ্রাম থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দূরে।

ফোন পেয়ে “ভীতিহীনভাবে” সেখানে যান তারা।গ্রামের একজন বাসিন্দা, দাউদ আহমেদ জানিয়েছেন, “তারা প্রকৃত দেশপ্রেমিক। সেনাবাহিনী তাদের সাহায্যের জন্য ডাকলে, তারা দেরি করেনি।” কিন্তু ক্যাম্পে পৌঁছানোর পর, তাদের “ঘণ্টার পর ঘণ্টা” মারধর করা হয়। সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা ফিরে না আসায়, পরিবারের লোকজন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে।

গ্রামের একজন কাঠমিস্ত্রি, ইরশাদ আহমেদ, ক্যাম্পে গিয়ে তাদের রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পান। সাজাদ আহমেদসহ চারজনের শরীরে কালশিটে দাগ ও রক্তক্ষরণের চিহ্ন ছিল।
গুরুতর আহত শ্রমিকদের প্রথমে সেনা ও পুলিশের বাধার কারণে কিস্তোয়ারের সিভিল হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হয়নি। পরে সেনা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেনাবাহিনী প্রতিটি পরিবারের জন্য ২৫,০০০ টাকা ক্ষতিপূরণ ও চিকিৎসার আশ্বাস দেয়।
গ্রামবাসীরা অভিযোগ করেছেন, এটি একটি পূর্বপরিকল্পিত ঘটনা। তারা বলেছেন, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জম্মু ও কাশ্মীরের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সমর্থনে ভোট না দেওয়ার জন্য সেনাবাহিনী নির্দিষ্ট একটি তালিকা থেকে এই নির্যাতন চালিয়েছে।

একজন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা বিষয়টি ব্রিগেডিয়ারের কাছে উত্থাপন করেন এবং তিন সেনাসদস্যের কোর্ট মার্শালের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানান।
জম্মু ও কাশ্মীরে সেনাবাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নতুন নয়। ১৯৯০ সাল থেকে কার্যকর সশস্ত্র বাহিনী বিশেষ ক্ষমতা আইন সেনাবাহিনীকে অপরাধমূলক বিচার থেকে রক্ষা করে আসছে। তবে সম্প্রতি সেনাবাহিনী একটি "মানবাধিকার সেল" গঠন করেছে।
চার শ্রমিকের পরিবার সেনাবাহিনীর ভুল স্বীকার ও প্রতিশ্রুতির কারণে “আপোষ” করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মুশতাক আহমেদের বাবা আবদুল রশিদ বলেন, “এটি সেনাবাহিনী এবং গ্রামবাসীদের উভয়ের জন্য মঙ্গলজনক সিদ্ধান্ত।”
এই ঘটনা শুধু নির্যাতন ও ক্ষোভের গল্প নয়, এটি জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষের দৈনন্দিন বাস্তবতা ও তাদের অস্তিত্বের লড়াইয়ের একটি প্রতিচ্ছবি।

সূত্র: আর্টিকেল ১৪

নাহিদা

×