ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে চটেছেন দেশটির জনগণ। তারা ইসরাইলের পার্লামেন্ট নেসেটে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর কার্যালয় অবরোধ করেন। বৃহস্পতিবার টাইমস অব ইসরাইলের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আটক রয়েছেন ইসরাইলি জিম্মিরা। তাদের স্বজনেরা নেতানিয়াহুর নেসেট অফিসের প্রবেশপথ অবরোধ করেছে। জিম্মিদের ফেরাতে গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির দাবিতে তারা এ অবরোধ করেন। লেবাননের প্রতিরোধ যোদ্ধা হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরাইলের যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর এ বিক্ষোভ পালিত হয়। ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামীদের সংগঠন হামাসের হামলায় বন্দি হওয়া জিম্মিদের একজন এলি আলবাগ বলেন, নেতানিয়াহু লেবাননে যেভাবে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছেন ঠিক সেভাবে গাজাতেও চুক্তি করতে হবে। তিনি বলেন, আপনি যদি চান তাহলে আপনি এটি করতে পারেন। আমরা আপনার অনুগ্রহ আশা করছি। নেসেট নিরাপত্তাকর্মীরা পরে তাদের সরিয়ে দেন। এরপর তারা নিচে নেমে সিঁড়ি অবরোধ করেন। জায়গাটিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সভা ও সংবাদ সম্মেলন করে থাকে। জিম্মিদের স্বজনদের একজন শারাবি বলেন, আমরা এমন সময় যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছেছি যখন উত্তরের বাসিন্দা এবং ইসরাইলি নাগরিকদের জন্য এখনো স্পষ্ট বিপদ রয়েছে। ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এখনো হিজবুল্লাহর সক্ষমতা নিঃশেষ করতে পারেনি। তিনি আরও বলেন, এখন আমাদের গাজা থেকে ফিরে আসা এবং প্রয়োজনমতো গাজায় আবারও ফিরে যাওয়া সম্ভব। তবে সবার আগে আমাদের জিম্মিদের দেশে ফেরাতে হবে। গাজায় এক বছর ধরে হামলা চালিয়ে আসছে ইসরাইল। দেশটির অব্যাহত এ হামলায় সৃষ্ট ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করতে অন্তত ১৫ বছর সময় লাগবে। এ জন্য প্রতিদিন ১০০টি লরি ব্যবহার করতে হবে। জাতিসংঘের হিসাবমতে, গাজায় ভবন ধসে এ পর্যন্ত ৪২ মিলিয়ন টনেরও বেশি ধ্বংসস্তূপ জমা হয়েছে। এ ধ্বংসস্তূপগুলো যদি একসঙ্গে এক জায়গায় রাখা যায়, তাহলে তা মিসরের ১১টি গ্রেট পিরামিডের সমান হবে। এ ধ্বংসস্তূপ সরাতে ব্যয় হবে ৫০০ থেকে ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ইউএন এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রামের হিসাব অনুসারে, গাজায় ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৯৭টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা অঞ্চলটির মোট ভবনের অর্ধেকের বেশি। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের মধ্যে এক-চতুর্থাংশ পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এ ছাড়া এক-দশমাংশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এক-তৃতীয়াংশ বেশ খানিকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ভবনের ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে ফেলার জন্য ২৫০ থেকে ৫০০ হেক্টর জমির প্রয়োজন পড়বে।
উল্লেখ্য, হিজবুল্লাহ ও ইসরাইলের মধ্যে এক বছরের বেশি সময় ধরে লড়াইয়ে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হওয়ার পর বুধবার স্থানীয় সময় ভোর চারটার দিকে দুপক্ষের যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। লেবানন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে অনেক প্রাণহানির পাশাপাশি ইসরাইল ও লেবাননের লাখ লাখ মানুষ ঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বাধ্য হয়েছেন। ইসরাইল-হিজবুল্লাহর যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে ইরান। বুধবার দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় জানায়, লেবাননে ইসরাইলের আগ্রাসন বন্ধের খবরকে স্বাগত জানায় তেহরান। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাই এক বিবৃতিতে হিজবুল্লাহর প্রতি দৃঢ় সমর্থনের কথাও ব্যক্ত করেছেন। লেবাননে যুদ্ধবিরতিকে বিজয় হিসেবে উল্লাস শুরু করেছেন সেখানকার বাসিন্দারা। যুদ্ধবিরতি চুক্তি ঘোষণার পর লেবাননে বাস্তুচ্যুত বাসিন্দারা নিজেদের এলাকাগুলোতে ফিরে আসতে শুরু করেছে।
গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবি ইসরাইলিদের
নেতানিয়াহুর কার্যালয় অবরোধ
শীর্ষ সংবাদ: