রাজকুমারী আবিদা সুলতান।
ভারতবর্ষের ইতিহাসে বহু প্রভাবশালী নারী কথা উল্লেখ রয়েছে। তবে তাদের মধ্যে আবিদা সুলতানের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। একজন বিদ্রোহী রাজকুমারী হিসেবে তিনি প্রচলিত ধারণা এবং সমাজের রীতিনীতিকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। আবিদা সুলতান, ভোপালের শেষ নবাব হামিদুল্লাহ খানের মেয়ে।
একেবারে শৈশব থেকেই সমাজের প্রচলিত ধারণা আর রীতিনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছিলেন এই রাজকন্যা। সাহসী জীবনধারা ও কৃতিত্বের সঙ্গে শাসন পরিচালনা অনন্য ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছিল তাঁকে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ১৯ শতকের এই মুসলিম রাজকন্যার জীবনধারা।
আবিদা সুলতানের জন্ম ১৯১৩ সালে। ছোটবেলা থেকেই আবিদার জীবনধারা আর দশজনের থেকে আলাদা ছিল। তিনি দক্ষ শিকারি ছিলেন, ছোট করে চুল ছাটতেন, পোলো খেলতেন, উড়োজাহাজ চালিয়েছেন এমনকি মাত্র ৯ বছর বয়সেই রোলস-রয়েস চালান আবিদা। পরবর্তীতে রাজনীতিবিদ হিসেবেও দক্ষতার পরিচয় দেন তিনি।
তিনি নারীদের জন্য প্রচলিত পর্দার প্রথা মানতে অস্বীকৃতি জানান এবং মাত্র ১৫ বছর বয়সে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হন। ব্রিটিশ ভারতের উত্তর প্রদেশের রাজ্য ভোপালের বেগমদের সাহসী ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় তিনি নারীদের জন্য প্রতিষ্ঠিত সামাজিক রীতিকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন।
আবিদা সুলতানের শৈশব কাটে দাদির তত্ত্বাবধানে ও কঠোর অনুশাসনে।যেখানে তিনি কোরআন পাঠ থেকে শুরু করে ঘোড়ায় চড়া, সংগীত শেখা, এবং বাড়ির কাজ পর্যন্ত শিখেছিলেন।তিনি বলতেন, "আমাদের কোনো লিঙ্গগত পার্থক্য শেখানো হয়নি।আমরা ছেলেদের মতোই স্বাধীন ছিলাম।"
১৩ বছর বয়সে পুরদার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তিনি তার জীবনের বাকিটা সময় এই প্রথা মেনে চলেননি। মাত্র ১২ বছর বয়সে তার বিয়ে হয় কুরওয়াই রাজ্যের শাসক সারওয়ার আলি খানের সঙ্গে। তবে এই বিয়ে দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।তার বিবাহিত জীবনের অভিজ্ঞতা তার আত্মজীবনীতে স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
বিয়ের বিচ্ছেদের পর তিনি ভোপালে ফিরে আসেন তার ছেলেকে নিয়ে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় তিনি হিন্দু-মুসলমান সম্পর্কের অবনতির প্রত্যক্ষদর্শী হন।দেশভাগের পর ক্রমবর্ধমান সাম্প্রদায়িক বৈষম্যের কারণে তিনি ১৯৫০ সালে পাকিস্তানে চলে যান। সেখানে তিনি গণতন্ত্র ও নারীর অধিকারের জন্য কাজ করেন।
১৯৩৫ থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত রাজ্যের মন্ত্রিসভা পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন আবিদা। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় হিন্দু- মুসলিম সম্পর্কের চরম অবনতির প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন আবিদা সুলতান। দেশভাগের পর ক্রমবর্ধমান সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার জেরে ১৯৫০ সালে একমাত্র ছেলেকে নিয়ে পাকিস্তানে চলে যান তিনি। আবিদা পাকিস্তান চলে যাওয়ার পর তাঁর বোন ভোপালের দায়িত্ব নেন।
পাকিস্তানে গণতন্ত্র ও রাজনীতিতে নারীর অধিকারের জন্য কাজ করেন আবিদা। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত পাকিস্তানেই ছিলেন। ২০০২ সালে করাচিতে মৃত্যু হয় তাঁর। আবিদা সুলতান না থাকলেও ভোপালের মানুষ তাঁকে মনে রেখেছে।
সূত্রঃ বিবিসি।
রিয়াদ