সংগৃহীত ছবি।
ইউক্রেন এর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য রাশিয়ায় হাজার হাজার সেনা পাঠাচ্ছে উত্তর কোরিয়া। এমন খবরে গেল অক্টোবর থেকে নতুন করে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে যুদ্ধ উত্তেজনা। প্রশ্ন ওঠে, কিয়েভ-মস্কোর লড়াইয়ের মাঝে ঠিক কোন স্বার্থে সরাসরি জড়িয়ে পড়ল পিয়ংইয়ং?
এমন রহস্যে উদ্বিগ্ন হতে দেখা যায় ইউক্রেন সহ তার মিত্রদের। এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ গবেষণা সংস্থা ওপেন সোর্স সেন্টারের দাবি, চলতি বছরের মার্চ থেকে নভেম্বর পর্যন্ত উত্তর কোরিয়া থেকে ১০ লাখ বেরেলের বেশি তেল সরবরাহ করেছে রাশিয়া।
এর জন্য উত্তর কোরিয়ার তেলবাহি ট্যাংকার গুলো অন্তত ৪৩ বার রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলে থাকা বন্দরে ভিড়েছে। স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবি থেকে এসব দাবি করেছে ওপেন সোর্স সেন্টার।
প্রমাণ হিসেবে আরো দুটি ট্যাঙ্কারের ছবি গণমাধ্যমে তুলে ধরেছে এই সংস্থাটি। এতে দেখা যায়, রাশিয়ায় খালি ট্যাংকার পাঠিয়ে তাতে তেল ভর্তি করে নিয়ে যাচ্ছে উত্তর কোরিয়া।
ইউক্রেনের চলমান যুদ্ধে রাশিয়ার সহায়তা করতে উত্তর কোরিয়া অস্ত্র ও সেনা পাঠানোর মাধ্যমে সাহায্য করছে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র সচিব ডেভিড ল্যামি। তিনি বলেছেন, তেল বিনিময়ে রাশিয়া ক্রমবর্ধমানভাবে উত্তর কোরিয়ার ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠছে। কোরীয় উপদ্বীপ, ইউরোপ এবং ইন্দো-প্যাসিফিকের নিরাপত্তার ওপর এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে।
এর আগেও যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়া অভিযোগ করেছে যে, উত্তর কোরিয়া রাশিয়াকে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য ১০ হাজারেরও বেশি সৈন্য পাঠিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পিয়ংইয়ং রাশিয়ার সহায়তায় প্রযুক্তির উন্নয়ন ও যুদ্ধের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চেয়েছিল, যা বর্তমানে সম্ভব হচ্ছে।
এছাড়া, এই "সেনা-তেল" বিনিময়ের প্রক্রিয়া জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার পরিষ্কার লঙ্ঘন। উত্তর কোরিয়ার কাছে তেল বিক্রি নিষিদ্ধ, যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি রোধ করার জন্যই করা হয়েছিল। তবে, স্যাটেলাইট চিত্র অনুযায়ী, গত আট মাসে এক ডজনেরও বেশি ট্যাঙ্কার খালি আসলেও পরবর্তীতে পূর্ণ হয়ে ফিরেছে।
ওপেন সোর্স সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৭ মার্চ থেকে প্রথম তেল পাঠাতে শুরু করে রাশিয়া, এবং সাত মাস পর পিয়ংইয়ং মস্কোকে অস্ত্র পাঠাতে শুরু করেছে। সম্প্রতি, ৫ নভেম্বর উত্তর কোরিয়ার হাজার হাজার সৈন্য রাশিয়ায় যুদ্ধের জন্য পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে ওপেন সোর্স সেন্টারের জো বায়ারন বলেন, "কিম জং উন, ভ্লাদিমির পুতিনকে তার যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য একটি লাইফলাইন প্রদান করেছেন, আর রাশিয়া নীরবে উত্তর কোরিয়াকেও তার জন্য একটি সমান লাইফলাইন দিয়েছে। তেলের অবিচলিত প্রবাহ উত্তর কোরিয়াকে একটি স্থিতিশীলতা স্তরে পৌঁছে দিয়েছে।"
জাতিসংঘের এক প্যানেলের সাবেক চার সদস্য বিবিসিকে বলেছেন, এই তেল ও সেনা বিনিময় মস্কো এবং পিয়ংইয়ংয়ের সম্পর্কের আরও গভীর হওয়ার প্রমাণ।
উত্তর কোরিয়া বিশ্বের একমাত্র দেশ, যাদের খোলাবাজারে তেল কেনার অনুমতি নেই। জাতিসংঘ প্রতি বছর পাঁচ লাখ ব্যারেল তেল সরবরাহের অনুমতি দিলেও, এটি দেশটির প্রয়োজনীয় পরিমাণের চেয়ে অনেক কম।
এদিকে, রাশিয়া এবং উত্তর কোরিয়া দু’দেশই জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার আওতাধীন। কিম জং উনের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি ও রাশিয়ার ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য এই নিষেধাজ্ঞা প্রণীত। গত মাসে, উত্তর কোরিয়ার সৈন্যদের রাশিয়ায় মোতায়েন করার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, পুতিন পশ্চিমের ইউক্রেনকে সমর্থন করার সমালোচনা করে প্রশ্নটি এড়িয়ে যান।
এই পরিস্থিতি, জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের মধ্য দিয়ে, বিশ্বের জন্য নতুন এক নিরাপত্তার ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে।
নুসরাত