ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

ইউক্রেন সংঘাত বিশ্বযুদ্ধের দিকে এগোচ্ছে ॥ পুতিন

প্রকাশিত: ২০:৪৩, ২২ নভেম্বর ২০২৪

ইউক্রেন সংঘাত বিশ্বযুদ্ধের দিকে এগোচ্ছে ॥ পুতিন

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন বলেছেন, ইউক্রেন সংঘাত এখন একটি আঞ্চলিক যুদ্ধ থেকে বৈশ্বিক সংঘাতে পরিণত হওয়ার পথে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ইউক্রেনকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে তাদের অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার পর এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বৃহস্পতিবার তিনি পশ্চিমাদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, রাশিয়া পাল্টা আঘাত করতে প্রস্তুত। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
পুতিন বলেছেন, রাশিয়া ইতোমধ্যে একটি নতুন ধরনের মাঝারি পাল্লার হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ইউক্রেনের একটি সামরিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। ভবিষ্যতে আরও এমন আক্রমণ হতে পারে। তবে তিনি জানান, এসব আঘাতের আগে বেসামরিক জনগণকে সতর্ক করা হবে।
পুতিন বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের অনুমোদনে ইউক্রেন নভেম্বরের ১৯ তারিখে ছয়টি এএটিএসএমএস এবং ২১ নভেম্বর ব্রিটিশ স্টর্ম শ্যাডো ও মার্কিন হিমার্স ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ায় হামলা চালায়। তিনি বলেন, এরপর থেকেই আঞ্চলিক সংঘাত বৈশ্বিক রূপ নিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকে একটি বৈশ্বিক সংঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। পুতিন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, যদি আগ্রাসী কার্যক্রম বৃদ্ধি পায়, আমরা সমানভাবে প্রতিক্রিয়া জানাব।
পুতিন বলেন, যেসব দেশ তাদের অস্ত্র আমাদের সামরিক স্থাপনায় ব্যবহারের অনুমতি দিচ্ছে, তাদের সামরিক স্থাপনাগুলোতে আঘাত করার অধিকার রাশিয়ার রয়েছে। কেউ যদি এটি নিয়ে সন্দেহ করে, তবে তারা ভুল করছে। এর প্রতিক্রিয়া অবশ্যই হবে।
রাশিয়াকে জবাব দিতে বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান জেলেনস্কির : ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়া ডিনিপ্রোতে নতুন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহার করেছে। এটি যুদ্ধ বৃদ্ধির স্পষ্ট এবং গুরুতর উস্কানি। তারা শান্তি চায় না। এখনই বিশ্বকে এর জবাব দিতে হবে। বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববাসীর উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে জেলেনস্কি এ আহ্বান জানান। এর আগে তিনি রাশিয়ার বিরুদ্ধে আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ তুলে বক্তব্য দেন।
জেলেনস্কি বলেন, পুতিন চীন, ব্রাজিল, ইউরোপীয় দেশ, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যদের আহ্বানকে উপেক্ষা করেন। তিনি এক হাজার দিন আগে শুরু হওয়া সংঘাতকে দীর্ঘায়িত করার জন্য সবকিছুই করছেন। বিশ্বকে অবশ্যই এবার প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে। কারণ, রাশিয়ার আক্রমণের কঠোর প্রতিক্রিয়ার অভাব তাদের কাছে একটি বার্তা পাঠায় যে, এই ধরনের আচরণ বিশ্বের কাছে গ্রহণযোগ্য। রাশিয়াকে অবশ্যই সত্যিকারের শান্তি স্থাপনে বাধ্য করতে হবে, যা কেবল শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমেই অর্জন করা যেতে পারে। অন্যথায়, অবিরাম রুশ হামলা, হুমকি এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হবে। এ পরিস্থিতি শুধু ইউক্রেনই ভোগ করবে না। সারা বিশ্বের বিরুদ্ধে পুতিন ব্যবস্থা নিতে পারেন বলে ইঙ্গিত করেন জেলেনস্কি।
উত্তেজনা বৃদ্ধির জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করলেন কিম : উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন কোরীয় উপদ্বীপে উত্তেজনা ও উস্কানি বৃদ্ধির জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, কোরীয় উপদ্বীপ কখনো এতটা বিপজ্জনক পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকির মুখে পড়েনি। শুক্রবার উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম কেসিএনএ এ তথ্য জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার পিয়ংইয়ংয়ে একটি সামরিক প্রদর্শনীতে বক্তব্য দেন কিম। সেখানে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পূর্ববর্তী আলোচনার অভিজ্ঞতা ওয়াশিংটনের ‘আক্রমণাত্মক ও শত্রুতাপূর্ণ’ নীতির বিষয়টি স্পষ্ট করেছে।
কিম বলেন, কোরীয় উপদ্বীপে যুদ্ধরত পক্ষগুলো কখনো এতটা তীব্র ও বিপজ্জনক সংঘাতের মুখোমুখি হয়নি, যা ধ্বংসাত্মক থার্মোনিউক্লিয়ার যুদ্ধে রূপ নিতে পারে।
এদিকে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাশিয়া এক মিলিয়ন ব্যারেলের বেশি তেল উত্তর কোরিয়াকে সরবরাহ করেছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক একটি অলাভজনক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওপেন সোর্স সেন্টার। গোষ্ঠীটি স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করে জানায়, রাশিয়া এই বছরের মার্চ থেকে উত্তর কোরিয়াকে এক মিলিয়ন ব্যারেলের বেশি তেল সরবরাহ করেছে বলে অনুমান করা হয়েছে। শুক্রবার ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়।
উল্লেখ্য, বিশ্বের একমাত্র দেশ উত্তর কোরিয়ার খোলা বাজারে তেল কেনার অনুমতি নেই। জাতিসংঘ দেশটির জন্য বছরে ৫ লাখ ব্যারেল তেল পাওয়ার নিয়ম করে দিয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেকটাই কম।
বিবিসি আরও জানায়, ওপেন সোর্স সেন্টারের গবেষণায় উঠে এসেছে রাশিয়া উত্তর কোরিয়াকে প্রথম তেল সরবরাহ করে চলতি বছরের ৭ মার্চ। এর ৭ মাস পরেই পিয়ংইয়ং মস্কোতে অস্ত্র ও সৈন্য পাঠায়।
ইউক্রেনে রুশ ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহার উদ্বেগজনক ॥ জাতিসংঘ : ইউক্রেনে নতুন এক মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। দেশটির প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, পরীক্ষামূলকভাবে এই ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। তবে, নতুন এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা যুদ্ধ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ দিকে ধাবিত হবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র। শুক্রবার এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এ তথ্য জানায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সংঘাত কমাতে সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে গুতেরেসের মুখপাত্র স্টেফান দুজারিক বলেন,  নতুন এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বেশ উদ্বেগজনক। এই হামলার প্রভাব অনেক ভয়াবহ হতে পারে। সেই সঙ্গে যুদ্ধকে ভুল পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আন্তর্জাতিক আইন মেনে যুদ্ধ বন্ধের জন্য জাতিসংঘ প্রধান আন্তোনিও গুতেরেসের আহ্বানের পুনরাবৃত্তি করেছেন এবং উভয়পক্ষকে বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষার জন্য, বেসামরিক স্থাপনা বা বেসামরিক অবকাঠামোতে হামলা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

×