অ্যান্টি এয়ারক্রাফট ট্যাংক। ছবি: বিবিসি থেকে
ইউক্রেন যুদ্ধ এক হাজার দিন পার হলেও বন্ধের কোন ইঙ্গিত মিলেনি। উত্তপ্ত হচ্ছে পরিস্থিতি, বাড়ছে পরমাণু হামলার আশঙ্কা। ইউরোপের দেশগুলোতে একে একে বন্ধ হচ্ছে ইউক্রেনের দূতাবাস। একদিকে রাশিয়ার বড় আকারের হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। অন্যদিকে আতঙ্কে থমথমে ইউক্রেন।
পরিস্থিতি যে দিকে মোর নিচ্ছে তাতে আরও অনেক দেশের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার শঙ্কা বাড়ছে। সেটাই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ডেকে আনতে পারে বলে মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা।
রাশিয়ার হামলার আশঙ্কায় ইউক্রেনে অবস্থিত নিজেদের দূতাবাস সাময়িকভাবে বন্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া, দূতাবাস বন্ধ করে দিয়েছে স্পেন, গ্রীস ও ইতালি সহ আরও কয়েকটি দেশ। সিএনএন জানিয়েছে, দূতাবাস এলাকায় বেশ কয়েকবার বিমান হামলার সাইরেন বেজেছে। এরই মধ্যে কর্মচারী-কর্মকর্তাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তিনটি দূতাবাসই তাদের ওয়েবসাইটে দেওয়া বিবৃতিতে বন্ধের একই কারণ উল্লেখ করেছে।
জরুরি পরিস্থতিতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে যে হট লাইন থাকে সেটিও সচল নেই। চরম বৈরিতার মধ্যেও বিভিন্ন দেশ হট লাইন চালু রাখে। বুঝাই যাচ্ছে, এখন ঘটে যেতে পারে বড় কোন হামলার ঘটনা।
সম্প্রতি আরেকটি বড় পরিবর্তন ঘটিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। তারা ইউক্রেনকে মনুষ্যবিহীন মাইন সরবরাহ করার অনুমতি দিয়েছেন। ফলে পূর্ব ইউরোপে বাড়ছে পরমাণু হামলার শঙ্কা। এই মাইন ইউক্রেনের ভেতরেই ব্যবহার করতে হবে। যদিও জনসংখ্যা অধ্যুষিত এলাকায় ব্যবহার করতে পারবে না প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির বাহিনী।
ইউক্রেনের ওপর একটি নো ফ্লাই জোন আরোপের জন্য যখন নেটোর ওপর চাপ দেয়া হচ্ছিল, তখন সেটা নাকচ করে দিয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছিলেন, এটা করতে গেলে যুক্তরাষ্ট্র আর রাশিয়াকে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে যেতে হবে। তার মানে হচ্ছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ।
একই আশঙ্কা শোনা যাচ্ছে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখে, যখন নেটো ইউক্রেনে তাদের অস্ত্রের চালান আরও বাড়াচ্ছে। ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রি কুলেবা বলছেন, মিস্টার লাভরভ আসলে পশ্চিমাদের ভয় দেখাতে চাইছেন, কারণ রুশরা বুঝতে পারছে তারা পরাজিত হতে যাচ্ছে ।
রাশিয়ায় মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র ‘আর্মি ট্যাকটিক্যাল মিসাইল সিস্টেম’ (এটিএসিএমএস) দিয়ে হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। এতে তেমন হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও এই হামলা উত্তেজনা ছড়িয়েছে।
বিদায় বেলায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ায় হামলা চালাতে কিয়েভকে সবুজ সংকেত দেওয়ার পর আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি। এ সম্পর্কিত খবর আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে আসার ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইউক্রেন প্রথমবারের মতো রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলা করেছে।
এই হামলা হয় বলে রাশিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়। জো বাইডেনের ওই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় মস্কো সোমবার বলেছিল, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ইউক্রেন যদি সত্যিই মার্কিন দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ায় হামলা চালায় তাহলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঝুঁকি বেড়ে যাবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের পরপরই চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে রুশ বাহিনীকে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিন বছর ধরে চলা এ যুদ্ধে এই প্রথম এমন অনুমতি দিলেন তিনি। দুই চিরশত্রু যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার পাল্টাপাল্টি এসব সিদ্ধান্তে ইউক্রেন যুদ্ধ এক নতুন মোড় নিতে চলেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সূত্র: বিবিসি ও সিএনএন।
এসআর