পুরুষ আন্দোলনের তিন নারী : বাঁদিক থেকে দীপিকা, নন্দিনী, রোজম্যারি
মিজ. কিনুথিয়া বলছিলেন, “আমার ছোটবেলা কেটেছে বাবা আর দুই ভাইয়ের সান্নিধ্যে। মা অন্য জায়গায় থাকতেন। যে অঞ্চলে আমি বড় হয়েছি, সেটা নানা ধরণের অপরাধমূলক কাজের জন্য কুখ্যাত ছিল।
“আমারা বাবা মারা যান ২০১৬ সালে। কাজ থেকে অবসর নেওয়ার পরে তাকে যে মানসিক অশান্তির মধ্যে দিয়ে হয়েছে, সেটা আমি দেখেছি কাছ থেকে। আফ্রিকায় পুরুষরা তো কখনও মুখ ফুটে বলে না তাদের মানসিক যন্ত্রণার কথা। তাই বাবা চলে যাওয়ার বছরেই আমি ঠিক করি যে পুরুষদের জন্য কিছু করতে হবে আমাকে। চাকরি ছেড়ে দিই আমি, জানাচ্ছিলেন মিজ. কিনুথিয়া।
দিল্লির বাসিন্দা দীপিকা নারায়ণ ভরদ্বাজ একজন সাংবাদিক ও তথ্যচিত্র নির্মাতা। “পুরুষ অধিকার আন্দোলনে আমরা জড়িয়ে পড়া একটা ব্যক্তিগত ঘটনার মাধ্যমে। আমার এক কাজিনের বিয়েটা ভেঙ্গে যায় মাত্র মাস তিনেকের মধ্যে। তার সেই প্রাক্তন স্ত্রী আমাদের পরিবারের বিরুদ্ধে বধূ-নির্যাতনের মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেন। এমন কি আমিও নাকি তাকে নিয়মিত মারধর করতাম, এরকম মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করা হয়,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন মিজ. ভরদ্বাজ।
“আদালতের বাইরে অনেক অর্থ দিয়ে সেই বিষয়টি আমরা মিটিয়ে নিই। ওই মামলার ব্যাপারেই আমি যখন নানা জায়গায় যাতায়াত করি, তখনই বুঝতে পারি যে পুরুষরা যখন নির্যাতনের শিকার হবেন, তাদের জন্য সেরকম কোনও আইনি সুরক্ষাই নেই! সেই থেকেই আমার কাজের শুরু। মার্টার্স অফ ম্যারেজ (বিবাহের শহীদ) নামে আমি একটি তথ্যচিত্র তৈরি করি। সেখানে বধূ-নির্যাতনের মিথ্যা অভিযোগে কীভাবে বহু পুরুষের জীবন শেষ হয়ে গেছে, সেই কাহিনী তুলে ধরেছিলাম,বলছিলেন দীপিকা নারায়ণ ভরদ্বাজ।
“আমি অবশ্য কোনও ব্যক্তিগত ঘটনার কারণে এই আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ি নি, বলছিলেন অল বেঙ্গল মেনস্ ফোরামের প্রধান নন্দিনী ভট্টাচার্য।
তার কথায়, “আমার চারপাশে সব সময়ে নানা ঘটনা দেখতাম যা থেকে আমার মনে হত যে পুরুষদের অবস্থাটা বেশ সঙ্গিন। প্রথমে তারা তো মা এবং স্ত্রীর চাপে একটা খুব দ্বিধাগ্রস্ত অবস্থায় থাকেন। এরপর তার যদি পুত্র সন্তান থাকে, তার বিয়ের পরে যখন সেই পুরুষটি শ্বশুর হন, তখন নিজের স্ত্রী এবং পুত্রবধূর চাপ পড়ে পরিবারের প্রধান পুরুষটির ওপরে।
“অনেক ক্ষেত্রেই যেন বিনা দোষে দোষী বলে দাগিয়ে দেওয়া হয় পুরুষদের। যেমন ভিড় বাসে যদি ঝাঁকুনির কারণেও কোনও নারীর গায়ে ছোঁয়া লাগে, তাহলে তিনি ভেবে নেবেন যে পুরুষটি তার শরীর ছুঁতে চাইছেন। অফিসে কোনও নারীকে যদি কিছু বলেন আমি এটাই দেখে এসেছি যে পুরুষটি জনরোষের শিকার হয়ে যান। ভীষণ একপেশে মনে হত ব্যাপারটা। সমাজে, চারপাশে এগুলো দেখতে দেখতেই আমার পুরুষ অধিকার আন্দোলনে জড়িয়ে পড়া,”বলছিলেন নন্দিনী ভট্টাচার্য।
সূত্র: বিবিসি
শহিদ