ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

কেন খ্রিস্টানরা ট্রাম্পকে ঈশ্বরের আশীর্বাদপ্রাপ্ত মনে করে?

প্রকাশিত: ২২:৩৩, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

কেন খ্রিস্টানরা ট্রাম্পকে ঈশ্বরের আশীর্বাদপ্রাপ্ত মনে করে?

নির্বাচনের রাতে ফ্লোরিডার একটি কনভেনশন সেন্টারে দাঁড়িয়ে, পেছনে সারি সারি মার্কিন পতাকা এবং উচ্ছ্বসিত জনতার সামনে ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন, “অনেকেই বলেছেন যে ঈশ্বর আমার জীবন বাঁচিয়েছেন একটি বিশেষ কারণে, আর তা হলো আমাদের দেশকে রক্ষা করা এবং আমেরিকার গৌরব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।”

ট্রাম্পের এই বক্তব্য তার নির্বাচনী প্রচারের অন্যতম বড় বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। তিনি দাবি করেন, ঈশ্বর তাকে বেছে নিয়েছেন। তবে তার জীবনের ওপর ১৩ জুলাই পেনসিলভানিয়ার বাটলার শহরে হামলার আগেই মিলিয়ন মিলিয়ন আমেরিকান বিশ্বাস করতেন, ট্রাম্প তাদের ঈশ্বরপ্রদত্ত নেতা।

অনেক সমর্থক নির্বাচনী লড়াইকে ‘ধর্মীয় যুদ্ধে’ রূপান্তরিত করে ট্রাম্পকে বাইবেলের নায়ক হিসেবে উপস্থাপন করেন।

খ্রিস্টানদের বিশ্বাস ও ট্রাম্পের অবস্থান
বিশিষ্ট টেলিভিশন প্রচারক হ্যাঙ্ক কানম্যান একবার বলেন, “ট্রাম্পের ওপর এমন কিছু আছে যা শত্রুরা ভয় পায় এটি তার ‘ঈশ্বরপ্রদত্ত শক্তি’।”

অভিনেতা জিম কেভিজেল, যিনি মেল গিবসনের দ্য প্যাশন অব দ্য ক্রাইস্ট সিনেমায় যিশুর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, মজা করে ট্রাম্পকে “নতুন মূসা” বলে অভিহিত করেন।

কেন ট্রাম্পকে 'ত্রাণকর্তা' মনে করা হয়?
বিখ্যাত ধর্মপ্রচারক বিলি গ্রাহামের ছেলে ফ্র্যাঙ্কলিন গ্রাহাম বলেন, “ঈশ্বর ট্রাম্পকে বাঁচিয়েছেন বিশেষ একটি উদ্দেশ্যে। গুলিটি তার মস্তিষ্কের মাত্র এক মিলিমিটার দূর দিয়ে গেছে। আমি বিশ্বাস করি ঈশ্বর তার মাথা ঘুরিয়ে তাকে বাঁচিয়েছেন।”

অনেক সমর্থক বিশ্বাস করেন, ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে সুপ্রিম কোর্টে রক্ষণশীল বিচারকদের নিয়োগ খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের জন্য বড় একটি সাফল্য।

ধর্মের প্রভাব ও যুক্তরাষ্ট্রের খ্রিস্টানদের সংকট
যুক্তরাষ্ট্রে ধর্মীয় অনুগতদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাচ্ছে। পিউ রিসার্চ সেন্টারের মতে, ১৯৯০-এর দশকে প্রায় ৯০% প্রাপ্তবয়স্ক আমেরিকান খ্রিস্টান ছিলেন। এটি এখন ৬৪%-এ নেমে এসেছে।

ধর্মীয় নেতা রবার্ট জোনস বলেন, “ট্রাম্প জানতেন যে খ্রিস্টান সম্প্রদায় দুর্বল হয়ে পড়ছে এবং তাদের সন্তানরা আর গির্জার সঙ্গে যুক্ত নয়। তিনি তাদের প্রতিশ্রুতি দেন যে তিনি খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের শক্তি পুনরুদ্ধার করবেন।”

ভিন্নমত ও সমালোচনা
তবে, সবাই ট্রাম্পের সঙ্গে একমত নন। আটলান্টার বাইবেল ওয়েজ মিনিস্ট্রিজের রেভারেন্ড মন্টে নরউড বলেন, “ট্রাম্প এমন একজন নেতা যিনি সংখ্যালঘু, নারীদের, অভিবাসীদের এবং প্রতিবন্ধীদের প্রতি অসম্মান দেখিয়েছেন। এই ধরণের আচরণ খ্রিস্টান মূল্যবোধের বিরোধী।”

যুক্তরাষ্ট্রে ধর্মের ভবিষ্যৎ
ধর্মতত্ত্ববিদরা মনে করেন, ট্রাম্প খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের শক্তি বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দিলেও মার্কিন সমাজের ধর্মহীনতার বৃদ্ধি রোধ করতে পারবেন না।

যদিও ফ্র্যাঙ্কলিন গ্রাহাম আশাবাদী যে ট্রাম্প ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবেন। তবে, এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রে খ্রিস্টান এবং অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের জন্য কীভাবে প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলে দেবে।

সূত্র: বিবিসি

নাহিদা

×