সাধারণ মানুষ।
নির্বাচন এলেই আমজনতার আর্থিক উন্নতির কথা বলে প্রতিশ্রুতির বন্যা শাসক-বিরোধী দুই গোষ্ঠীর। কিন্তু বাস্তবে কোথায় দাঁড়িয়ে আছে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ? কতটা ভালো হয়েছে মধ্যবিত্তদের অবস্থা? এই নিয়ে যুক্তি ও পাল্টা যুক্তির শেষ নেই।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, আর্থিক সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা নিয়ে থাকে মধ্যবিত্ত শ্রেণি। আর তাই এই শ্রেণিকে অর্থনীতির শিরদাঁড়া বলে মানেন তারা। ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারতকে উন্নত অর্থনীতির দেশে পরিণত করার ক্ষেত্রে এই শ্রেণির বড় ভূমিকা থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এখন প্রশ্ন হলো মধ্যবিত্ত কারা? আর্থ-সামাজিক শ্রেণিবিন্যাসের ক্ষেত্রে মধ্যবর্তী শ্রেণির বাসিন্দাদের অর্থনীতির পরিভাষায় মধ্যবিত্ত বলা হয়। পেশা, আয়, শিক্ষা, প্রয়োজনীয় পণ্য কেনার সামর্থ্য এবং সামাজিক অবস্থানের দ্বারা এদের সংজ্ঞায়িত করা হয়। একজন ব্যক্তির দৈনিক আয় কত হলে তাকে মধ্যবিত্ত বলা যাবে, তা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে।
বিশ্ব ব্যাংক এবং অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কোঅপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ওইসিডি) রিপোর্ট অনুযায়ী, দিনে ২.১৫ ডলারের নীচে আয় করা ব্যক্তিদের গরিব শ্রেণিতে ফেলা হয়েছে। যারা দৈনিক আড়াই ডলারের বেশি রোজগার করছেন, তাদের নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির তকমা দিয়েছে এই দুই প্রতিষ্ঠান।
ভারতের নীতি আয়োগ অবশ্য এ রকম কোনও আর্থ-সামাজিক শ্রেণিবিন্যাস করেনি। তবে বিভিন্ন সময়ে মধ্যবিত্ত কাদের বলা হবে, তা নিয়ে ইঙ্গিত দিয়েছে এই কেন্দ্রীয় সংস্থা। তাদের দাবি, বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতিতে মাসে ২০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় করা ব্যক্তিকে নিম্ন মধ্যবিত্ত বলতে হবে।
অন্যদিকে, মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে পড়বেন মাসে ৪০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা রোজগার করা মানুষ। আর এক লাখের চেয়ে বেশি মাসিক আয়ের ব্যক্তিদের উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে রেখেছে নীতি আয়োগ। এই হিসাব শহরের আর্থিক অবস্থার কথা মাথায় রেখে করা হয়েছে।
অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা পিউ রিসার্চ বলেছে, দিনে ১০ থেকে ৫০ ডলার আয় করলে তাকে মধ্যবিত্ত বলতে হবে। দৈনিক ৫০ ডলারের বেশি আয়ের ব্যক্তিদের উচ্চ মধ্যবিত্তর তকমা দিয়েছে পিউ রিসার্চ।
পিপল্স রিসার্চ অন ইন্ডিয়াজ কনজিউমার ইকোনমি বা প্রাইস আবার বলেছে, মধ্যবিত্তর সংজ্ঞা নির্দিষ্ট আর্থিক আয়ের উপর ভিত্তি করে সব সময়ে দেওয়া সম্ভব নয়। তবে মোটামুটি ভাবে যদি কোনও ব্যক্তির মাসিক রোজগার ১.০৯ লাখ থেকে ৬.৪৬ টাকার মধ্যে হয়, তবে তাকে মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে রাখা যেতে পারে।
মধ্যবিত্তের শ্রেণিবিন্যাস শুধুমাত্র আর্থিক ভাবে করা হয়েছে, এটা ভাবলে ভুল হবে। সামাজিক ভাবেও এটিকে ভাগ করেছেন গবেষকেরা। সেই তালিকার প্রথমেই রয়েছে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি। যাদের নির্দিষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতা, বিভিন্ন কাজের প্রশিক্ষণ এবং স্থায়ী চাকরি রয়েছে।
দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়বেন ঐতিহ্যগত মধ্যবিত্তেরা। ছোট ব্যবসায়ী, কৃষক এবং শিল্প সংস্কৃতি জগতের সঙ্গে জড়িতদের এই শ্রেণিতে রাখা হয়েছে। এই শ্রেণির মধ্যবিত্তেরা পারিবারিক ঐতিহ্য মেনে বংশপরম্পরায় একই ধরনের রোজগার ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত থাকেন। এই তালিকার একেবারে শেষ শ্রেণিতে উদীয়মান মধ্যবিত্তদের রাখা হয়েছে। এই শ্রেণির বাসিন্দারা শহরে থাকতে এবং উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করতে ভালবাসেন। পাশাপাশি, ভোগ্যপণ্য কেনার দিকে এদের মারাত্মক ঝোঁক রয়েছে, যা দেশের অর্থনীতির চাকা ঘোরানোর ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নিতে পারে।
এম হাসান