ভারতের শীর্ষ আদালত 'বুলডোজার ন্যায়বিচার'-কে নিষিদ্ধ করেছে। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, শুধুমাত্র কাউকে অপরাধী বলে অভিযুক্ত করার জন্য কারো বাড়ি-ঘর ভাঙা যাবে না এবং এর জন্য কড়া নির্দেশিকা প্রণয়ন করা হয়েছে।
এই রায় আসে বিভিন্ন আবেদনকারীর দায়ের করা একটি পিটিশনের প্রেক্ষিতে, যেখানে অভিযুক্তদের বাড়িঘর ভেঙে ফেলার শাস্তিমূলক ব্যবহারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের দাবি জানানো হয়েছিল।
সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, “সরকার বিচারকের ভূমিকা নিতে পারে না এবং সম্পত্তি ধ্বংস করতে পারে না। ভবন ভাঙার এমন ভীতিকর দৃশ্য আইনের শাসনের ঘাটতিকে প্রকাশ করে।” আদালত নির্দেশ দিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে আদেশের চ্যালেঞ্জ করার বা সম্পত্তি খালি করার জন্য পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে।
এর আগে, ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যে, বিশেষ করে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে বাড়ি-ঘর ধ্বংসের প্রক্রিয়া চালু ছিল।
বিশেষজ্ঞরা এই ধ্বংসযজ্ঞের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং বলছেন এর কোনো আইনগত ভিত্তি নেই।
যদিও হিন্দু পরিবারের বাড়িও ভেঙে ফেলা হয়েছে, এসব ধ্বংসযজ্ঞ মূলত মুসলিম সম্প্রদায়কে টার্গেট করছে, বিশেষ করে ধর্মীয় সহিংসতা বা প্রতিবাদের পর, বিরোধী নেতা ও অধিকার কর্মীরা বলেছেন।
বিজেপি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে, তবে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের অংশ হিসেবে এই ধ্বংসযজ্ঞকে তুলে ধরেছেন।
আদালত বলেছে, "এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও স্বেচ্ছাচারী পদক্ষেপগুলো একটি সাংবিধানিক গণতন্ত্রে কোনো স্থান পায় না।" যারা “আইন নিজের হাতে নিয়েছে” তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছে আদালত।
আদালত নির্দেশ দিয়েছে যে, কোনো সম্পত্তি অবৈধ হলে সেটি ধ্বংসের আগে অন্তত ১৫ দিনের নোটিশ দিতে হবে এবং নোটিশে ধ্বংসের কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে। অভিযুক্ত যদি ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিক্রিয়া না দেন, তবে কর্তৃপক্ষ ধ্বংস প্রক্রিয়া চালাতে পারবে তবে এর ভিডিও ধারণ করতে হবে। এই নির্দেশনা লঙ্ঘন করলে আদালত অবমাননার অভিযোগ করা হবে বলেও আদালত জানিয়েছে।
মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল রায়টিকে স্বাগত জানিয়েছে এবং বলেছে, এটি প্রয়োজনীয় হলেও অনেক দেরিতে এসেছে। তাদের মতে, এটি মানুষের অধিকার সংরক্ষণের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
নাহিদা