যে কারণে মার্কিন প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণে দেরি হয়
যুক্তরাষ্ট্রের এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ঐতিহাসিকভাবে বিজয়ী হয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাস থেকে শুরু করে পরবর্তী চার বছরের জন্য রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকবেন তিনি। কিন্তু ভোটগ্রহণের পর এত দেরি কেন হয় প্রেসিডেন্টের শপথ নিতে?
এর কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের মতো এমন সুনির্দিষ্ট নিয়ম পৃথিবীর আর কোনো দেশেই নেই। আমেরিকার সাধারণ নির্বাচন থেকে শুরু করে নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণসহ প্রতিটি ধাপই সুনির্দিষ্ট।
১৯৩৭ সালের আগে মার্কিন প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটি হত ৪ মার্চ। ১৯৩৭ সালের ২০ জানুয়ারি প্রথম কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট। সেটা ছিল রুজভেল্টের দ্বিতীয় মেয়াদ। প্রথম মেয়াদে ১৯৩৩ সালে রুজভেল্ট শপথ নিয়েছিলেন ৪ মার্চ। ১৭৮৯ সালের সংবিধানের ধারাবাহিকতা মেনে সব মার্কিন প্রেসিডেন্টই ৪ মার্চ তারিখে শপথ নিয়েছেন।
তবে ২০তম সংবিধান অনুসারে, নভেম্বরে নির্বাচনের পর নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ নেওয়া পর্যন্ত সোয়া দুই মাসের বিরতি রাখা হয়। এর আগে নির্বাচনের পর ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে শপথ গ্রহণের জন্য চার মাসের একটা সময় রাখা হতো। কিন্তু সমস্যা হয় ১৮৬১ সালে। সে বছর মার্চ মাসে আব্রাহাম লিঙ্কন ক্ষমতা গ্রহণ করতে করতে চলমান গৃহযুদ্ধে মার্কিন পক্ষের পরাজয় প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল।
এই একই অবস্থার মুখোমুখি হতে হয়েছিল সাত দশক পর ১৯৩৩ সালেও। মহামন্দার সেই সময়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট হার্বার্ট হুভারের কাছ থেকে ক্ষমতা নেন রুজভেল্ট। অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে, মানুষ উদগ্রীব হয়ে শুধু ক্ষমতা হস্তান্তরের অপেক্ষা করছিল। সেই বছরই প্রথম এই দীর্ঘ বিরতি একটা বড় সমস্যা হিসেবে সামনে হাজির হয়।
এসব কারণে সংবিধানের ২০তম সংশোধনীতে নির্বাচনের পর ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় কমিয়ে আনা হয়। যেখানে নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেকের দিন হিসেবে ২০ জানুয়ারির কথা বলা হয়। সংশোধনী অনুযায়ী, ৩ নভেম্বরের নির্বাচনের পরের বছরের ২০ জানুয়ারি দুপুরে নতুন প্রেসিডেন্ট শপথ নেবেন। আর এর মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের নির্বাহী প্রধান হিসেবে অভিষিক্ত হবেন তিনি। অর্থাৎ, ঐদিন বেলা ১১টা ৫৯ মিনিট ৫৯ সেকেন্ড পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট। সেই সময় থেকে কংগ্রেসের নতুন অধিবেশনও মার্চের পরিবর্তে ৩ জানুয়ারি শুরু হয়।
মার্কিন নির্বাচনের রীতি অনুযায়ী, যে প্রার্থী সব থেকে বেশি ভোট পাবেন, তিনিই যে জয়ী হবেন, এমন নিশ্চয়তা নেই। এর কারণ হলো ভোটাররা সরাসরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন না। ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ নামে এক পদ্ধতিতে হয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা যখন নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দেবেন, বেশিরভাগই হয় ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস অথবা রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভোট দেবেন।
তবে এদের দুজনের মধ্যে কে জয়ী হবেন, সেটা ভোটারদের দেওয়া ভোটে সরাসরি নির্ধারিত হবে না। জাতীয় স্তরের নির্বাচনি লড়াইয়ের বদলে জয়ী-পরাজিত নির্ধারিত হবে একেকটি অঙ্গরাজ্যের নির্বাচনি লড়াইয়ের মাধ্যমে। যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের একটিতে জয়ী হওয়ার অর্থ একজন প্রার্থী সেই অঙ্গরাজ্যের সবকটি ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ ভোট পেয়ে যাবেন।
ইলেক্টোরাল কলেজের মোট ভোটের সংখ্যা ৫৩৮। মাইন ও নেব্রাসকা এই দুটো অঙ্গরাজ্য বাদে বাকি সবগুলো রাজ্যের ইলেকটোরাল ভোট যোগ দিয়ে যে প্রার্থী ২৭০টি বা তারও বেশি ভোট পাবেন তিনিই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন।
প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের বেশ কয়েকটি ইলেক্টোরাল ভোট থাকে, যা ওই অঙ্গরাজ্যের জনসংখ্যার মোটামুটিভাবে সমানুপাতিক হয়। সেই প্রার্থীর রানিং মেট হয়ে যাবেন ভাইস-প্রেসিডেন্ট।
তাসমিম