ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১

ট্রাম্পের জয়ে নয়া মেরুকরণ

প্রকাশিত: ২১:৫৩, ৮ নভেম্বর ২০২৪

ট্রাম্পের জয়ে নয়া মেরুকরণ

.

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয় পাওয়ায় পাল্টে যাচ্ছে বিশ্বের রাজনীতি ও অর্থনীতির হিসাব। এরই মধ্যে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বিশ্ব ব্যবস্থায়। প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে নয়া সমীকরণ। এতে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে বিশ্ব নেতাদের। বিশ্লেষকরা মনে করছেন ট্রাম্পের এই শাসনামলে বাণিজ্য যুদ্ধ নতুন করে শুরু হতে পারে।
বাতিল হচ্ছে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব
যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ডে জন্মগ্রহণ করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে দেশটির নাগরিকত্বপ্রাপ্তির যে আইন বা বিধি এতদিন প্রচলিত ছিল, তা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প। ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্সের প্রচারাভিযান সংক্রান্ত দাপ্তরিক সাইটে জানানো হয়েছে এ তথ্য।
তিনি বলেছেন, নতুন প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সেসব ভূমিষ্ঠ শিশুকেই স্বয়ংক্রিয় নাগরিকত্ব প্রদান করা হবে, যাদের পিতা কিংবা মাতা অর্থাৎ অন্তত একজন অভিভাবকের মার্কিন নাগরিকত্ব বা দেশটিতে বসবাসের বৈধ অনুমোদন রয়েছে।
দাপ্তরিক সাইটে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, “যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ডে জন্ম নেওয়া কোনো শিশুর স্বয়ংক্রিয়ভাবে নাগরিকত্ব প্রাপ্তির জন্য ওই শিশুর পিতা কিংবা মাতা যে কোনো একজনের নাগরিক হওয়া বা যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে বসবাসের অনুমোদন থাকা জরুরি। অবিলম্বের দেশের কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোকে এই নির্দেশনা পাঠানো হবে।”
আগামী ২০ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং জে ডি ভ্যান্স। ওই দিন থেকেই এই নির্দেশনা কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে সাইটে।
মার্কিন নাগরিকত্ব-গ্রিনকার্ড অর্জনের একটি সহজ এবং জনপ্রিয় পথ মার্কিন ভূখণ্ডে সন্তান জন্মদান। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী কোনো শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়া মাত্র তাকে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে গণ্য করা হয় এবং ওই শিশুর বয়স ১৮ পার হওয়ার আগ পর্যন্ত তাকে বড় করা এবং দেখাশোনা করার জন্য তার পিতা-মাতাকে বৈধভাবে বসবাসের অনুমতি দেওয়া হয়। আর একবার বৈধ বসবাসের অনুমতি পেলে নাগরিকত্ব ও গ্রিনকার্ড প্রাপ্তির পথও অনেক সহজ হয়। ফলে ট্রাম্পের এই নির্দেশনা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী বৈধ কাগজপত্র ও নথিবিহীন অভিবাসীদের জন্য একটি বড় ধাক্কা। পিউ রিসার্চ সেন্টারের শুমারির তথ্য বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে বাসব করছেন ১১ লাখ ৮৭ হাজার ৮১৬ জন অভিবাসী। এই অভিবাসীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশেরই বৈধ নথি নেই।
জলবায়ু সম্মেলনে প্রভাব
বার্ষিক আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলন ‘কপ ২৯’ এ ফের দুশ্চিন্তার কালো মেঘ দেখা দিয়েছে। আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে সম্মেলন শুরুর ঠিক আগমুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের এই পালাবদল হুট করে আট বছর আগের স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে। সংশয়ের কারণ, আট বছর আগে ২০১৬ সালের নভেম্বরে মরক্কোর মারাকেশে বসেছিল বার্ষিক জলবায়ু সম্মেলন। সম্মেলন শুরু হয়েছিল ট্রাম্পের জয়ের খবর দিয়ে। উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছিল সর্বত্র। কারণ, নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্প বারবার জলবায়ু পরিবর্তন ও সেই সম্পর্কিত আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তাকে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, জলবায়ু আন্দোলন এক ‘ব্যয়বহুল ধাপ্পাবাজি’। যুক্তিহীন, অহেতুক এবং সেটা ‘চীনের স্বার্থে চীনাদের তৈরি’। এসব মন্তব্য ছাপিয়ে বড় হয়ে উঠেছিল তার ঘোষণা। বলেছিলেন, প্যারিস চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র বেরিয়ে আসবে।
সেই ঘোষণা মারাকেশে সমবেত আন্দোলনকর্মীদের মনে যে হতাশার সৃষ্টি করেছিল, সম্ভবত তারই পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে। আগামী সোমবার থেকে সেখানে শুরু হতে চলেছে ‘কপ ২৯’। কে জানে, তিনি প্যারিস চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার ঘোষণা দ্বিতীয়বারের মতো দেবেন কি না। কিন্তু গত চার বছরের অর্জন যে তিনি নষ্ট করে দিতে পারেন, সেই শঙ্কা বাকু সম্মেলনজুড়েই থাকবে।
যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে কমেছে অভিবাসী
মেক্সিকো হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর একমাত্র পথ মার্কিন-মেক্সিকো সীমান্তে দিন দিন অভিবাসীদের সংখ্যা বৃদ্ধির খবর এলেও এবার ঘটেছে উল্টো ঘটনা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ের পর এই সীমান্তে অভিবাসীর সংখ্যা কমে প্রায় অর্ধেক হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারের সময় ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবৈধ অভিবাসীদের বিতাড়িত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
এক প্রতিবেদনে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে মেক্সিকো দিয়ে ভ্রমণকারী হাজার হাজার অভিবাসীর সংখ্যা বৃহস্পতিবার প্রায় আশ্চর্যজনকভাবে অর্ধেক কমে গিয়েছিল। মঙ্গলবারের নির্বাচনে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিজয়ের খবরে অনেক অভিবাসীই এই দেশে তাদের সম্ভাবনা নিয়ে সন্দিহান।

×