ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১

ক্যাপিটল হিলে হামলার ঘটনার পর এই বিজয় ছিল অকল্পনীয়

ট্রাম্পের রাজকীয় প্রত্যাবর্তন

নাজিম মাহমুদ

প্রকাশিত: ২২:২০, ৬ নভেম্বর ২০২৪

ট্রাম্পের রাজকীয় প্রত্যাবর্তন

বুধবার ওয়েস্ট পাম বিচের বাড়িতে স্ত্রী মেলানিয়ার সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্প

রাজকীয় প্রত্যাবর্তন। ৭৮ বছর বয়সে অনন্য নজির গড়ে ফের মার্কিন প্রেসিডেন্ট হলেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। অপরদিকে যুদ্ধই কাল হলো ডেমোক্র্যাটদের। ঝানু আইনজীবী কমলা হ্যারিস বিশাল ব্যবধানে ধরাশায়ী হলেন রিপাবলিকান প্রার্থীর কাছে। এবারের নির্বাচনে পরাজিত হলে ট্রাম্পের জন্য জেল অবধারিত ছিল। তবে তা আর হচ্ছে না। এই জয়ের মাধ্যমে ১৩০ বছরের রেকর্ড ভেঙে হোয়াইট হাউজে পা রাখছেন এই ধনকুবের।   
আধুনিক আমেরিকার ইতিহাস খুঁজলে দেখা যাবে, অতীতে মাত্র এক বারই একজন প্রেসিডেন্ট ভোটে পরাজিত হয়েও পরে নির্বাচনে জয়ী হয়ে হোয়াইট হাউসে গিয়েছিলেন। ট্রাম্পের বেলায়ও তাই হলো। এর আগে গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড এভাবে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। 
মার্কিন প্রেসিডেন্ট হতে কোনো প্রার্থীকে ২৭০ ইলেক্টোরাল ভোটের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করতে হয়। ট্রাম্প পেয়েছেন মোট ৫৩৮ ভোটের মধ্যে ২৭৯টি। কমলা পেয়েছেন ২৩৩ ইলেক্টোরাল ভোট। শুধু তাই নয়, পপুলার ভোটেও কমলাকে বিশাল ব্যবধানে পেছনে ফেলে ৪৭তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হয়েছেন তিনি। ফল প্রকাশের পরই বিশ্ব নেতাদের অভিনন্দন বার্তায় ভাসছেন ট্রাম্প।   
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই জয়ের পেছনে কাজ করেছে ডেমোক্র্যাটদের যুদ্ধবাজ নীতি। এবারের নির্বাচনে ৭টি দোদুল্যমান বা রণক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত রাজ্যগুলোর ভোটারদের অবদান ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মার্কিন ভোটারদের অনেকেই মনে করেন, কমলা হ্যারিস ও বাইডেনের দল আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের মদতদাতা। মধ্যপ্রাচ্যে সংকট, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, সুদানে গৃহযুদ্ধ এবং ইউরোপসহ বিশ্বের বেশকিছু অঞ্চলে সংঘাতময় পরিস্থিতির জন্য তারাই দায়ী। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর পরিচালিত জরিপেও এই বিষয়টি উঠে এসেছে। খবর বিবিসি, আলজাজিরা ও বিবিসি অনলাইনের। ভারতীয় বংশোদ্ভূত হয়েও কমলা বর্ণবাদ ও অভিবাসন বিরোধী বক্তব্য দেওয়াতে প্রবাসীরা তাকে ভোট দেয়নি বলে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে বলা হয়েছে। চাথাম হাউসের রাশিয়া এবং ইউরেশিয়া প্রোগ্রামের সহযোগী ফেলো টিমোথি অ্যাশ বলেছেন, নিরাপত্তার জন্য ট্রাম্পই ভালো। 
কমলা হ্যারিস বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট। কমলার সঙ্গে ট্রাম্পের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। বিশেষ করে দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোর ভোটের ফলে নজর ছিল সবার। তবে নির্বাচনের ফলাফলে অবশ্য তার প্রতিফলন দেখা যায়নি।
সর্বশেষ দোদুল্যমান উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যেও জয় পেয়েছেন  ট্রাম্প। উইসকনসিনে ১০টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট। এ জয়ের ফলে ট্রাম্প জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট পেয়ে যান। ট্রাম্প স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাতে ফ্লোরিডার ওয়েস্ট পাম বিচে সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, ‘আমেরিকার জনগণের জন্য এটি চমৎকার জয়। এটা আমাদের আমেরিকাকে আবারও মহান করার সুযোগ দেবে।’
এটি আমেরিকার স্বর্ণযুগ হবে বলেও মন্তব্য করেন ট্রাম্প। এ সময় মঞ্চে তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প এবং তার রানিং মেট জে ডি ভান্স।
দোদুল্যমান মিশিগানেও এগিয়ে যান ট্রাম্প। এখানে ট্রাম্প ৫০.০ শতাংশ ভোট পান। কমলা হ্যারিস পান ৪৮.১ শতাংশ ভোট। এ ছাড়া এখানে গ্রিন পার্টির জিল স্টেইন পেয়েছেন ০.৭ শতাংশ ভোট। এই অঙ্গরাজ্যের সবচেয়ে বড় মুসলিম শহর হিসেবে পরিচিত ডিয়ারবর্নের আরব আমেরিকানদের সমর্থনও পেয়েছেন ট্রাম্প। অনানুষ্ঠানিক ফলাফল অনুসারে, শহরে কমলা হ্যারিস পেয়েছেন ২৮ শতাংশ ভোট এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প ৪৭ শতাংশ। এ ছাড়া এখানে গ্রিন পার্টির জিল স্টাইন ২২ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। প্রাথমিক ফলাফলে বোঝা যাচ্ছে, ডিয়ারবর্নে ভোটাররা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ব্যাপক সমর্থন দিয়েছেন। আর একে বাইডেন প্রশাসনের ইসরাইল-গাজার যুদ্ধ নিয়ে নেওয়া পদক্ষেপের প্রতি স্পষ্ট প্রতিবাদ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
মিশিগানের এই শহরের ভোটাররা গাজা যুদ্ধের বিষয়ে বাইডেন প্রশাসনের অবস্থান নিয়ে বরাবরই অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছেন। যদিও কমলা হ্যারিস জয়ী হলে গাজা যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রতি তার অব্যাহত সমর্থন এবং ইসরাইলে বারবার যুদ্ধাস্ত্র পাঠানোকে ভালোভাবে নেননি আরব-আমেরিকান ও মুসলিম ভোটাররা। এমনকি কমলা হ্যারিস যে নির্বাচনে জয়ী হতে পারবেন না, এই বিষয়টি সেপ্টেম্বরেই নিউজউইককে জানিয়েছিলেন জিল স্টেইন। কারণ হিসেবে তিনি ‘গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যগুলোতে কমলার মুসলিম ও আরব-আমেরিকানদের সমর্থন’ হারানোর বিষয়টিতে জোর দিয়েছিলেন।
মঙ্গলবার রাতে ডেট্রয়েট মার্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক খালেদ বেইদুন এক্সে দেওয়া পোস্টে জানান, ‘কমলা হ্যারিসের মিশিগান হারানোর কারণ হতে পারে মুসলিম ভোট। সংবাদমাধ্যম ‘জেটিও নিউজ’-এর প্রধান সম্পাদক ও বিশ্লেষক মেহদি হাসান বলেন, ‘মিশিগানে মুসলিম ভোটারদের অনুভূতি উপেক্ষা করাটা ডেমোক্র্যাটদের জন্য বিপজ্জনক ভুল ছিল।
কারণ অনেক আরব-আমেরিকান মনে করেন, ট্রাম্প পরিবর্তন আনতে পারবেন। আর সেই বিশ্বাসই প্রতিধ্বনিত হলো ফিলিস্তিনি আমেরিকান নাবিল হামামেহর কণ্ঠেও। আরব আমেরিকানরা ট্রাম্পের সমর্থনে পার্টি দিয়েছিলেন। সেই পার্টিতে উপস্থিত ছিলেন হামামেহ। মিডল ইস্ট আইকে তিনি বলেন, দেশের পরিবর্তন দরকার এবং আমার মনে হয় ট্রাম্প সেই পরিবর্তন আনতে পারেন। শহরের অনেক ভোটার মঙ্গলবারের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়েছেন। তবে হামামেহ সব সময়ই একজন রিপাবলিকান এবং তিনি বিশ্বাস করেন, ট্রাম্পের আন্তর্জাতিক নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো এবং তিনি নিশ্চয়ই ইসরাইলি সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে আরও ভালো কাজ করবেন।
২০২০ সালে মিশিগানে ৫১ শতাংশ ভোট নিয়ে জয়ী হয়েছিলেন বাইডেন, যেখানে ট্রাম্প পেয়েছিলেন ৪৮ শতাংশ ভোট। এর আগে ২০১৬ সালে ট্রাম্প মাত্র .০২ শতাংশ ভোটে জিতেছিলেন। রাজ্যে হিলারি ক্লিনটনের ৪৭.৪ শতাংশ ভোটকে অতিক্রম করে ৪৭.৬ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন ট্রাম্প।
লালে লাল রিপাবলিকান শিবির অবশ্য উৎসবে মেতে উঠেছিল আগেই। ২৭৯ ভোট নিশ্চিত হওয়ার পর পরই মঙ্গলবার রাতে ফ্লোরিডার ওয়েস্ট পাম বিচে ওয়াচ পার্টির মঞ্চে হাজির হন ট্রাম্প। সমর্থকদের হর্ষধ্বনির মধ্যে ‘নজিরবিহীন ম্যান্ডেট’ দেওয়ায় আমেরিকার জনগণকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
ট্রাম্প বিভিন্ন নিরিখেই এবার ইতিহাস গড়লেন। তবে নিউইয়র্কের এই ধনকুবেরকে  ফের প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেছে নিয়ে বিশ্বকে আরও একবার হতবাক করল আমেরিকা। ব্যবসা থেকে রাজনীতিতে আসা ট্রাম্পের কেলেঙ্কারির শেষ নেই। দুনিয়াজুড়ে তাকে নিয়ে সমালোচনা আর শঙ্কারও কমতি নেই। তিনিই হতে যাচ্ছেন ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট।
‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ স্লোগান নিয়ে ২০১৬ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর দুইবার অভিশংসিত হয়েছিলেন ট্রাম্প। তার পরও কমান্ডার ইন চিফ হিসেবে তাকেই ফিরিয়ে আনল জনগণ। 
বিশৃঙ্খলা আর ঘরে-বাইরে সমালোচনার মধ্যে চারটি বছর হোয়াইট হাউসে কাটিয়ে ২০২০ সালের নির্বাচনে চরম নাটকীয়তার মধ্যে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের কাছে হেরে যান ট্রাম্প, যদিও সেই পরাজয় তিনি কখনো মেনে নেননি।
ওই নির্বাচনের পর ট্রাম্প সমর্থকদের ক্যাপিটল হিলে হামলার ঘটনা চিহ্নিত হয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে কুখ্যাত এক অধ্যায় হিসেবে। মনে হচ্ছিল, ট্রাম্পের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার হয়তো সেখানেই শেষ হয়ে গেল।
কিন্তু ৪ বছর পর ভোটের মাঠে বিস্ময়কর প্রত্যাবর্তন যে শেষ পর্যন্ত তাকে ওভাল অফিসে নিয়ে যাবে তা অনেকেরই ধারণার বাইরে ছিল।
অবশ্য ভোটের আগেই ট্রাম্প সম্পর্কে তার রাজনৈতিক উপদেষ্টা ব্রায়ান লাঞ্জার বলেছিলেন, একবার পরাভূত হওয়ার পর দ্বিগুণ উৎসাহে তিনি উঠে দাঁড়িয়েছেন।
ক্যাপিটল ভবনে হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে যে প্রতিক্রিয়া হয়েছিল- তাতে ধরে নেওয়া হয়েছিল, ট্রাম্পের রাজনৈতিক জীবনের অবসান ঘটেছে। তার অনেক দাতা ও সমর্থক আর কখনো ট্রাম্পকে সমর্থন করবেন না বলে জানিয়েছিলেন। ঘনিষ্ঠ মিত্ররাও তার দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিলেন।
কিন্তু এসব সত্ত্বেও অনুসারীদের মধ্যে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। সমর্থকরা তার লড়াকু মনোভাব ও মনে যা আসে তা স্পষ্ট করে বলাকে তার সততা ও সাহসের নজির বলে মনে করেন। প্রতিষ্ঠিত রিপাবলিকানরা যাই বলুক দলের কর্মীদের মধ্যে তার প্রভাব ব্যাপকভাবেই বজায় থাকে।
মামলা নিয়ে আদালতে দৌড়-ঝাঁপের মধ্যে জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে পেনসিলভানিয়ায় এক নির্বাচনী জনসভায় হত্যাচেষ্টা থেকে বেঁচে যান ট্রাম্প। আততায়ীর গুলি তার ডান কান চিরে বেরিয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে বিজয় ভাষণে ট্রাম্প বলেন, ‘অনেকেই আমাকে বলেছেন যে, ঈশ্বর আমাকে বাঁচিয়েছেন, সেটি কোনো একটি কারণের জন্যই।’
বক্তব্যের এক পর্যায়ের ট্রাম্প ভোটারদের পাশাপাশি স্ত্রী মেলানিয়াকেও ধন্যবাদ দেন। ট্রাম্প বলেন, প্রেসিডেন্ট হওয়া ‘বিশ্বে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ’ কাজ। তার সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতিশ্রুতি রক্ষার ব্রত নিয়ে কাজ করবে।
এবারের নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্প মূল্যস্ফীতি, কর, গর্ভপাত, অভিবাসন, পররাষ্ট্রনীতি ও বাণিজ্য বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের সমর্থন কুড়িয়েছেন।
ট্রাম্প অঙ্গীকার করেছেন মূল্যস্ফীতি কমিয়ে সবকিছু মানুষের ক্রয় সামর্থ্যরে মধ্যে আনার। অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠালে আবাসনের ওপর চাপ কমবে বলে মনে করেন তিনি। আমদানি পণ্যের ওপর উচ্চ হারে কর আরোপেরও আভাস দিয়েছেন ট্রাম্প। যদিও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এর ফলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেতে পারে।
ট্রাম্পও বিপুল পরিমাণ কর ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব রেখেছেন। তবে সেটি তার ২০১৭ সালের কর কমানোর নীতিরই আরেক রূপ, যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ধনীদের জন্যই সহায়ক ছিল।
হোয়াইট হাউসের পরবর্তী বাসিন্দা নির্বাচনে মঙ্গলবার স্থানীয় সময় ভোর ৬টার কাঁটা স্পর্শ করতেই বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। তবে সবার আগে ভোট দেন ভারমন্টের বাসিন্দারা। দেশটির পূর্ব উপকূলের অঙ্গরাজ্যটিতে স্থানীয় সময় ভোর পাঁচটা বাজার সঙ্গে সঙ্গে কয়েকটি নির্বাচনী কেন্দ্রে ভোট শুরু হয়। 
বহুল প্রতীক্ষিত এই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘিরে বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীরা যখন অস্থির, তখন মার্কিন জনগণ ভোটকেন্দ্রে হাজির হন। ভোটের দিনও বিভিন্ন জরিপে বলা হয়, রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতা কমলা দেবী হ্যারিসের মধ্য হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতোমধ্যে ফ্লোরিডার এক কেন্দ্রে ভোট দেন। ভোটের পর তিনি বলেন, আমরাই ফিরছি। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নতুন ভোর অপেক্ষা করছে। আর ডাকযোগে ভোট দেন কমলা।  
এর আগে কমলা হ্যারিস পেনসিলভানিয়ায় তার শেষ প্রচার সমাবেশে একতার শক্তি ও নারী অধিকারের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন লড়ি, আমরা জিতি’। সমাবেশে উপস্থিত জনতাকেও সমস্বরে তার এই কথার সঙ্গে গলা মেলানোর ডাক দেন কমলা। 
অপরদিকে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, তিনি কমলা হ্যারিস নয়, অশুভ ডেমোক্র্যাট ব্যবস্থার বিরুদ্ধে লড়ছেন। মিশিগানে শেষ প্রচার সমাবেশে ট্রাম্প বলেন, আমরা ওয়াশিংটনে এই দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবস্থাকে পরাজিত করবই। কারণ, আমি কমলার বিরুদ্ধে লড়ছি না। অশুভ ডেমোক্র্যাট সিস্টেমের বিরুদ্ধে লড়ছি। এরা দুষ্টু লোক। 
মার্কিন কংগ্রেসে ফের দুই মুসলিম নারী সদস্য ॥ যুক্তরাষ্ট্রে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভে আবারও জয়ী হয়েছেন দুই মুসলিম নারী রাশিদা তালিব ও ইলহান ওমর। তারা দুজনই ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রার্থী। রাশিদা তালিব প্যালেস্টাইন বংশোদ্ভূত প্রথম নারী যিনি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে দায়িত্ব পালন করেছেন। গত মঙ্গলবার তিনি ডিয়ারবর্নের আরব-আমেরিকান সম্প্রদায়ের সমর্থনে মিশিগান থেকে চতুর্থবারের মতো নির্বাচিত হন। অপরদিকে ইলহান ওমর একজন সোমালি বংশোদ্ভূত আমেরিকান এবং একজন শরণার্থী। তিনি মিনেসোটা থেকে তৃতীয় মেয়াদে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন। এ রাজ্যের পঞ্চম ডিস্ট্রিক্টের অন্তর্ভুক্ত মিনিয়াপলিস এবং এর আশপাশের এলাকাগুলোর প্রতিনিধি তিনি।

ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তার অন্যতম প্রধান সমালোচক রাশিদা তালিব। তিনি শুরুতে প্রতিদ্বন্দ্বীহীন অবস্থায় থাকলেও পরে রিপাবলিকান জেমস হুপারকে পরাজিত করে ডিয়ারবর্ন ও ডেট্রয়েট থেকে পুনরায় নির্বাচিত হন। রাশিদা ও ইলহান দুজনই আইনপ্রণেতাদের গোষ্ঠী ‘দ্য স্কোয়াড’-এর সদস্য। এ সংগঠনে আলেকজান্দ্রা ওকাসিও-কর্তেজসহ অন্যান্য প্রগতিশীল কংগ্রেস সদস্যরাও রয়েছেন।

×