ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জটিল পদ্ধতি সহজেই বুঝে নিন

প্রকাশিত: ২০:১২, ৫ নভেম্বর ২০২৪

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জটিল পদ্ধতি সহজেই বুঝে নিন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন

 'ইলেক্টোরাল কলেজ' হচ্ছে কর্মকর্তাদের একটি প্যানেল, যাদের 'ইলেক্টরস' বলা হয়। এরা এক কথায় নির্বাচক মণ্ডলী। চার বছর পর পর এটি গঠন করা হয়। এরাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্টকে বাছাই করেন।

ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতি অনুযায়ী যেসব রাজ্যে জনসংখ্যা বেশি, সেসব রাজ্যে ইলেক্টোরাল ভোটও বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রের মোট অঙ্গরাজ্য ৫০টি। আর সবগুলো অঙ্গরাজ্য মিলিয়ে ইলেক্টোরাল কলেজের মোট ভোট ৫৩৮টি। এরমধ্যে ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের হাতে সর্বাধিক ৫৪টি ভোট আছে। আবার নর্থ ডাকোটার মতো যেসব অঙ্গরাজ্যের জনসংখ্যা খুবই কম তাদের সর্বনিম্ন তিনটি ইলেক্টোরাল ভোট আছে।

একটি অঙ্গরাজ্যে কোনো প্রার্থী জয়ী হওয়া মানে সেই অঙ্গরাজ্যের সবকটি ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ ভোট পেয়ে যাবেন। অর্থাৎ ক্যালিফোর্নিা অঙ্গরাজ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি ৫০.১% ভোটও পান তাহলেও তিনি ওই অঙ্গরাজ্যের ৫৪টি ইলেক্টোরাল ভোটই পেয়ে যাবেন।

আর মাইন ও নেব্রাসকা- এই দুটো অঙ্গরাজ্য বাদে বাকি সবগুলো রাজ্যের ইলেক্টোরাল ভোট মিলিয়ে যে প্রার্থী ২৭০টি বা তারও বেশি ভোট পাবেন তিনিই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন।

আর সেই প্রার্থীর রানিং মেট অটোমেটিক হয়ে যাবেন ভাইস-প্রেসিডেন্ট।

উপরে বর্ণনা করা ইলেক্টোরাল কলেজ সিস্টেমের কারণেই একজন প্রার্থী দেশব্যাপী বেশি ভোট পেয়েও পরাজিত হতে পারেন।  কারণ, একজন প্রার্থী হয়তো সারা দেশে কম ভোট পেয়েছেন, কিন্তু অল্প ব্যবধানে জিতে ইলেক্টোরাল কলেজে এগিয়ে যেতে পারেন।

২০১৬ সালে এভাবেই হিলারি ক্লিনটনের চেয়ে প্রায় ৩০ লাখ ভোট কম পেয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। জর্জ ডব্লিউ বুশ ২০০০ সালে ৫ লক্ষাধিক ভোট কম পেয়েও আল গোরেকে পরাজিত করেছিলেন।
 

 কংগ্রেসে প্রতিনিধিত্বের অনুপাতে নির্ধারিত হয়প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে ইলেক্টরসের সংখ্যা। স্টেটে সিনেটরের সংখ্যা (প্রত্যেক স্টেটে দুইজন) এবং প্রতিনিধি পরিষদে প্রতিনিধির (যা জনসংখ্যার অনুপাতে) যোগফল মিলে এই ইলেক্টোরাল কলেজ নির্ধারিত হয়।

২০২০ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি ইলেকটোরাল ভোট ক্যালিফোর্নিয়ায় (৫৪টি)। এরপর রয়েছে টেক্সাস ৪০, ফ্লোরিডায় ৩০, নিউ ইয়র্ক ২৮, ইলিনয় ও পেনসিলভানিয়ায় ১৯টি করে। এছাড়া ওহাইওতে ১৭, জর্জিয়ায় ১৬ ও নর্থ ক্যারোলাইনায় ১৬, মিশিগান ১৫, নিউ জার্সিতে ১৪, ভার্জিনিয়াতে ১৩, ওয়াশিংটনে ১২, আরিজোনা, টেনেসি, ম্যাসাচুসেটস ও ইন্ডিয়ানায় ১১, মিনেসোটা, উইসকনসিন, ম্যারিল্যান্ড, মিজৌরি ও কলোরাডোতে ১০, অ্যালবামা ও সাউথ ক্যারোলাইনায় ৯, কেন্টাকি, অরেগন ও লুইজিয়ানায় ৮, কনেটিকাট ও ওকলাহোমায় ৭, মিসিসিপি, আরকানস, ক্যানজাস, আইওয়া, নেভাডা ও ইউটায় ৬; নিউ মেক্সিকো ও নেব্রাস্কায় ৫; ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া, নিউ হ্যাম্পশায়ার, মেইন, রোড আইল্যান্ড, আইডাহো ও হাওয়াইতে ৪; মন্টেনা, নর্থ ডেকোটা, ভার্মন্ট, ডেলাওয়ার, ওয়াইওমিং, সাউথ ডেকোটা, আলাস্কা ও ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়ায় ৩টি করে ইলেকটোরাল ভোট রয়েছে।
 
অঙ্গরাজ্যে জয়ী হওয়া প্রার্থীকেই কি ভোট দিতে বাধ্য নির্বাচকরা?

একটা প্রশ্ন অনেকের মাথায় আসতে পারে- কোনো একটি অঙ্গরাজ্যে যে প্রার্থী বিজয়ী হবেন তাকেই কি ভোট দিতে বাধ্য নির্বাচকরা?

কিছু অঙ্গরাজ্যে নির্বাচকদের আইনগতভাবে এই স্বাধীনতা আছে যে সাধারণ ভোটাররা কাকে পছন্দ করেছেন তার ওপর নির্ভর না করে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন।

তবে সাধারণত যে প্রার্থী সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পেয়েছেন তাকেই নির্বাচকরা তারা ভোট দেন। কারণ, অঙ্গরাজ্য থেকে যাকে প্রেসিডেন্ট হিসাবে বেছে নেয়া হয়েছে তার বিরুদ্ধে কোনও নির্বাচক ভোট দিলে তাকে ‘ফেইথলেস’ বা অবিশ্বাসী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

২০১৬ সালের নির্বাচনে এমন ঘটনা ঘটেছিল। সেবার সাতটি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট সাধারণ ভোটারদের ইচ্ছার বিপরীতে দেয়া হয়েছিল, তবে নির্বাচনের ফলাফলে তার কোনও প্রভাব পড়েনি।

এছাড়া কোনও কোনও অঙ্গরাজ্যে ‘ফেইথলেস’ নির্বাচকরা জরিমানা করা বা মামলার মুখেও পড়তে পারেন।
 

১৭৮৭ সালে যখন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান লেখা হচ্ছিল তখন বিশাল দেশটিতে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ ছিল না। ফলে জাতীয় স্তরে সাধারণ মানুষের ভোট নিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা খুবই কঠিন ছিল। সংবিধান রচয়িতারা তখন ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। তারা কংগ্রেস এবং জনগণের সরাসরি ভোটে (পপুলার ভোট) প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দুটো ধারণাই বাতিল করে দেন।

তাদের যুক্তি ছিল- পপুলার ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে জনগণ তাদের স্থানীয় প্রার্থীকেই ভোট দেবেন। এতে বড় রাজ্যগুলোর আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হবে।

ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতির কারণে ছোট ছোট রাজ্যগুলোও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

এছাড়া সংবিধান রচয়িতারা চাননি যে, রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে বসে আইন প্রণেতারা দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করুক।
 

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল পেতে কয়েকদিন পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। কারণ, অঙ্গরাজ্যগুলোর স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় ভোটগ্রহণ শেষ হয়। এরপর শুরু হয় গণনা। কিন্তু কোনো কোনো অঙ্গরাজ্যে যখন ভোট গণনা শুরু হয় তখনও কোথাও কোথাও ভোটগ্রহণ চলতে থাকে।

কোনো কোনো নির্বাচনে দ্রুত ফলাফল সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। আবার কখনো কখনো বেশ সময় লেগে যায়। তবে সাধারণত ভোটের পরদিন নাগাদ বিজয়ী প্রার্থী কে হচ্ছে তা ধারণা করা যায়।

কারণ অঙ্গরাজ্যগুলোয় ভোটের হিসাব থেকেই ইলেক্টোরাল কলেজের হিসাবও অনেকটা পরিষ্কার হয়ে যায়। কিন্তু সুইং স্টেট হিসাবে পরিচিত কোনো রাজ্যে যদি ভোট গণনা বা আইনি ঝামেলা তৈরি হয়, তাহলে বিজয়ী প্রার্থী সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পেতে আরও সময় লাগতে পারে।

তাসমিম

×