ছবি: রয়টার্স
পাকিস্তানের লাহোর শহরে তীব্র বায়দূষণের কারণে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আজ সোমবার (৪ নভেম্বর) থেকে 'গ্রিন লকডাউন' বা সবুজ লকডাউন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে, মানুষকে ঘরে বসে কাজ করার অনুমতি দেওয়া এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। অবস্থা বিবেচনা করে সোমবার থেকে আপাতত এক সপ্তাহের জন্য স্কুল-কলেজ বন্ধের নির্দেশ জারি হল লাহোরে।
গত এক সপ্তাহ ধরে লাহোরের বাতাসে ধোঁয়া ও ধুলিকণার পরিমাণ লাফিয়ে বেড়েছে। শহরে বর্তমানে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স বর্তমানে ১০০০ যা নিরাপদ সীমার থেকে অন্তত ৪০ গুণ বেশি। পরিস্থিতি এমনই যে লাহোর বর্তমানে দুনিয়ার দ্বিতীয় দূষিত শহর।শনিবার পাকিস্তান-ভারত সীমান্তের কাছে অবস্থিত এই শহর দূষণের মাত্রার মানদণ্ডে ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি রিডিং (১৯০০) অর্জন করে।
প্রাদেশিক সরকার ও সুইস সংস্থা আইকিউএয়ারের দেওয়া তথ্য অনুসারে রবিবার বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দূষিত শহরের তালিকার শীর্ষ স্থান দখল করে নেয় লাহোর।
এক সংবাদ সম্মেলনে পাঞ্জাবের জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী মারিয়াম আওরঙ্গজেব বলেন, সরকার এক সপ্তাহের জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে এবং শিশুদের মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে অভিভাবকদের পরামর্শ দিয়েছে।তিনি বলেন, কোনো কারখানা বা নির্মাণকাজের ক্ষেত্রে এসব নীতিমালা না মানা হলে সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে।গাড়ি থেকে সৃষ্ট দূষণ কমাতে অফিসের ৫০ শতাংশ কর্মীরা শুধু বাড়িতে বসে কাজ করবেন বলে জানান আওরঙ্গজেব।দূষণের মাত্রা কমানোর জন্য সরকার তিন চাকার থ্রি হুইলার (রিকশা নামে পরিচিত) চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং সুনির্দিষ্ট এলাকায় নির্মাণ কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে।মনে করা হচ্ছে এভাবেই 'গ্রিন লকডাউন'-এর মাধ্যমে বাতাস দুষণের পরিমাণ কমবে।
আওরঙ্গজেব চলমান পরিস্থিতিকে “অপ্রত্যাশিত” বলে বর্ণনা করেন এবং বাতাসের গুণমান কমে যাওয়ার জন্য প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে দূষণ বয়ে আনা বাতাসকে দোষারোপ করেন। এই সমস্যার সমাধানে ভারত-পাকিস্তান আলোচনার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, প্রাদেশিক সরকার এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে উদ্যোগ নেবে। এছাড়াও পাকিস্তানের পরিবেশ বিভাগের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রাজা জাহাঙ্গীর আনোয়ার জানিয়েছেন, ধোঁয়াশার 'প্রধান কারণ' ভারত সীমান্তে ফসলের খড় পোড়ানোর প্রচলন।
একজন অভিভাবক লিলি মির্জা (৪২) এএফপি সংবাদ সংস্থাকে বলেন, "মা হিসেবে আমি ভীষণ দুশ্চিন্তায় আছি। গত বছর পরিস্থিতি এতটা খারাপ ছিল না... আমাদের কারও জানানোর দরকার, ঠিক কী ঘটেছে? কোথাও কি দূষণের বোমা ফেটেছে?"
প্রতিবছর শীতে তাপমাত্রা কমার সাথে সাথে লাহোরে নির্মাণাধীন স্থাপনার ধুলো ও যানবাহন থেকে নিঃসরিত ধোঁয়া আটকা পড়ে বায়ুদূষণ ঘটায়। ঠান্ডা ও ঘন বায়ু মাটির কাছাকাছি দূষণ কণাগুলোকে আটকে রাখায় দূষণের মাত্রা আরও বেড়ে যায়।উল্লেখ্য, গত মাসে লাহোরের শিক্ষার্থীদের জানুয়ারি পর্যন্ত বাইরের খেলাধুলা নিষিদ্ধ করা হয়। পাশাপাশি, শিশুদের যাতায়াতের সময় দূষণের সর্বোচ্চ মাত্রা এড়াতে স্কুলের সময়সূচি পরিবর্তন করা হয়।
নাহিদা