ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ১৩ কার্তিক ১৪৩১

কমলাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়ার কথা বললেন ট্রাম্প

প্রকাশিত: ২২:৩৩, ২৮ অক্টোবর ২০২৪

কমলাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়ার কথা বললেন ট্রাম্প

.

আর কয়েক দিন পরই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এ উপলক্ষে এখন শেষ মুহূর্তের প্রচারে ব্যস্ত ক্ষমতাসীন  ডেমোক্র্যাট ও বিরোধী রিপাবলিকান শিবির। বাংলাদেশ সময় সোমবার নিউইয়র্কের এক নির্বাচনী প্রচারে ১৫ মিনিট বক্তৃতা করেন ট্রাম্প। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, আমি ক্ষমতায় গেলে গ্যাংওয়ার বন্ধ করব। অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধ করা হবে। পাশাপাশি কমলা হ্যারিসকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়ার কথাও বলেন ট্রাম্প। খবর আলজাজিরা, নিউইয়র্ক টাইমস ও বিবিসি অনলাইনের। 

নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে নির্বাচনী সমাবেশ ডোনাল্ড ট্রাম্প বক্তব্যের শুরুতে সমবেত জনতার উদ্দেশে প্রশ্ন করেন, ‘চার বছর আগের চেয়ে কি এখন আপনারা ভালো আছেন?’ এ সময় জনতা সমস্বরে বলে ওঠে, ‘না।’ 

৫ নভেম্বরের ভোটে জয়ী হলে অপরাধীদের হামলা থেমে যাবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিস খুবই কম আইকিউসম্পন্ন। সমাবেশে নিউইয়র্কের এক সময়ের মেয়র ও ট্রাম্পের সাবেক ব্যক্তিগত আইনজীবী রুডি জিলিয়ানি বলেন, ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধের সময় কমলা হ্যারিস সন্ত্রাসীদের পক্ষ নিয়েছেন। কমলা হ্যারিস ফিলিস্তিনিদের যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসতে চেয়েছেন।

কৌতুক অভিনেতা টনি হিঞ্চক্লিফ বক্তব্যে স্থূল ভাষা ব্যবহার করেন। তিনি বলেন, ‘লাতিনরা সন্তানের জন্ম দিতে ভালোবাসে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যারিবীয় অঞ্চলের পুয়ের্তো রিকোকে ‘আবর্জনার ভাসমান দ্বীপ’ বলে আখ্যা দেন। হিঞ্চক্লিফের এই বক্তব্যের পর পুয়ের্তো রিকোর সংগীতশিল্পী রিকি মার্টিন ইনস্টাগ্রামে স্প্যানিশ ভাষায় দেওয়া এক পোস্টে বলেন, তারা আমাদের নিয়ে এমনটাই ভাবে।’ যদিও পুয়ের্তো রিকোর বাসিন্দারা যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন না। তবে পুয়ের্তো রিকো থেকে যারা যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখ-ে চলে গেছেন, তারা নির্বাচনে পুরোপুরি অংশ নিতে পারেন। তাদের মধ্যে অনেকেই পেনসিলভানিয়ার বাসিন্দা।

ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারের পর ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস ই- মেইলে জানান, বিপজ্জনক বিভাজন ও অবমাননাকর বার্তার প্রতিফলন ঘটেছে এই নির্বাচনী সমাবেশে।

জরিপে দেখা গেছে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ অঙ্গরাজ্যগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীর প্রায় সমানে সমান অবস্থানে রয়েছেন।

বাইডেন প্রশাসনের অভিবাসীদের সামলানো ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে হ্যারিসের উদ্দেশে তীর্যক মন্তব্য ছুড়ে ট্রাম্প বলেন, কমলা হ্যারিস এটা নড়বড়ে করে ফেলেছেন। আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, সব ঠিক করে দেব। এর আগে মিশিগানে অপর এক নির্বাচনী সমাবেশে মুসলিম ভোটারদের কাছে তাকে ভোট দেওয়ার আবেদন করেছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প।

তার দাবি, বাইরের দেশ থেকে অপরাধীরা আমেরিকায় প্রবেশ করছে। তারা আমেরিকার শান্তিশৃঙ্খলা নষ্ট করছে। কোনো অভিবাসনপ্রত্যাশী যদি আমেরিকার কোনো নাগরিককে হত্যা করে থাকেন, তাহলে তাকে ফাঁসি দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, সকলকে দেশের পতাকাকে শ্রদ্ধা করতে হবে। কেউ পতাকা জ্বালিয়ে দিলে তার এক বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। ট্রাম্পের সমর্থকেরা এদিন ভরিয়ে দিয়েছিলেন ম্যাডিসন স্কোয়্যার গার্ডেন। ট্রাম্প আসার আগে তারাও কমলা হ্যারিসকে কার্যত ব্যক্তিগত আক্রমণ করেন। হ্যারিসকে তুলনা করা হয় শয়তানের সঙ্গে।

কমলা হ্যারিস প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, ‘কমলা, আপনি এই দেশ ধ্বংস করে দিয়েছেন। আপনাকে আমরা আর কোনোভাবেই ফেরাব না। আপনার চাকরি চলে গেছে।

আপনি এবার বেরিয়ে যান। এদিনের প্রচারে ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় চমক ছিল তার স্ত্রী। এই প্রথম ট্রাম্পের প্রচারে স্ত্রী মেলানিয়াকে দেখা গেছে। নভেম্বরের গোড়াতেই আমেরিকার নির্বাচন। হ্যারিস জিতলে আমেরিকার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হবেন। তবে এখনো পর্যন্ত ভোটের আগের সমীক্ষা বলছে, ট্রাম্প এবং হ্যারিসের লড়াই হচ্ছে হাড্ডাহাড্ডি। শেষ এক সপ্তাহে জনমতের ভিত্তি বলছে, হ্যারিস সামান্য এগিয়ে আছেন।

ভোটের আগে দেশজুড়ে চূড়ান্ত জনমত জরিপ চালিয়েছে সিএনএন। এই জরিপে কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমানে সমান লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেছে। ৪৭ শতাংশ সম্ভাব্য ভোটার ডেমোক্রেটিক দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলাকে এবং ৪৭ শতাংশ সম্ভাব্য ভোটার রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়েছেন। সেপ্টেম্বরে হওয়া জরিপে কমলা ৪৮ শতাংশ ও ট্রাম্প ৪৭ শতাংশ ভোটারের সমর্থন পান। স্বাধীন ভোটারদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাম্পের (৪১ শতাংশ) চেয়ে সামান্য এগিয়ে আছেন কমলা (৪৫ শতাংশ)। উভয় প্রার্থী নিজ নিজ দলের ভোটারদের থেকে শক্ত সমর্থন পেয়েছেন। ৯৩ শতাংশ ডেমোক্র্যাট ভোটার কমলাকে ও ৯২ শতাংশ রিপাবলিকান ভোটার ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়েছেন। নারী ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্পের (৪৪ শতাংশ) থেকে এগিয়ে আছেন কমলা (৫০ শতাংশ)। ৩৫ বছরের কম বয়সী ভোটারদের মধ্যে কমলা ৫১ শতাংশ ও ট্রাম্প ৪১ শতাংশ সমর্থন পেয়েছেন।

এছাড়া কৃষ্ণাঙ্গ (কমলা ৭৯ শতাংশ, ট্রাম্প ১৩ শতাংশ), হিস্পানিক (কমলা ৫৪ শতাংশ, ট্রাম্প ৩৭ শতাংশ) ভোটারদের মধ্যে কমলা এগিয়ে আছেন। পুরুষ ভোটারদের মধ্যে বেশি জনপ্রিয় ট্রাম্প। ৫১ শতাংশ পুরুষ ভোটার ট্রাম্পকে ও ৪৫ শতাংশ কমলাকে সমর্থন দিয়েছেন। শ্বেতাঙ্গ ভোটারদের মধ্যেও ট্রাম্প (৫৫ শতাংশ, কমলা ৪১ শতাংশ) এগিয়ে। গ্রামীণ ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্প ৬৪ শতাংশ ও কমলা ৩১ শতাংশ সমর্থন পেয়েছেন। ২০২০ সালে যারা ভোট দেননি, এমন ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্প ৫০ শতাংশ এবং কমলা ৪০ শতাংশ সমর্থন পেয়েছেন। চলতি বছরের ২০ থেকে ২৩ অক্টোবর টেলিফোনে এই জরিপ পরিচালিত হয়। দেশজুড়ে নিবন্ধিত ১ হাজার ৭০৪ ভোটার জরিপে অংশ নেন। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে তিন কোটি মানুষ আগাম ভোট দিয়েছেন। এর মধ্যে মেইলে পড়েছে ১ কোটি ৭০ লাখ ভোট। ৭টি ব্যাটল স্টেটের মধ্য এবারও আলোচনায় অ্যারিজোনা। ট্রাম্প-কমলার ভাগ্য নির্ধারণে বেশ গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যের ১১ ইলেক্টোরাল ভোট। এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গেম চেঞ্জার হতে পারে এই অ্যারিজোনা। ১৯৪৮ সাল থেকে এই রাজ্য রিপাবলিকান ঘেঁষা। তবে ১৯৯৬ সালে বিল ক্লিনটন এবং ২০২০ সালে  জো বাইডেনের পক্ষে ভোট দিয়েছিল এই রাজ্য।

এ বছর অ্যারিজোনা পুরোনো শিবিরে ফেরার পূর্বাভাস মিলেছে। ইউএসএ টুডে ও সাফোক বিশ্ববিদ্যালয়ের জরিপ বলছে, অ্যারিজোনায় ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের চেয়ে ১ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন রিপাবলিকান নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই রাজ্যের প্রচারে অভিবাসন বিরোধী নীতিকে কাজে লাগাতে চান তিনি। ২০২০ সালের নির্বাচনে অ্যারিজোনায় মাত্র দশমিক ৪ পয়েন্টে বাইডেনের কাছে হেরেছিলেন ট্রাম্প। কমলা হ্যারিস দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য জর্জিয়ায় তারকাখচিত সমাবেশ করেন। সমাবেশে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও রক কিংবদন্তি ব্রুস স্প্রিংস্টিন যোগ দেন। যোগ দিয়েছিলেন কৃষ্ণাঙ্গ অভিনেতা স্যামুয়েল এল জ্যাকসন ও চলচ্চিত্র পরিচালক স্পাইক লি। সমাবেশে তারা কমলার পক্ষে জোর সমর্থন জানান।

×