ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ১৩ কার্তিক ১৪৩১

আমেরিকার মাটিতে সক্রিয় ভারতের গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক

প্রকাশিত: ২০:৫৬, ২৮ অক্টোবর ২০২৪

আমেরিকার মাটিতে সক্রিয় ভারতের গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক

ভারত সরকার বিদেশেও ভিন্নমতাবলম্বীদের চুপ করানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন আমেরিকায় থাকা শিখ নেতা গুরপতওয়ান্ত সিং পান্নুন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই অভিযোগ করেন তিনি। এ জন্য ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকারের ওপর আমেরিকা ও কানাডাকে কঠোর হওয়ার আহ্বান হানান পান্নুন। তিনি আরও দাবি করেন, আমেরিকা ও কানাডায় ভারতের গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক সক্রিয়।

 

 

 

 

বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, মার্কিন বিচার বিভাগ সম্প্রতি নিউইয়র্কে মার্কিন-কানাডীয় দ্বৈত নাগরিক পান্নুনকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে দুই ভারতীয় নাগরিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করেছে। অভিযুক্তদের মধ্যে একজন ভারতের সাবেক সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। অভিযোগপত্র অনুসারে, তিনি হত্যার পরিকল্পনা পরিচালনা করেছিলেন এবং তখন একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছিলেন।

 

পান্নুন চলতি মাসের শুরুতে রয়টার্সকে বলেন, মোদি সরকারকে বিদেশে শত্রুতামূলক কার্যকলাপ করার অনুমতি দেওয়া উচিত নয়। আমেরিকা ও কানাডায় এখন ভারতের গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক বেশ সক্রিয়। যদিও তিনি কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি।

 

পান্নুন বলেন, ‘আমেরিকা ও কানাডাকে মোদির মতো শাসনব্যবস্থার ক্ষেত্রে পা বাড়িয়ে দিতে হবে...আমেরিকা বা কানাডায় তাকে আসতে দেওয়া উচিত নয়। তাদের সার্বভৌমত্বকে চ্যালেঞ্জ করা উচিত এবং এটি থেকে সরে যাওয়া উচিত। স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে কনস্যুলেটগুলো।’ 

এ অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এমনকি আমেরিকা ও কানাডার কর্তৃপক্ষও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। খালিস্তানিদের টার্গেট করে আক্রমণ ও হত্যার জন্য ভারত সরকারকে দায়ী করেছে দেশ দুটি। তবে, ভারত এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। 

গুরপতবন্ত সিং পান্নুনকে ২০২০ সালে ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে ঘোষণা করে ভারত। প্রায় দুই ডজনের মামলায় তিনি ভারতের কাছে মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকার একজন, যার মধ্যে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলাও আছে। এমনকি অমৃতসর ও চণ্ডীগড়ে তাঁর সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেছে সরকার। পান্নুন অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠানো ভারত সরকারের সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, তিনি কেবল খালিস্তানে বিশ্বাস করা একজন অধিকারকর্মী মাত্র।

 

১৯৮০ ও ১৯৯০ এর দশকে ভারত নিষ্ঠুরভাবে শিখ বিদ্রোহ দমন করেছিল। যদিও শিখদের একটি অংশ এখনও খালিস্তানের প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে শিখস ফর জাস্টিস (এসএফজে) প্রচারের সক্রিয় সমর্থক পান্নুন। ২০০৭ সালে এসএফজে গঠন করা হয়েছিল মূলত ১৯৮৪ সালে ভারতে ইন্দিরা গান্ধী হত্যার পর দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্ত শিখদের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে।

পাঞ্জাবের নাথু চাক গ্রামে জন্ম পান্নুনের। পরবর্তীতে তাঁর পরিবার অমৃতসরের খানকোত গ্রামে বসবাস করতে শুরু করে। লুধিয়ানার স্কুলে পড়ার পর নব্বইয়ের দশকে চণ্ডীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। ওই সময়ে পান্নুন ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন বলে পাঞ্জাব পুলিশের সাবেক একজন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন। এর অনেক বছর পর তিনি আমেরিকায় চলে যান। সেখানে ব্যবস্থাপনা ও আইনে ডিগ্রি নেওয়ার পর বিজনেস কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন। 

পান্নুন সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে শুরু করেন ২০২১ সালের পর। কারণ, পরিচিত ভারতীয় রাজনীতিকরা আমেরিকা সফর করলেই তাদের বিরুদ্ধে পান্নুনের সংগঠন শিখদের বিরুদ্ধে পরিচালিত দাঙ্গায় ভূমিকা রাখার অভিযোগ এনে মামলা করতে শুরু করে। তিনি ১৭৮৯ সালের একটি আইনের ওপর ভিত্তি করে মামলাগুলো করছিলেন। ওই আইনে বলা আছে, বিশ্বের যেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন হোক না কেন, আমেরিকার আদালতে তার বিচার হতে পারে।

 

এসব মামলা পান্নুকে আলোচনায় নিয়ে আসে। এর মাধ্যমে তাঁর ভারত বিরোধী প্রচারণাও জোরদার হয়। ওই বছরই খালিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য শিখদের বৈশ্বিক গণভোট আয়োজনের ঘোষণা দেন তিনি। যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় ভারতীয় বংশোদ্ভূত শিখরা ভোটে অংশ নেয়।

 

ফুয়াদ

×