ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ১১ কার্তিক ১৪৩১

মার্কিন নির্বাচনের বাকি আর ৯ দিন

প্রচারের শেষ সময়েও জরিপে সমানে সমান ট্রাম্প-কমলা

জনকণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩:২২, ২৬ অক্টোবর ২০২৪

প্রচারের শেষ সময়েও জরিপে সমানে সমান ট্রাম্প-কমলা

কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্প

মাত্র নয় দিন পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। মূল ভোটের আগে আমেরিকাজুড়ে জোরেশোরে চলছে আগাম ভোট। নির্বাচন সামনে রেখে এখন চলছে শেষ মুহূর্তের নির্বাচনী প্রচার। ভোটের আগে দেশজুড়ে চূড়ান্ত জনমত জরিপ চালিয়েছে সিএনএন। স্থানীয় সময় শুক্রবার প্রকাশিত জরিপে কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমানে সমান লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেছে।

৪৭ শতাংশ সম্ভাব্য ভোটার ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলাকে এবং ৪৭ শতাংশ সম্ভাব্য ভোটার রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়েছেন। সেপ্টেম্বরে হওয়া জরিপে কমলা ৪৮ শতাংশ ও ট্রাম্প ৪৭ শতাংশ ভোটারের সমর্থন পান। খবর সিএনএন, বিবিসি ও আলজাজিরা অনলাইনের। 
নিরপেক্ষ ভোটারদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাম্পের (৪১ শতাংশ) চেয়ে সামান্য এগিয়ে আছেন কমলা (৪৫ শতাংশ)। উভয় প্রার্থী নিজ নিজ দলের ভোটারদের থেকে শক্ত সমর্থন পেয়েছেন। ৯৩ শতাংশ ডেমোক্র্যাট ভোটার কমলাকে ও ৯২ শতাংশ রিপাবলিকান ভোটার ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়েছেন। নারী ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্পের (৪৪ শতাংশ) থেকে এগিয়ে আছেন কমলা (৫০ শতাংশ)। ৩৫ বছরের কম বয়সী ভোটারদের মধ্যে কমলা ৫১ শতাংশ ও ট্রাম্প ৪১ শতাংশ সমর্থন পেয়েছেন।
এছাড়া কৃষ্ণাঙ্গ (কমলা ৭৯ শতাংশ, ট্রাম্প ১৩ শতাংশ), হিস্প্যানিক (কমলা ৫৪ শতাংশ, ট্রাম্প ৩৭ শতাংশ) ভোটারদের মধ্যে কমলা এগিয়ে আছেন। পুরুষ ভোটারদের মধ্যে বেশি জনপ্রিয় ট্রাম্প। ৫১ শতাংশ পুরুষ ভোটার ট্রাম্পকে ও ৪৫ শতাংশ কমলাকে সমর্থন দিয়েছেন। শ্বেতাঙ্গ ভোটারদের মধ্যেও ট্রাম্প (৫৫ শতাংশ, কমলা ৪১ শতাংশ) এগিয়ে। গ্রামীণ ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্প ৬৪ শতাংশ ও কমলা ৩১ শতাংশ সমর্থন পেয়েছেন। ২০২০ সালে যারা ভোট দেননি, এমন ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্প ৫০ শতাংশ এবং কমলা ৪০ শতাংশ সমর্থন পেয়েছেন। চলতি বছরের ২০ থেকে ২৩ অক্টোবর টেলিফোনে এই জরিপ পরিচালিত হয়। দেশজুড়ে নিবন্ধিত ১ হাজার ৭০৪ ভোটার জরিপে অংশ নেন।

বৃহস্পতিবার পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে তিন কোটি মানুষ আগাম ভোট দিয়েছেন। এর মধ্যে মেইলে পড়েছে ১ কোটি ৭০ লাখ ভোট। ৭টি ব্যাটল স্টেটের মধ্য এবারও আলোচনায় অ্যারিজোনা। ট্রাম্প-কমলার ভাগ্য নির্ধারণে বেশ গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যের ১১ ইলেক্টোরাল ভোট। এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গেম চেঞ্জার হতে পারে এই অ্যারিজোনা। ১৯৪৮ সাল থেকে এই রাজ্য রিপাবলিকান ঘেঁষা। তবে ১৯৯৬ সালে বিল ক্লিনটন এবং ২০২০ সালে  জো বাইডেনের পক্ষে ভোট দিয়েছিল এই রাজ্য। 
এ বছর অ্যারিজোনার পুরোনো শিবিরে ফেরার পূর্বাভাস মিলেছে। বৃহস্পতিবার ইউএসএ টুডে ও সাফোক বিশ্ববিদ্যালয়ের জরিপ বলছে, অ্যারিজোনায় ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের চেয়ে ১ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন রিপাবলিকান নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই রাজ্যের প্রচারে অভিবাসনবিরোধী নীতিকে কাজে লাগাতে চান তিনি। ২০২০ সালের নির্বাচনে অ্যারিজোনায় মাত্র দশমিক ৪ পয়েন্টে বাইডেনের কাছে হেরেছিলেন ট্রাম্প।

কমলা হ্যারিস বৃহস্পতিবার দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য জর্জিয়ায় তারকাখচিত সমাবেশ করেন। সমাবেশে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও রক কিংবদন্তি ব্রুস স্প্রিংস্টিন যোগ দেন। যোগ দিয়েছিলেন কৃষ্ণাঙ্গ অভিনেতা স্যামুয়েল এল জ্যাকসন ও চলচ্চিত্র পরিচালক স্পাইক লি। সমাবেশে তারা কমলার পক্ষে জোর সমর্থন জানান। ৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ভোটের ক্ষেত্রে জর্জিয়াকে দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ভোটারদের নিজের দিকে টানার চেষ্টার অংশ হিসেবে এখানকার নির্বাচনী প্রচারে তারকাদের সমাবেশ ঘটালেন কমলা।

ডোনাল্ড ট্রাম্পও তার নির্বাচনী প্রচারে তারকাদের সমাবেশ ঘটাচ্ছেন। জর্জিয়ায় কমলার নির্বাচনী সমাবেশে হাজারো মানুষের সমাগম ঘটে। সমাবেশে রিপাবলিকানদের নিশানা করে কথা দিয়ে তোপ দাগেন ওবামা ও স্প্রিংস্টিন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের একমাত্র কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট ওবামা। তিনি ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়। কমলার সমাবেশে তিনি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে আক্রমণ করে বিভিন্ন কথা বলেন। ট্রাম্পের ব্যবসায়িক বিষয় নিয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন। তাকে উপহাস করেন। ট্রাম্পকে ইঙ্গিত করে ওবামা বলেন, যিনি রাজা হতে চান, স্বৈরশাসক হতে চান, এমন কোনো ব্যক্তির দরকার নেই।

যিনি তার শত্রুদের শায়েস্তার চেষ্টায় সারাক্ষণ ব্যতিব্যস্ত থাকেন, তাকে মার্কিনিদের প্রয়োজন নেই। ট্রাম্প পুনরায় নির্বাচিত হলে কীভাবে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারেন, তা নিয়ে কথা বলেন স্প্রিংস্টিন। তার কথায় ডেমোক্র্যাটদের, ট্রাম্প প্রশাসনের সাবেক সদস্যদের উদ্বেগের প্রতিধ্বনি শোনা যায়। স্প্রিংস্টিন বলেন, একজন জালিম শাসক হওয়ার জন্য নির্বাচনে লড়ছেন ট্রাম্প। ‘আইকনিক’ গায়ক স্প্রিংস্টিন তার সামাজিক সচেতনতার জন্য সুপরিচিত। তিনি শ্রমিক শ্রেণির সংগীতের জন্য বিখ্যাত।

কমলার প্রতি সমর্থন জোগাতে সমাবেশে ‘দ্য প্রমিজড ল্যান্ড’সহ তিনটি গান পরিবেশন করেন তিনি। কমলা তার ভাষণে মার্কিন মধ্যবিত্ত শ্রেণির পক্ষে তার অবস্থান তুলে ধরেন। ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হলে মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াইকে অগ্রাধিকার দেবেন। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, আমরা এমন একটি ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব, যেখানে জীবনযাত্রার খরচ কমিয়ে আনা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে এই বিষয়ই হবে আমার গুরুত্বের ক্ষেত্র। ওদিকে বৃহস্পতিবার অ্যারিজোনায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনী সভায় ট্রাম্প বলেন, আমাদের দেশ এখন একপ্রকার ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।

গোটা বিশ্বের জন্য আমরাই তাদের ময়লার জায়গা। তার এ মন্তব্য অভিবাসীদের প্রতি তার কট্টর অবস্থানের পরিচায়ক, যা ২০১৬ সালের নির্বাচনী প্রচার থেকেই তিনি অব্যাহত রেখেছেন। ট্রাম্পের এ মন্তব্যের পর ডেমোক্র্যাটিক দলের নেতারা তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, এটি বর্ণবাদী এবং অশ্বেতাঙ্গ অভিবাসীদের প্রতি বিদ্বেষমূলক। তারা উল্লেখ করেন, ট্রাম্পের এ বক্তব্য মার্কিন সমাজে বিদ্বেষ ও বিভাজন সৃষ্টি করতে পারে। ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। তিনি অভিবাসীদের বারবার ‘পশু’, ‘সন্ত্রাসী’ এবং ‘গ্যাং সদস্য’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

এ ধরনের ভাষা ব্যবহারের মাধ্যমে ট্রাম্প তার সমর্থকদের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট মনোভাব তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি দাবি করেন, অভিবাসনের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে অপরাধের হার বেড়েছে এবং এটি দেশের জীবনধারাকে বিপর্যস্ত করছে। নির্বাচনের প্রাক্কালে ট্রাম্পের বক্তব্যের ফলে রাজনৈতিক মহলে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। কমলা হ্যারিস ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির কঠোর সমালোচক এবং তাকে ‘ফ্যাসিবাদী’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।  
ডেমোক্র্যাট শিবিরের মতে, ট্রাম্পের এ অভিবাসনবিরোধী বক্তব্য দেশের সামাজিক বিভাজন বাড়াতে পারে, যা নির্বাচনের ফলকে প্রভাবিত করতে পারে। মার্কিন জনগণ ও রাজনীতিবিদদের মধ্যে ট্রাম্পের মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক চলতে থাকায়, আগামী নির্বাচনে কেমন প্রতিক্রিয়া তৈরি হবে, তা এখন দেখার বিষয়। এ পরিস্থিতিতে, অভিবাসন নীতির বিষয়ে ট্রাম্পের অবস্থান কতটা জনপ্রিয়তা অর্জন করবে এবং কিভাবে এটি নির্বাচনের চিত্র পরিবর্তন করবেÑ তা নিয়েও আলোচনা চলছে। নির্বাচনী প্রচারে এ মুহূর্তে অভিবাসন ইস্যু উভয় দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

×