ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১

‘প্রিজন মিরর’ জেলের সংবাদপত্র

আনন্দবাজার

প্রকাশিত: ২২:৫৫, ২২ অক্টোবর ২০২৪

‘প্রিজন মিরর’ জেলের সংবাদপত্র

জেলের সংবাদপত্র

বিশ শতকের প্রথমদিকে আমেরিকায় খবরের কাগজের সংখ্যা ছিল ২৪ হাজার। কিন্তু ২০০৫ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বন্ধ হয়ে গিয়েছে ২ হাজার ৯০০টি সংবাদপত্র। এ সময়ে বেঁচে থাকা প্রায় ৬ হাজার সংবাদপত্রের বেশিরভাগই সাপ্তাহিক। বেশিরভাগ কাগজ এখন ডিজিটাল মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার কারণে আরও কমে গেছে ‘কাগজ’ পড়া। স্থানীয় খবরের কাগজ, যেখানে প্রধানত শহরতলি, অথবা কাউন্টির খবর প্রকাশিত হয়, এতদিন তার পাঠক ছিল যথেষ্ট। কিন্তু কোভিড অতিমারির পরে আমেরিকাসহ পৃথিবীর নানা দেশেই অনেক স্থানীয় ও ছোট সংবাদপত্রের ছাপা বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
এমন অবস্থার মধ্য দিয়েই একটি ছোট্ট খবরের কাগজ পার করে দিয়েছে ১৩৭ বছর। ‘প্রিজন মিরর’ নামের কাগজটি প্রকাশিত হয় আমেরিকার মিনেসোটা প্রদেশের স্টিলওয়াটার নামে একটি সংশোধনাগার থেকে। এই সংবাদপত্রের প্রথম সংখ্যাটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৮৭ সালে। আমেরিকার বিভিন্ন সংশোধনাগার থেকে প্রকাশিত কাগজগুলোর মধ্যে এটিই সবচেয়ে পুরনো।
এই সংবাদপত্রে লেখেন এবং এটি সম্পূর্ণভাবে চালান স্টিলওয়াটারের আবাসিকরা। কী থাকে এই খবরের কাগজে? বন্দি আবাসিকদের নিজেদের অভিজ্ঞতা ও তাদের সমস্যার কথা যেমন থাকে, তেমনি সেই অঞ্চল, দেশ এবং গোটা পৃথিবীরও অনেক খবর থাকে। স্টিলওয়াটার সংশোধনাগারের আবাসিকরা তাদের নিজেদের কাগজে লেখেন বিভিন্ন আইনের বিশ্লেষণ, বইয়ের সমালোচনাও। লেখা থাকে সংশোধনাগারের মধ্যে হওয়া সমস্যা নিয়ে। থাকে দেশ এবং বিদেশের খবরও। কোন লেখা ছাপা হবে এবং সংবাদপত্রের হয়ে কারা কাজ করবেন, তার জন্য রীতিমতো প্রতিযোগিতা হয়।

পল গর্ডন, ‘প্রিজন মিরর’- এর একজন সম্পাদক, যিনি যাবজ্জীবন কারাদ-ে দ-িত হয়ে ওই সংশোধনাগারে রয়েছেন, তার কথায়Ñ ‘আমি লিখি কারণ পৃথিবী থেকে চলে যাওয়ার আগে, যে বিষয়গুলো আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ, সেগুলো নিয়ে লিখে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রেখে যেতে চাই এবং একইসঙ্গে বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে এই সংশোধনাগারের একটা সেতু গড়তে চাই।’ 
তবে, ‘প্রিজন জার্নালিজম’ বা সংশোধনাগার সাংবাদিকতা আদপেই সহজ কাজ নয়। সংশোধনাগারে কোনো ইন্টারনেট নেই। তাই আবাসিকদের সংবাদের উৎস হলো অন্য খবরের কাগজ। কোনো বিষয় ইন্টারনেট থেকে জানতে হলে তারা সংশোধনাগারের কর্মচারীদের সাহায্য নিয়ে প্রিন্ট আউট জোগাড় করেন। এ ছাড়া, আবাসিকদের লেখা ‘সেন্সর’ করা হয়। 
মজার বিষয় হলো, ৩০ বছর আগে আমেরিকার সংশোধনাগার থেকে প্রকাশিত কাগজের সংখ্যা ছিল ছয়। যেটা এখন বেড়ে ২৫ ছাড়িয়েছে।- আনন্দবাজার

×