ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২১ অক্টোবর ২০২৪, ৬ কার্তিক ১৪৩১

বিশ্ব কি আরেকটি মহামারি মোকাবেলায় প্রস্তুত?

প্রকাশিত: ১৬:১১, ২০ অক্টোবর ২০২৪

বিশ্ব কি আরেকটি মহামারি মোকাবেলায় প্রস্তুত?

করোনা মোকাবেলা

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্যমতে, বিশ্বব্যাপী প্রায় সাড়ে চার বিলিয়ন মানুষ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবার আওতার বাইরে রয়েছেন।

ইউরোপীয় সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোলের তথ্যমতে, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত বিশ্বের ১২০টি দেশে এমপক্সের এক লাখেরও বেশি রোগী সনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে অন্তত ২২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ডব্লিউএইচও বছরের শুরুতেই এই ভাইরাস নিয়ে জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিল। তারপরও ভারত পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে  এই ভাইরাস।

এছাড়া শুধুমাত্র সুদানেই চলমান কলেরা প্রাদুর্ভাবে আক্রান্ত হয়েছেন ১৫ হাজারের বেশি মানুষ। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, আক্রান্তদের মধ্যে কমপক্ষে ৪৭৩ জন মারা গেছেন। পাশাপাশি বিশ্বের ২৭ টি দেশে করোনার নতুন ভেরিয়েন্ট ছড়িয়েছে। এতেও শত শত মানুষ সংক্রামিত হয়েছেন।

২০২৪ সালের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক সামিটে উঠে এসেছে আরেকটি ভয়ংকর তথ্য। বলা হয়েছে, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএনআর) বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর প্রধান কারণ হয়ে উঠেছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ২০৫০ সালের মধ্যে অন্তত ১০ মিলিয়ন মানুষ এএনআরের কারণে প্রাণ হারাতে পারেন।

অন্যদিকে মানব স্বাস্থ্যের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের পরিমাণ শীর্ষক একটি প্রতিবেদনে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অতিরিক্ত সাড়ে ১৪ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হতে পারে। এছাড়া এই পরিবর্তনের ফলে সাড়ে ১২ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়বে বিশ্ব। ফলে ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্ব নতুন এক মহামারির মুখোমুখি হতে চলেছে এটা একপ্রকার নিশ্চিত। তবে সেই প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় বিশ্ব কি আদৌ প্রস্তুতি নিচ্ছে?

বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্যসেবার বর্তমান অবস্থা, সংক্রমণ এবং রোগের ঝুঁকি নিয়ে সম্প্রতি জাতিসংঘ ফাউন্ডেশনের বৈশ্বিক স্বাস্থ্য কৌশলের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও আফ্রিকা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এর সাবেক ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল ডা. আহমেদ ওগওয়েলের সঙ্গে কথা বলেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

ডা. আহমেদ ওগওয়েল বলেছেন, বিশ্বের সাধারণ স্বাস্থ্য-ব্যবস্থার জন্য এই মুহূর্তে তাপমাত্রাকে মাঝারি ঝুঁকিতে রাখা যায়। আমরা এখন একটি জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থার মাঝে রয়েছি, সেটি হলো এমপক্স মাল্টি-কান্ট্রি প্রাদুর্ভাব। এর মানে হল যে আমাদের উচ্চতর নজরদারির মধ্যে থাকতে হবে এবং আমাদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সরঞ্জাম রয়েছে কি না তা নিশ্চিত করতে হবে। একটি বিশ্ব সম্প্রদায় হিসেবে আমরা যেভাবে একসঙ্গে কাজ করি তারও উন্নতি করতে হবে।

দ্বিতীয়ত, ক্রমবর্ধমান সংখ্যক রোগের প্রাদুর্ভাব রয়েছে যেমন, এমপক্স, ডেঙ্গু জ্বর, কলেরা, পোলিও ইত্যাদি। আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় করোনার প্রভাব রয়ে গেছে। স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধানে বিশ্ব এখনও স্বস্তিতে ফিরতে পারেনি। এছাড়া বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি তো আছেই। এই সমস্যাগুলো মোকাবেলার জন্য গ্লোব হিসেবে আমাদের একত্রিত হওয়া দরকার। কারণ মহামারি আন্তর্জাতিকভাবে খুব দ্রুত ছড়িয়ে যায়। আন্তঃসীমান্তের মধ্যে একে বেঁধে রাখা যায় না। বিশ্ব যে মাঝারি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, এগুলো মোকাবেলায় প্রস্তুতির জন্য একটি উচ্চস্তরের পরিকল্পনা প্রয়োজন। পরিস্থিতি স্বস্তিদায়ক করতে আমাদের আরও অনেক কিছু করার আছে।

তিনি আরও বলেন, করোনা থেকে আমাদের যে শিক্ষা নেয়া উচিত ছিল, তা আমরা করিনি। মহামারি চলাকালীন আমরা গুরুত্ব সহকারে মাক্স পরেছি, নিয়মিত হাত ধুয়েছি, স্যানিটাইজ করেছি এবং দূরত্ব বজায় রেখেছি। কিন্তু সেসব রীতিনীতি মানুষ আজ একেবারেই ভুলে গেছে। স্বাস্থ্যসেবা স্তরে, রোগের সম্ভাব্য প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় আমরা যে সিস্টেমগুলো রেখেছি তা বিশ্বব্যাপী পালন করা উচিত। করোনার প্রভাব কামায় এই সিস্টেমগুলো দূরে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। যেমন, বিমানবন্দরে তাপমাত্রা স্ক্যানিং মেশিন এখন নেই। এর অর্থ হল জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির খুব প্রাথমিক স্ক্রীনিং প্রক্রিয়াও রাখা হচ্ছে না।

এছাড়া করোনার সময়, ছয় থেকে সাত মাসের মধ্যে ভ্যাকসিনগুলো তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু আজ, এমপক্স ছড়িয়ে পড়লেও একে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টায় একইভাবে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। ডেঙ্গু মোকাবেলায়ও এমন জরুরি পদক্ষেপের কথা শুনছি না।

এমপক্স সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে ওগওয়েল বলেন, বিশ্বজুড়ে যোগাযোগ এখন বেশ সহজ। ফলে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। এমপক্সের সংক্রমণের অন্যতম কারণ ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। কেউ একে সহজেই বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে নিয়ে যেতে পারে এবং স্থানান্তর করতে পারে। এই পৃথিবীতে যেকোনো জায়গায় একটি প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়া মানেই সর্বত্র সেই প্রাদুর্ভাবের ঝুঁকি ছড়িয়ে পড়া।

তাসমিম

×