ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ৪ কার্তিক ১৪৩১

দাবি মানা না হলে সরকারকে যে হুমকি দিলেন চিকিৎসকরা 

প্রকাশিত: ১৪:৩৫, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

দাবি মানা না হলে সরকারকে যে হুমকি দিলেন চিকিৎসকরা 

আবারও ধর্মঘটে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসকরা।

দাবি মানা না হলে আবারও ধর্মঘটে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসকরা। ধর্মঘট চলাকালীন যদি একজন রোগীরও কোনো সমস্যা হয়, তবে তার দায় রাজ্য সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রীকে নিতে হবে।  

শুক্রবার সিনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। ওই বৈঠক শেষে জুনিয়র চিকিৎসক দেবাশিস হালদার রাজ্য সরকারকে তাদের দাবি মেনে নেওয়ার সময় বেঁধে দিয়েছেন।

তিনি বলেন, সোমবারের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী যদি আমাদের দাবি না মানেন, তবে মঙ্গলবার স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সর্বাত্মক ধর্মঘটে যেতে বাধ্য হবো। ওই ধর্মঘটে সিনিয়র চিকিৎসকরাও যোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন দেবাশিস। শুক্রবার তিনি যখন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে পরবর্তী কর্মসূচি এবং ধর্মঘটের কথা বলেন, তখন তার সঙ্গে অন্য জুনিয়র চিকিৎসকদের পাশাপাশি সিনিয়রাও ছিলেন।

১০ দফা দাবি নিয়ে ‘আমরণ অনশনে’ বসেছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। আরজি কর-কাণ্ডের বিচার, স্বাস্থ্যক্ষেত্রে পরিবর্তনের দাবিতে গত দু’মাসের বেশি সময় ধরে তাদের আন্দোলন চলছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে সাড়া মিলছে না। ইতোমধ্যেই ৬ জুনিয়র চিকিৎসক অনশন করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এখনও হাসপাতালে ভর্তি আরও পাঁচজন। এই পরিস্থিতিতে আন্দোলনের পরবর্তী অভিমুখ কী হওয়া উচিত তা স্থির করতে শুক্রবার সিনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন। বৈঠক শেষে দেবাশিস বলেন, ‘সোমবার পর্যন্ত আমরা একটা সময়সীমা দিচ্ছি। এর মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীকে আমাদের সবগুলো দাবি মানার জন্য আলোচনায় বসতে হবে এবং সব দাবি মেনে নিতে হবে। যদি তা না হয় তবে আগামী মঙ্গলবার সিনিয়র এবং জুনিয়র চিকিৎসকদের সব সংগঠন সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালে সর্বাত্মক ধর্মঘটে যেতে বাধ্য হবো। দেবাশিস আরও জানান, সিনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা করেই তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

অতীতে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির জেরে স্বাস্থ্য পরিষেবায় সমস্যা দেখা দিয়েছিল বলে নানা অভিযোগ উঠেছিল। শুধু কলকাতায় নয়, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল কলেজগুলোতে প্রভাব পড়েছিল চিকিৎসকদের এই কর্মবিরতি। 

শুক্রবার সে কথাই মনে করিয়ে দিয়ে হুঁশিয়ারির সুরে দেবাশিস বলেন, ধর্মঘট চলাকালীন যদি একজন রোগীরও কোনো সমস্যা হয়, তবে তার দায় রাজ্য সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রীকে নিতে হবে। আমাদের আর কোনো উপায় ছিল না বলেই অনশনে বসতে বাধ্য হয়েছিলাম আমরা। কর্মবিরতি তুলে নিজেদের জীবন বাজি রেখেছিলাম। ভেবেছিলাম মানবিক মুখ্যমন্ত্রী আমাদের কথা ভাববেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনো সদুত্তর পাইনি সরকারের কাছ থেকে। আমাদের সহযোদ্ধাদের সিসিইউতে ভর্তি করানো হয়েছে।

আন্দোলনের অভিমুখ ঠিক করতে বৃহস্পতিবারও সিনিয়রদের সঙ্গে বৈঠকের আয়োজন করেছিলেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। ভার্চুয়াল মাধ্যমে ওই বৈঠক ডাকা হয়েছিল। কিন্তু যান্ত্রিক কিছু ত্রুটির কারণে বৈঠক সম্পন্ন হয়নি। তা থেকে কোনো সিদ্ধান্তেও আসা যায়নি। সে কারণেই শুক্রবার আবার বৈঠক ডাকা হয়। আইএমএ থেকে শুরু করে বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন ওই বৈঠকে।

ধর্মঘটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি কর্মসূচি ঠিক করা হয়েছে শুক্রবারের বৈঠকে। শনিবার ন্যায়বিচার যাত্রার ডাক দিয়েছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। সেখানে সিনিয়র ডাক্তারদের সংগঠন থেকে নাগরিক সংগঠন সবাইকে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। 

শনিবার দুপুরে আরজি কর-কাণ্ডে নিহত চিকিৎসকের বাড়ির এলাকা থেকে শুরু হবে এই কর্মসূচি। তারপর মিছিল যাবে ধর্মতলার অনশনমঞ্চ পর্যন্ত। এছাড়াও রোববার ধর্মতলার অনশনমঞ্চে মহাসমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে। সেখানেও সবাইকে উপস্থিত থাকার আর্জি জানিয়েছেন দেবাশিস। পাশাপাশি সোমবার বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান বিক্ষোভের কর্মসূচিও নেওয়া হয়েছে।

তাসমিম

×