ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ১ কার্তিক ১৪৩১

হিজবুল্লাহর পাল্টা ৯০ রকেট নিক্ষেপ

লেবাননে ইসরাইলের সিরিজ হামলা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩:৩৬, ১৬ অক্টোবর ২০২৪

লেবাননে ইসরাইলের সিরিজ হামলা

বৈরুতের দাহিয়েহ অঞ্চলে বিমান হামলা চালায় ইসরাইল

লেবাননজুড়ে ইসরাইলি বিমান হামলায় ২৩ জন নিহত হয়েছে। বুধবার দেশটির সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, দক্ষিণ ও পূর্ব লেবাননের কয়েকটি শহর ও অঞ্চলে ইসরাইলের সিরিজ বিমান হামলায় ২৩ জন নিহত এবং আরও ৩১ জন আহত হয়েছেন। দক্ষিণাঞ্চলের শহর নাবাতিয়েহর ওপর ১২ দফা বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইল।

এই হামলায় শহরের মেয়রসহ মোট পাঁচজন নিহত হয়েছেন। হামলায় হিজবুল্লাহর অস্ত্রাগার ধ্বংসের দাবি করেছে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী। অন্যদিকে লেবানন থেকে ইসরাইলের ভূখ-ে ৯০টি রকেট নিক্ষেপ করেছে হিজবুল্লাহ। 
এর আগে মঙ্গলবার ইসরাইলি হামলায় লেবাননে ৪১ জন নিহত হয়। খবর আলজাজিরার।
লেবাননের সরকারি বার্তাসংস্থা জানিয়েছে, নাবাতিয়েহ, বিনতে জবেইল এবং মারজায়ুন জেলাগুলোর পাশাপাশি টায়ার ও জেজিনকে লক্ষ্য করে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে হামলাগুলো চালানো হয়েছে। অন্যদিকে পূর্ব লেবাননে জাহলে এবং পশ্চিম বেকা জেলায় বিমান হামলা চালানো হয়। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, স্রেববাইন শহরে বিমান হামলায় পাঁচজন নিহত হয়েছে।

এ ছাড়া মারজায়ুন জেলায় যুদ্ধ বিমান খিয়াম শহরে হামলা চালায়। একই জেলায় টাউলিন শহরে বিমান হামলার ফলে তিনজন নিহত হয়েছে বলেও মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। টায়ার জেলায় ইসরাইলি যুদ্ধ বিমানের হামলায় কানা শহরে ১০ জন নিহত এবং আরও ১৫ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন বলে লেবাননের সংবাদ সংস্থার রিপোর্ট বলা হয়েছে। আর পূর্ব লেবাননের জাহলে জেলায় রিয়াক শহরকে লক্ষ্য করে চালানো হামলায় তিন শিশুসহ পাঁচজন নিহত এবং আরও ১৬ জন আহত হয়েছেন বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে। 
আইডিএফ জানায়, লেবানন থেকে আসা রকেটগুলোর অন্তত একটি ইসরাইলের উত্তরের শহর হাইফার মাটিতে আঘাত হানে। তবে এ ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ কয়েকটি রকেট হামলার দায় স্বীকার করেছে। আইডিএফের মতে, গত সোমবার লেবানন থেকে ইসরাইলে ১১৫টি রকেট নিক্ষেপ করা হয়। গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজা যুদ্ধ শুরু হয়।

এরপর থেকেই ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সমর্থনে ইসরাইলের বিরুদ্ধে লড়ছে হিজবুল্লাহ। লম্বা সময় ধরে লেবানন ও ইসরাইল সীমান্তে উভয় পক্ষ পাল্টাপাল্টি রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহে কোনো ধরনের পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই বৈরুতের দক্ষিণ উপকণ্ঠে হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী। এই এলাকাটি হিজবুল্লাহর শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিতি। এক বিবৃতিতে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ইসরাইলি বিমান বাহিনীর যুদ্ধ বিমান গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে হিজবুল্লাহর অস্ত্র সংরক্ষণের গুদামে বোমা হামলা চালিয়েছে। 
এই গুদামটি দাহিয়েহ এলাকার একটি ভবনের নিচে অবস্থিত। সেনাবাহিনী আরও দাবি করে, তারা বেসামরিক ব্যক্তিদের সুরক্ষিত রাখার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়েই এ হামলা চালায়। এ ব্যবস্থার মধ্যে ছিল এলাকাবাসীদের নিরাপদে চলে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া। সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া পোস্টে ইসরাইল জানায় তারা ভূগর্ভস্থ গুদামে সংরক্ষিত অস্ত্র ধ্বংস করার জন্য এ হামলা চালায়। গত মাসে লেবাননে ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে বিমান হামলা জোরদার করে ইসরাইল।

লেবাননে ইসরাইলি হামলায় হতাহতের সংখ্যার সঙ্গে আঞ্চলিক যুদ্ধের আশঙ্কা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই হামলার ব্যাপকতা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু এর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরেই বুধবার বৈরুতে হামলা চালিয়েছে তেলআবিব। ইসরাইলি সেনাবাহিনী তাদের বিবৃতিতে দাবি করেছে, বৈরুতের দাহিয়েহ এলাকায় হিজবুল্লাহর ভূগর্ভস্থ অস্ত্রভা-ার লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা জানিয়েছে, হিজবুল্লাহকে কোণঠাসা করতে দুসপ্তাহ ধরে চলা ইসরাইলি হামলায় লেবাননের প্রায় এক-চতুর্থাংশ আক্রান্ত হয়েছে।

কয়েকটি পশ্চিমা দেশ এই দুই প্রতিবেশীর মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকারে এখনো সমর্থন জানিয়ে তাদের ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী ব্যবস্থা সরবরাহ করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে হামলার পরিসর ও ভয়াবহতা নিয়ে তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

×