ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১৭ আশ্বিন ১৪৩১

নির্বাচনী সভায় কটাক্ষ ট্রাম্পের

কমলা হ্যারিস জন্মগত মানসিক প্রতিবন্ধী 

জনকণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩:৩১, ১ অক্টোবর ২০২৪

কমলা হ্যারিস জন্মগত মানসিক প্রতিবন্ধী 

কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে এখন শেষ মুহূর্তের প্রচারে ব্যস্ত ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কমলা হ্যারিস। তবে প্রচারে কমলার প্রতি ট্রাম্পের কটূক্তির মাত্রা আরও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। সোমবার উইসকনসিনের এক নির্বাচনী সভায় কমলা হ্যারিসকে জন্মগতভাবে ‘মানসিক প্রতিবন্ধী’ বলে আখ্যা দেন সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট। কমলাকে নিয়ে এই শব্দচয়নে নিজ দলেই সমালোচিত হয়েছেন ৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্প। খবর দ্য গার্ডিয়ান ও আলজাজিরা অনলাইনের। 
ফলে অস্বস্তিতে পড়েছেন রিপাবলিকান পার্টির অনেক নেতাকর্মীও। প্রকাশ্যে ট্রাম্পের এই কৌশলের সমালোচনাও করেছেন কেউ কেউ। পাঁচ নভেম্বরের নির্বাচনকে সামনে রেখে দুই দলের বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে অভিবাসন ও সীমান্ত নিরাপত্তা নীতি। এই ইস্যুতে হ্যারিসের সমালোচনা করতে যেয়ে উইসকনসিনে বিতর্কিত কিছু শব্দচয়ন করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘কমলা মানসিক প্রতিবন্ধী। যদি কোনো রিপাবলিকানের অধীনে এভাবে অপরাধ ও অপকর্ম বেড়ে যেত, তাহলে সে নিশ্চিতভাবে অভিশংসনের শিকার হতো। তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হতো’।

বাইডেন তো (বয়সের জন্য) মানসিক প্রতিবন্ধী হয়ে পড়েছেন। কিন্তু কমলার জন্মই হয়েছে প্রতিবন্ধী হিসেবে। কেবল একজন মানসিক প্রতিবন্ধীই আমাদের দেশের এই হাল করতে পারে, যোগ করেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের এমন শব্দচয়নে অনেক শীর্ষ রিপাবলিকান নেতা অস্বস্তির মধ্যে পড়েছেন। রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসি গ্রাহাম বলেন, ‘আমার মনে হয় এসব কথাবার্তা না বলে কমলার নীতিগুলো কীভাবে দেশকে ধ্বংস করছে তা নিয়ে কথা বলা উচিত। আমি বলব না সে (কমলা) পাগল। তবে তার নীতিগুলো পাগলাটে’।

মেরিল্যান্ডের রিপাবলিকান গভর্নর ল্যারি হোগান বলেন, ‘ট্রাম্পের এই মন্তব্য শুধু ভাইস প্রেসিডেন্টের জন্যই অপমানজনক না, মানসিক প্রতিবন্ধীদের জন্যও অপমানজনক’। প্রতিপক্ষকে এভাবে আক্রমণ করা ট্রাম্পের জন্য নতুন কিছু না। প্রতিপক্ষকে বিতর্কিত ডাকনাম দেওয়ার জন্যও বিখ্যাত তিনি। কমলা হ্যারিসকে প্রায় সময় ‘কমরেড কমলা’ বলে সম্বোধন করে থাকেন তিনি। কমলা শিবিরও এর জবাবে কিছু আগ্রাসী শব্দচয়ন করছে। ট্রাম্প ও তার রানিং মেট জেডি ভ্যান্সকে ‘আজব’ প্রার্থী বলে আখ্যায়িত করেছে তারা।

ট্রাম্পের শব্দচয়ন নিয়ে ইলিনয়ের ডেমোক্র্যাটিক গভর্নর জেবি প্রিৎজকার বলেন, ‘আপনার বুঝতে হবে, ট্রাম্প যখন এসব কথা বলেন, তিনি আসলে নিজের ব্যাপারেই বলছেন। আরেকজনের মধ্যে নিজের ছায়া দেখার চেষ্টা করেন তিনি’। প্রিৎজকারের মতে, নিজের বুদ্ধিবৃত্তিক অবনতি হচ্ছে দেখেই কমলাকে এই কথা বলেছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘জো বাইডেনের বুদ্ধিবৃত্তিক অবনতি নিয়ে তো অনেক কথা বলেছিলেন ট্রাম্প। এখন চিন্তা করুন, এখনই তার যে অবস্থা, তিন-চার বছর পর কী হবে?’

এদিকে আসন্ন নির্বাচনে কমলা হ্যারিসকে সমর্থন জানিয়েছে নিউইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয় বোর্ড। সোমবার ট্রাম্পের বিপরীতে তারা কমলাকে সমর্থন জানান। খবরে বলা হয়েছে, নিউইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয় বোর্ড মনে করে রিপাবলিকানদের বিপরীতে ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থীই প্রেসিডেন্ট পদের জন্য একমাত্র ‘দেশপ্রেমের প্রতিচ্ছবি’। যদিও সম্পাদক বোর্ড সরাসরি কমলার নাম উল্লেখ করেনি। তবে বর্ণনায় এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। তারা ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট পদে অযোগ্য বলে মনে করেন।

ট্রাম্পকে নৈতিক ও স্বভাবগতভাবে অযোগ্য বলে অভিহিত করেছেন ওই সম্পাদকরা। তারা বলেছেন, হতাশাজনক হলেও এটা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলা যায় ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার উপযুক্ত নন। যেসকল ভোটার নিজেদের স্বাস্থ্য এবং দেশের গণতন্ত্র নিয়ে ভাবেন তাদের উচিত হবে না তাকে (ট্রাম্পকে) পুনরায় নির্বাচিত করা। এর আগে দ্য নিউইয়র্কারও ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে। ম্যাগাজিনটির সম্পাদক পর্ষদ মন্তব্য করেছে ‘ট্রাম্প ছাড়া অন্য কাউকে’ বেছে নিতে হবে।

ট্রাম্পকে তারা যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশের জন্য হুমকি বলে মনে করেন। তবে তারা বলেছেন, কমলা হ্যারিস সকল ভোটারের জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে। তবুও কমলার প্রতি সমর্থন জানাতে আমেরিকানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা। সম্পাদক পর্ষদ বলেছে, আমরা আমেরিকানদের প্রতি কমলাকে সমর্থনের অনুরোধ জানাচ্ছি। কেননা তিনি প্রয়োজনীয় বিকল্পের চেয়েও এগিয়ে রয়েছেন। ট্রাম্পকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ‘সবচেয়ে ব্যর্থ’ নেতা বলেছেন তার প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিস।

তিনি রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ট্রাম্পকে ধনকুবেরদের একজন বন্ধু বলেও বর্ণনা করেন। এমএসএনবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কমলা সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ট্রাম্প বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির ওপর পুনরায় বড় ধরনের শুল্ক আরোপ করার পরিকল্পনা করেছেন। এতে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবিত্ত শ্রেণির পকেটে টান পড়বে। এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে জনমত জরিপে এখন পর্যন্ত হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। কমলা ও ট্রাম্প উভয়ই এখন অর্থনীতির মতো বিভিন্ন বিষয়ে নিজেদের পরিকল্পনা জানাচ্ছেন, চেষ্টা করছেন এখনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে না পারা ভোটারদের মনজয় করতে।

পিটসবার্গে দেওয়া এক বক্তৃতায় ‘দেশকে নতুন দিশায় এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার’ প্রতিশ্রুতি দেন কমলা। তিনি এখানেও সাধারণ আমেরিকানদের জন্য পণ্যমূল্য কমিয়ে রাখার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য পেনসিলভানিয়ার শিল্পনগর পিটসবার্গ। সেখানে কমলা আরও বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য আমাদের অর্থনীতি তখনই ভালো, যখন সেটি উঁচুতলার মানুষদের জন্য ভালো। দেশের অর্থনীতি যারা গড়ে তোলেন, যারা সেটিকে ধারণ করেন, যারা জীবনযুদ্ধ করে যাচ্ছেন, তাদের নিয়ে তার কোনো চিন্তা নেই।

ট্রাম্প যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখন কলকারখানার প্রায় দুই লাখ চাকরির সুযোগ অন্য দেশে চলে গেছে বলেও জানান কমলা। জো বাইডেন সরে যাওয়ার পর ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে সামনে চলে আসেন বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা। কমলা প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার পর এটাই তার প্রথম বড় একক সাক্ষাৎকার। এর আগে আগস্টে তিনি রানিংমেট টিম ওয়ালজকে সঙ্গে নিয়ে একটি যৌথ সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। এর আগে গত ১৬ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতের পর একইভাবে কমলার দপ্তরে গুলি চলে।

ছররা বন্দুক দিয়ে জানলা লক্ষ্য করে ছোড়া হয়েছিল গুলি। সেই ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। তবে ওই ঘটনার এক সপ্তাহের মাথায় আরও একটি হামলার ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ। রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইরান তার জীবনের জন্য ‘বড় হুমকি’। ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচার দল মার্কিন গোয়েন্দারা তাকে তেহরানের ‘বাস্তব ও সুনির্দিষ্ট’ হুমকির বিষয়ে সতর্কতা করেছে বলে জানায়।

ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেন, ইরান আমার জীবনের জন্য বড় হুমকি। সমগ্র মার্কিন সামরিক বাহিনী নজর রাখছে এবং কী ঘটে দেখার অপেক্ষায় আছে। ইরান ইতোমধ্যে এমন অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু তা সফল হয়নি। তবে তারা আবারও চেষ্টা করবে। অনেক বেশি মানুষ, বন্দুক ও অস্ত্র নিয়ে আমাকে ঘিরে রেখেছে, যা আমি আগে কখনো দেখিনি।

×