লেবাননের স্কুলে ইসলাইলি বিমান হামলায় আহত শিশু
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য মিত্র দেশগুলোর যুদ্ধবিরতি দেওয়ার আহ্বান সত্ত্বেও ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সেনাবাহিনীকে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ‘পূর্ণ শক্তি’ নিয়ে লড়াই চালিয়ে যেতে বলেছেন। এদিকে গত পাঁচদিনে ক্রমাগত হামলায় নিহতের সংখ্যা ৭০০ ছাড়িয়েছে। আহত হয়েছেন বহু মানুষ। শুক্রবার কাতার ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরাইলের বিমান হামলায় লেবাননে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৯২ জন নিহত হয়েছেন বলে লেবানিজ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
আলজাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ফাতিমা হাম্মুদ নামের এক লেবানিজ বলেন, লেবাননে কোনো নিরাপদ স্থান নেই। তিনি বলেন, অনেকের বাড়িতে বোমা হামলা হয়েছে। এখনো বোমা হামলার শব্দ শুনতে পাচ্ছি। আমরা ঘর থেকে কিছুই নিতে পারিনি।
লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর সিডনের একটি স্কুলে শত শত শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে। শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া আলী মোহাম্মদ বলেন, ইসরাইলি হামলায় আমাদের গ্রামের ২০টি বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। তিনি বলেন, আমরা যখন পালাচ্ছিলাম তখন চারদিক শুধু বোমা হামলা হচ্ছিল।
এদিকে, হিজবুল্লাহ নিশ্চিত করেছে যে লেবাননের রাজধানী বৈরুতের একটি ভবনে বিমান হামলায় তাদের ড্রোন ইউনিটের প্রধান মোহাম্মদ সুরুর নিহত হয়েছেন। বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলে ইসরাইলি হামলায় বৃহস্পতিবার হিজবুল্লাহর ড্রোন ইউনিটের প্রধান মোহাম্মদ সুরুর নিহত হয়েছেন। হিজবুল্লাহ ও ইসরাইলি সেনাবাহিনী দুই পক্ষই এ খবর নিশ্চিত করেছে।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, তাদের যুদ্ধবিমান মোহাম্মদ সুরুরকে লক্ষ্য করে হামলা চালায় এবং এতে তিনি নিহত হন। সুরুর হিজবুল্লাহর বিমান ইউনিটের কমান্ডার বলে জানানো হয় ওই বিবৃতিতে। এরপর হিজবুল্লাহও এক বিবৃতিতে সুরুর নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করে।
সোমবার থেকে দেশটিতে ইসরাইলি হামলার তীব্রতা নাটকীয়ভাবে বেড়ে যাওয়ায় ইসরাইল ও লেবাননের হিজবুল্লাহর মাঝে সর্বাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে।
ইসরাইল ও হিজবুল্লাহর মধ্যকার লড়াই ক্রমশ বাড়তে থাকায় গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ মোট ১২টি দেশ লেবাননে ২১ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাবটি শুরুতে আশার আলো দেখিয়েছিল, যখন জাতিসংঘে ইসরাইলের দূত ড্যানি ড্যানন বলেছিলেন যে তার দেশ যে কোনো প্রস্তাবের ব্যাপারে উদার মনোভাব পোষণ করে। কিন্তু বৃহস্পতিবারের মাঝে ইসরাইলি রাজনীতিবিদরা তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জানা গেছে, লেবাননজুড়ে ইসরাইলের ব্যাপক বোমা হামলার কারণে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ এখন বাস্তুচ্যুত হয়েছে বলে জানিয়েছেন লেবাননের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এদিকে, ইসরাইলি ভূখ-ে পাল্টা হামলা অব্যাহত রেখেছে হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা। বৃহস্পতিবার ইসরাইলের কিরায়াত আতা ও সাফেদ এলাকা লক্ষ্য করে ১৩০টি রকেট ছুড়ে হিজবুল্লাহ।
গাজা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে গত এক বছর ধরে ইসরাইল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে আন্তঃসীমান্ত লড়াই চলছে। এতে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যাদের অধিকাংশই হিজবুল্লাহ যোদ্ধা। এ ছাড়া লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
হিজবুল্লাহ বলেছে, তারা হামাসের সমর্থনে কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং গাজায় যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তারা তা থামাবে না। দুইটি সংগঠনই ইরান সমর্থিত। ইসরাইল, যুক্তরাজ্যসহ আরও অনেক দেশ তাদের সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বর্ণনা করে থাকে। সম্প্রতি গাজা থেকে দেশের উত্তরাঞ্চলে নজর ফেরানোর কথা জানিয়েছিল ইসরাইল সরকার। এরপর যোগাযোগযন্ত্র পেজার ও ওয়াকিটকি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে লেবাননের হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর ভিত নাড়িয়ে দেয় ইসরাইল। ওই ঘটনাকে হিজবুল্লাহর ওপর বড় ধরনের হামলার পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে দেখা হচ্ছিল।