ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১

হাম্বানটোটায় গুপ্তচর জাহাজের আনাগোনা বাড়বে

শ্রীলঙ্কায় চীনপন্থিদের উত্থানে চিন্তায় ভারত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ২১:০৩, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শ্রীলঙ্কায় চীনপন্থিদের উত্থানে চিন্তায় ভারত

শ্রীলঙ্কার নয়া প্রেসিডেন্ট অনুরাকুমার দিশানায়েকে

শ্রীলঙ্কায় সদ্য অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে বাম জোটের নেতা অনুরাকুমার দিশানায়েকে জয়ী হয়েছেন। দ্বীপরাষ্ট্রটির দশম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথও নিয়েছেন এই তরুণ নেতা। বামপন্থি দল জনতা বিমুক্তি পেরামুনা বা জেভিপির পলিটব্যুরো সদস্য দিশানায়েকে ভারতবিরোধী এবং চীনপন্থি হিসেবে পরিচিত। বিষয়টি নয়াদিল্লির কূটনীতিকদের উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

দ্বিতীয় রাউন্ডের গণনার শেষে অনুরাকুমার দিশানায়েকের জয় নিশ্চিত হয়। এর পরই রাজধানী কলম্বোয় প্রেসিডেন্টের সচিবালয়ে চলে আসেন তিনি। সেখানে তাকে শপথবাক্য পাঠ করান দ্বীপরাষ্ট্রের প্রধান বিচারপতি জয়ন্ত জয়সূর্য। দিশানায়েকে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসতেই ভারতের সঙ্গে দক্ষিণের দ্বীপরাষ্ট্রটির সম্পর্ক কেমন হবে, তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু করেছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা।

ইতিহাসগতভাবে তাকে ভারত-বিরোধী ও কট্টর চীনপন্থি বলেই মনে করা হয়। ফলে তার জয়ে ভ্রƒ কুঁচকেছেন নয়াদিল্লির কূটনীতিকদের একাংশ। শ্রীলঙ্কার বাম দল জেভিপির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন রোহানা উইজেভেরা। ১৯৮০-র দশকে ‘ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ’-এর কথা বলে বলে দ্বীপরাষ্ট্রের আমজনতাকে জড়ো করেন তিনি। নয়াদিল্লিকে শ্রীলঙ্কার অন্যতম বড় শত্রু বলেও উল্লেখ করেছিলেন জেভিপির প্রতিষ্ঠাতা। খবর আনন্দবাজার অনলাইনের। 
১৯৮৭ সালে ভারতের সঙ্গে বিশেষ একটি চুক্তিতে সই করে শ্রীলঙ্কা। যাতে প্রধান ভূমিকা ছিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী ও দ্বীপরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জেআর জয়বর্ধনের। চুক্তিতে তামিলদের বেশ কিছু সুযোগসুবিধা দেওয়া এবং প্রাদেশিক সরকারগুলোকে ক্ষমতাশালী করার প্রতিশ্রুতি দেয় তৎকালীন লঙ্কা প্রশাসন।
কিন্তু ভারত-শ্রীলঙ্কার ওই চুক্তির বিরোধিতা করে জেভিপি। শুধু তা-ই নয়, দেশের  ভেতরে সশস্ত্র বিদ্রোহ গড়ে তোলে এই দল। যা দমাতে সেনা নামাতে হয়েছিল শ্রীলঙ্কার সরকারকে। বেশ কয়েক বছর ধরে চলেছিল রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। তবে বর্তমানে সেই পরিস্থিতি অনেকটাই বদলেছে। দিশানায়েকের মুখে গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকবার ভারতের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রাখার কথা শোনা যায়।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে নয়াদিল্লি এসেছিলেন তিনি। ওই সময়ে বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে বৈঠক করেন দিশানায়েকে। জয়শঙ্কর ও দোভালের সঙ্গে বৈঠকের পর সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খুলেছিলেন দিশানায়েকে। সেখানে তিনি বলেন, নয়াদিল্লির সঙ্গে আলোচনার জেরে আমার দলের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নীতিতে বড় ধরনের কোনো বদল আসবে না। তবে ভারতের থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা আশা করছি।

বিশেষজ্ঞদের দাবি, কুর্সিতে বসার পর প্রবল ভারত বিরোধিতার রাস্তায় নাও হাঁটতে পারেন শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট। কারণ দ্বীপরাষ্ট্রটির ঋণখেলাপি অবস্থা পুরোপুরি কাটেনি। এই অবস্থায় আন্তর্জাতিক অর্থভা-ার বা আইএমএফের থেকে নতুন করে ঋণ নিতে হলে ভারতের সাহায্য প্রয়োজন হবে। তবে দিশানায়েকে প্রেসিডেন্ট হওয়ায় শ্রীলঙ্কায় বসবাসকারী তামিলদের অবস্থার খুব একটা উন্নতি হবে, এমন আশা করা বাতুলতা বলেই মনে করেছেন বিশেষজ্ঞেরা।

চীনের সঙ্গে একাধিক চুক্তি করতে পারেন তিনি। যদিও মুখে ভারত-চীন ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় শ্রীলঙ্কা কোনো শক্তির অধীনস্থ হবে না বলেই ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন দিশানায়েকে। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের অবশ্য দাবি, এসবই কথার কথা। শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা বন্দর রয়েছে চীনের দখলে। আগামী দিনে সেখানে বেজিংয়ের পাঠানো যুদ্ধজাহাজ বা গুপ্তচর জাহাজের আনাগোনা বাড়বে।

×