বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়
বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছেন। রহস্য দানা বেঁধেছে তার হোয়াটসঅ্যাপ কথোপকথন ঘিরে।
আরজি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসকের হত্যা ঘিরে উত্তেজনা চরমে। আন্দোলন চলছে লাগাতার। তার মধ্যে আর এক ছাত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটল।
উত্তরপ্রদেশে বারাণসী থেকে বোলপুরেবিশ্বভারতীতে পড়তে এসেছিলেন অনামিকা সিংহ। হাসিখুশি, মিশুকে ছিলেন এই ছাত্রী। জানা গিয়েছে, তিনি হস্টেলের মধ্যেই হঠাৎ 'বিষ খান' বৃহস্পতিবার।
শিল্পসদনের ছাত্রী অনামিকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আম্রপালি হস্টেলে থাকতেন। বৃহস্পতিবার সন্ধেয় অন্যান্য ছাত্রীরা দেখেন, তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তড়িঘড়ি ওয়ার্ডেনকে ডাকেন তারা। হস্টেল সূত্রে জানা গিয়েছে, অনামিকা বলেন, "বিষ খেয়েছি, আমাকে বাঁচান”।
বারবার বমি হচ্ছিল ছাত্রীর। দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের পিয়ার্সন মেমোরিয়াল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় অনামিকাকে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় বোলপুর মহকুমা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেদিন রাতেই তার মৃত্যু হয়।
খবর পেয়ে শুক্রবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে অনামিকার পরিবার। বাবা, মা ও দাদা এই ঘটনায় বিস্মিত। তাদের অভিযোগ, কারো প্ররোচনায় আত্মহত্যা করেছেন অনামিকা। মৃত ছাত্রীর মা প্রেমলতাদেবী বলেন, "কোনো চাপে পড়েই মেয়ে এই কাজ করেছে। আমরা জানতে চাই, কে আছে এর পিছনে।”
আরজি করে তরুণী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধারের পর পুলিশ ও কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এক্ষেত্রে বীরভূমের পুলিশ সতর্কতার সঙ্গে এগিয়েছে। বোলপুর থেকে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজে দেহ নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে হয় ময়নাতদন্ত। বোলপুর থানা তদন্তে আসে ঘটনাস্থলে, হস্টেল থেকে নমুনা সংগ্রহ করে ফরেনসিক দল।
হোয়াটসঅ্যাপ রহস্য
ছাত্রীর মৃত্যুর পর তার হোয়াটসঅ্যাপ কথোপকথন ঘিরে রহস্য তৈরি হয়েছে। এক অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি চ্যাটে তাকে হুমকি দিয়েছেন, তা বোঝা যাচ্ছে। সূত্রের খবর, তিনি এক সহপাঠীকে জানান, ঋণের টাকার জন্য একজন তাকে চাপ দিচ্ছে, হুমকিও দিচ্ছে। কিন্তু তার কাছে টাকা নেই!
রোমান হরফে লেখা হিন্দি ভাষার কথোপকথন সামনে এসেছে। সেই কথোপকথনে একজন অনামিকাকে লিখেছে, ‘রুপিয়া অ্যারেঞ্জ কিজিয়ে। কেয়া হোনেওয়লা হ্যায় মালুম চলেগা আপকো।' এতেই স্পষ্ট যে হুমকি দেয়া হয়েছিল ছাত্রীকে।
জবাবে অনামিকা লেখেন, ‘কেয়া করেঙ্গে আপ? ধমকি দে রহে হো?' অজ্ঞাতনামা উত্তর দেয়, ‘ওয়েট করো মালুম চলেগা…।' এই হুমকির মুখে পড়েই সম্ভবত ঘাবড়ে গিয়েছিলেন ছাত্রী। গত কয়েকদিন তিনি নিজেকে গুটিয়ে নেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দেননি।
অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা
ঋণের টাকার জন্য বেশ কিছুদিন ধরে অনামিকার উপর চাপ আসছিল বলে অনুমান করা হচ্ছে। সেই টাকা জোগাড় করতেই কি তিনি সহপাঠী ও শিক্ষকদের কাছ থেকে অর্থ সাহায্য চেয়েছিলেন?
গত ৭ আগস্ট একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে অনামিকা লেখেন, "আমার বোনের একটি গুরুতর দুর্ঘটনা ঘটেছে। অপারেশনের জন্য পাঁচ লক্ষ টাকার প্রয়োজন। আমার পরিবার ইতিমধ্যেই চার লক্ষ ৩০ হাজার টাকা জোগাড় করতে পেরেছে। অপারেশন করতে এখনও ৭০ হাজার টাকা প্রয়োজন। আর্থিক সাহায্যের জন্য সকলকে অনুরোধ করছি। অপারেশনের পর সকলকেই টাকা ফিরিয়ে দেব।”
পরে মৃত ছাত্রীর পরিবার জানিয়েছে, বোনের অস্ত্রোপচারের দাবি ঠিক নয়, দুর্ঘটনা ঘটেনি। যদিও এই আবেদন দেখে অনেকেই সাহায্য করেন ছাত্রীকে। প্রায় ৭০ হাজার টাকা তার অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে। তদন্তে উঠে এসেছে, সেই টাকা আর অনামিকার অ্যাকাউন্টে নেই।
দুটি অ্যাকাউন্টে সেই টাকা পাঠানো হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
পরে মৃত ছাত্রীর পরিবার জানিয়েছে, বোনের অস্ত্রোপচারের দাবি ঠিক নয়, দুর্ঘটনা ঘটেনি। যদিও এই আবেদন দেখে অনেকেই সাহায্য করেন ছাত্রীকে। প্রায় ৭০ হাজার টাকা তার অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে। তদন্তে উঠে এসেছে, সেই টাকা আর অনামিকার অ্যাকাউন্টে নেই।
দুটি অ্যাকাউন্টে সেই টাকা পাঠানো হয়েছে বলে সূত্রের খবর। এই অ্যাকাউন্ট কার, তার খোঁজ করছে পুলিশ।
কেন অনামিকা তাকে এত টাকা পাঠিয়েছিলেন? কেনই বা টাকার জন্য অসত্য কাহিনি পরিচিতদের কাছে বললেন তিনি? কী কারণে ঋণ নিতে হয়েছিল তাকে? এ সব প্রশ্নের জবাবে ছাত্রীর মৃত্যুর রহস্য লুকিয়ে রয়েছে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।
ডয়চে ভেলে
তাসমিম