ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিসের প্রতিবেদন

উষ্ণতম দিনের রেকর্ড ভাঙল বিশ্ব

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ২১:১৯, ২৪ জুলাই ২০২৪

উষ্ণতম দিনের রেকর্ড ভাঙল বিশ্ব

২২ জুলাই টানা দ্বিতীয় দিন উষ্ণতম দিনের রেকর্ড ভেঙেছে বিশ্ব

২২ জুলাই টানা দ্বিতীয় দিন উষ্ণতম দিনের রেকর্ড ভেঙেছে বিশ্ব। এর আগে ২১ জুলাইকে বিশ্বের উষ্ণতম দিন হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর্যবেক্ষণ সংস্থা কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিসের প্রাথমিক প্রতিবেদনে বুধবার এসব তথ্য উঠে এসেছে। খবর এএফপির।
কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস অনুসারে, সোমবার বিশ্বব্যাপী ভূপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা শূন্য দশমিক ০৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে ১৭ দশমিক ১৫ হয়েছে। ১৯৪০ সাল থেকে এ ধরনের তথ্য রেকর্ড করে আসছে সংস্থাটি। এর আগে শেষবার ২০২৩ সালের জুলাইয়ের শুরুতে টানা চারদিন উষ্ণতম দিন রেকর্ড করা হয়। তারও আগে, সবচেয়ে উষ্ণতম দিন ছিল ২০১৬ সালের আগস্টে। সম্প্রতি জাপান, ইন্দোনেশিয়া এবং চীনের শহরগুলোতে রেকর্ড তাপমাত্রা দেখা দিয়েছে। তাপমাত্রার এই সূচকে পিছিয়ে নেই উপসাগরীয় দেশগুলোও।

আর্দ্রতার কারণে এসব অঞ্চলের তাপমাত্রা ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে। এদিকে ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ছাড়িয়েছে ইউরোপের কিছু অংশের তাপমাত্রা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই রেকর্ড তাপমাত্রা বৃদ্ধির পেছনে জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোকে দায়ী করেছেন বিজ্ঞানীরা। এর আগে আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের বছর ছিল ২০২৩ সাল। পৃথিবীর জলবায়ুর প্রেক্ষাপট পরিবর্তন করে দেয় ২০২৩ সালের আবহাওয়া। 
সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থেকে শুরু করে তাপপ্রবাহ, দাবানল, বিধ্বংসী বন্যা ও ঝড়সহ সবকিছুই পুরনো রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড করেছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা। আবহাওয়ার কতটা পরিবর্তন হয়েছে, এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিসের (সি৩এস) সহকারী পরিচালক সামান্থা বার্গেস এক বিবৃতিতে জানিয়েছিলেন, ২০২৩ সালের ১২ মাসের ছয় মাসই আবহাওয়া পরিবর্তনে নতুন রেকর্ড হয়। শুধু তাই না, দুটি ঋতুও রূপ বদলায়।

বৈশ্বিক তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, ২০২৩ সালের প্রথম ১১ মাস নতুন তাপমাত্রা অনুধাবন করেছে পৃথিবী। যেখানে আগের তুলনায় ১.৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেশি অনুভব হয়েছে। এর মাধ্যমে পৃথিবী নতুন তাপমাত্রার যুগে প্রবেশ করছে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য দায়ী শক্তিশালী আবহাওয়া চক্র। যা ২০২৩ সালে দেখা গেছে। গত বছরের এপ্রিলের শুরুতে কানাডা দাবানলের মুখোমুখি হয়েছে। এটি দেশটির ইতিহাসে ভয়াবহ দাবানল ছিল। ১৫ অক্টোবরের হিসাবে, এপ্রিলের এই দাবানলে মোট ১৮৫ লাখ হেক্টর এলাকা পুড়ে ছাই হয়ে যায়। যা গত ১০ বছরে ছয়টি দাবানলের তুলনায় বেশি। 
কানাডায় এর আগে ১৯৯৫ সালের দাবানলে ৭১ লাখ হেক্টর এলাকা পুড়েছিল। এ বছর জুন, জুলাই ও আগস্ট মাস অর্থাৎ গ্রীষ্মকালে উত্তর গোলার্ধ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা দেখেছে। এ সময় গড় তাপমাত্রা ছিল ১৬.৭৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা আগের তুলনায় ০.৬৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। ২০২৩ সালের জুলাই মাসে উত্তর গোলার্ধে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পরিলক্ষিত হয়। ২০১৯ সালের থেকে ০.৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেড়ে ১৬.৯৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়েছে। তাছাড়া ফ্রান্স, আলজিরিয়া, মরক্কো, তিউনিশিয়া ও আলবেনিয়ায় তাপমাত্রা নতুন রেকর্ড করেছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে চরম তাপমাত্রা বিরাজ করেছে। অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের ফনিক্সে ৩১ দিনব্যাপী ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা পরিলক্ষিত হয়েছে। যা ২০২০ সালের জুন-জুলাই মাসের তুলনায় অনেক বেশি। ২০২৩ সালের জুলাইয়ের শেষ ও আগস্টের শুরুতে চীনে ঘূর্ণিঝড় দুকসুরি আঘাত হেনেছিল। সেই ঘূর্ণিঝড়ে চীনে সর্বোচ্চ ৭৪৪.৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। যা ১৮৯১ সালে বেজিংয়ে হওয়া বৃষ্টিপাতের রেকর্ড ভেঙেছে। অন্যদিকে ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে সমুদ্রপৃষ্ঠের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পরিলক্ষিত হয়েছে। 
উচ্চ তাপমাত্রার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ১০০ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানল হয়েছে। এই দাবানলে প্রায় সাত হাজার ৫০০ মানুষ বসতভিটা হারিয়েছেন। দুই হাজার ২০০ অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে। আগস্টের দাবানলে অন্তত ৯৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আবার সেপ্টেম্বরের শুরুতে গ্রীসের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানল সংঘটিত হয়েছিল। ২০২৩ সালের আবহাওয়ার এমন বৈরী আচরণ পর্যবেক্ষণ করে বিজ্ঞানীরা বলেছেন- মানুষ যদি কয়লা, তেল, গ্যাস বা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করতে না পারে তাহলে ভয়াবহ বিপদে পড়বে।

×