ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধে এবার সিনেটে বিল অনুমোদন

প্রকাশিত: ১৩:০৫, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধে এবার সিনেটে বিল অনুমোদন

কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ বিলটি পাস করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটেও গতকাল মঙ্গলবার  টিকটক অ্যাপ নিষিদ্ধে একটি বিলে অনুমোদন দিয়েছে। এর ফলে দেশটিতে নিষিদ্ধ হতে পারে জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যম অ্যাপ টিকটক। এর আগে গত মাসে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ বিলটি পাস করেছে।

কংগ্রেস সামাজিক মাধ্যমটির মূল মালিকানা প্রতিষ্ঠান চীনের বাইটড্যান্সকে এ অ্যাপের মালিকানা বিক্রি করে দিতে ৯ মাস সময় বেঁধে দিয়েছে। অন্যথায় অ্যাপটি যুক্তরাষ্ট্রে বন্ধ হয়ে যাবে।

আরও পড়ুন : সুখবর, শৌচাগারে মূত্রত্যাগের পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্বাস্থ্য পরীক্ষা 

বিলটি এখন সইয়ের জন্য প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে পাঠানো হবে। ইতিমধ্যে বাইডেন বলেছেন, বিলটি তাঁর টেবিলে পৌঁছানোর পর দ্রুত এতে সই করবেন তিনি।

প্রেসিডেন্টের সইয়ের পর বিলটি আইন হিসেবে কার্যকর হলে বাইটড্যান্সকে তার মালিকানা জোরপূর্বক বিক্রি করার জন্য চীনা কর্মকর্তাদের অনুমোদন নিতে হবে। তবে বেইজিং এতে অস্বীকৃতি জানানোর অঙ্গীকার করেছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে।

সিনেট গতকাল ইউক্রেন, ইসরায়েল, তাইওয়ান ও ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন অংশীদারদের ৯৫ বিলিয়ন (৯ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের প্রধানত সামরিক সহায়তা দেওয়া নিয়ে চারটি বিলে অনুমোদন দেয়। বিলগুলো অনেক ভোটে অনুমোদিত হয়েছে। এর পক্ষে পড়েছে ৭৯টি ভোট ও বিপক্ষে ১৮টি।

সিনেটে বিল চারটি একটি প্যাকেজে অন্তর্ভুক্ত করে উপস্থাপন করা হয়। চতুর্থ বিলটি গত সপ্তাহে এ প্যাকেজে যুক্ত করে প্রতিনিধি পরিষদ। এ বিলে চীনা নিয়ন্ত্রিত সামাজিক মাধ্যম অ্যাপ টিকটক নিষিদ্ধ করা, ইউক্রেনে জব্দ করা রাশিয়ার সম্পদ স্থানান্তরে পদক্ষেপ নেওয়া ও ইরানে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

গত শনিবার প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকান নেতারা এসব বিল নিয়ে নিজেদের অবস্থান আকস্মিক বদলে ফেলেন ও ভোটাভুটিতে সেগুলো পাস করেন। বিলগুলোর মধ্যে ইউক্রেন ও ইসরায়েলকে সামরিক এবং মানবিক সহায়তা দেওয়ার বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

 কংগ্রেসের ইন্টেলিজেন্স কমিটির শীর্ষ রিপাবলিকান সদস্য সিনেটর মার্কো রুবিও বলেছেন, ‘অনেক বছর ধরে আমরা চীনা কমিউনিস্ট পার্টিকে আমেরিকায় সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যাপসগুলোর একটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে দিয়েছি; যা ছিল বিপজ্জনকভাবে অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত।’

মার্কো রুবিও বলেন, ‘টিকটকের চীনা মালিকানা প্রতিষ্ঠানকে এ অ্যাপ বিক্রি করার জন্য একটি নতুন আইনের প্রয়োজন। আইনটি হতে চলেছে। আমেরিকার জন্য এটি ভালো পদক্ষেপ।’

অনেক বছর ধরে আমরা চীনা কমিউনিস্ট পার্টিকে আমেরিকায় সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যাপসগুলোর একটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে দিয়েছি; যা ছিল বিপজ্জনকভাবে অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত।


গত সপ্তাহে সামাজিক মাধ্যম প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ বলেছে, ‘এ বিল ১৭ কোটি মার্কিন নাগরিকের বাক্‌স্বাধীনতা পদদলিত করবে, ৭০ লাখ ব্যবসা ধ্বংস করবে ও এমন এক প্ল্যাটফর্মের ঝাঁপ ফেলবে; যা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে বছরে ২৪ বিলিয়ন ডলারের (২ হাজার ৪০০ কোটি) অবদান রাখে।’

টিকটকের প্রধান নির্বাহী শোউ জি চিউ গত মাসে বলেছেন, প্ল্যাটফর্মটিকে রক্ষায় তাঁর প্রতিষ্ঠান নিজ ‘আইনি অধিকারসহ’ সম্ভব যা কিছু করার, করে যাবে।

দুই পক্ষের এমন অবস্থানের ফলাফল সম্পর্কে ইউনিভার্সিটি অব রিচমন্ডের আইনের অধ্যাপক কার্ল টোবিয়াস বিবিসিকে বলেন, ‘সম্ভবত এক দীর্ঘ আইনি লড়াই শুরু হতে যাচ্ছে। এতে দুই বছর লেগে যেতে পারে।’ তিনি  বলেন, টিকটকে বাইটড্যান্সের মালিকানা কেনার মতো কাউকে ৯ মাসের মধ্যে পাওয়া না গেলে অ্যাপটির বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টি বিলম্বিত হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রে।

যুক্তরাষ্ট্রের অনেক রাজনীতিকের আশঙ্কা, টিকটকের মাধ্যমে কোটি কোটি মার্কিন নাগরিকের তথ্য চীনের হস্তগত হতে পারে। আর এ আশঙ্কা থেকেই টিকটককে বেইজিংভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের মালিকানা মুক্ত করতে পদক্ষেপ নিয়েছেন কংগ্রেস সদস্যরা।

প্রতিনিধি পরিষদে বিলটির উত্থাপনকারীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন রিপাবলিকান সদস্য মাইক গল্লাগহার। তিনি বলেছেন, চীনের কমিউনিস্ট পার্টি নিয়ন্ত্রণ করে কিংবা তাদের মালিকানাধীন এমন কোনো প্রভাবশালী সংবাদ প্ল্যাটফর্মের বিষয়ে ঝুঁকি নেবে না যুক্তরাষ্ট্র।

তবে টিকটক বলেছে, বাইটড্যান্স চীন বা অন্য কোনো দেশের এজেন্ট নয়। বাইটড্যান্সও জোর দিয়ে বলেছে, তারা চীনা প্রতিষ্ঠান নয়। আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে ইঙ্গিত করে এটি বলেছে, অ্যাপটির ৬০ শতাংশের মালিকানা তাদের।

গত জানুয়ারি মাসে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের একটি তদন্তে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক ও বেইজিংভিত্তিক বাইটড্যান্সের মধ্যে অনানুষ্ঠানিকভাবে ডেটা শেয়ার করার ব্যবস্থাটি ‘ত্রুটিপূর্ণ’ ছিল। ফলে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের তথ্য অরক্ষিত হয় পড়েছিল।

বিবিসি

তাসমিম

সম্পর্কিত বিষয়:

×